রক্তমৃত্তিকা মহাবিহার

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:৫০, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

রক্তমৃত্তিকা মহাবিহার  লো-তো-উই (মো)-চি-সং-কিয়া-লম (Lo-to-wei (mo)-chi-sang-kia-lam) নামে পরিচিত একটি সংঘরাম। এটি কিয়ে-লো-ন-সু-ফ-ল-ন (Kie-lo-na-su-fa-la-na) অর্থাৎ কর্ণসুবর্ণ এর উপকণ্ঠে অবস্থিত। চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন-সাং এর উল্লেখ করেন এবং এটিকে রক্তমৃত্তিকা সংঘরামরূপে বর্ণনা করেন। তাঁর বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, রাজ্যের সবচেয়ে সম্মানিত, শিক্ষিত এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এখানে সমবেত হতেন।

বিশ শতকের ষাটের দশকের প্রথম দিকে ভাগীরথী নদীর পশ্চিম পার্শ্বস্থ যদুপুর (মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম বাংলা) গ্রামের অন্তর্গত রাজবাড়িডাঙ্গায় উৎখননের পূর্বে লো-তো-মি-ছি মঠের অবস্থান নিরূপণ করা বেশ সমস্যা সংকুল ছিল।

রাজবাড়িডাঙ্গায় উৎখনের ফলে বিখ্যাত রক্তমৃত্তিকা মহাবিহারের শনাক্তীকরণের বিষয়ে সন্দেহাতীত তথ্যাদি উন্মোচিত হয়। ভবনাদি নির্মাণের প্রচুর নিদর্শন পরিলক্ষিত হয়। সকল ট্রেঞ্চে একই ধরন ও বৈশিষ্ট্যাবলির কাঠামোগত পুরানিদর্শন পাওয়া যায়। এখানে ভবন কমপ্লেক্সের কোন পূর্ণাঙ্গ নকশা পাওয়া না গেলেও প্রাপ্ত কাঠামোগত নিদর্শনাদির প্রকৃতি ও গঠন দেখে বোঝা যায় যে, এটি ছিল বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের একটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছিল একটি প্লাটফর্ম, স্তূপের ভিত, সিঁড়ি, ফুটপাথ ইত্যাদি।

পাঁচ থেকে সাত/আট শতকের মধ্যবর্তী অর্থাৎ দ্বিতীয় সাংস্কৃতিক পর্বের প্রাপ্ত একটি সিল থেকে বিহারের শনাক্তীকরণ সংক্রান্ত বিষয়ে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ধারণা লাভ করা যায়। এই সিলের উপরের অংশে ধর্মচক্র-হরিণের প্রতীক দেখা যায় এবং নিম্নাংশে রয়েছে খোদাইকৃত দুটি লিপি লাইন।

দীনেশ চন্দ্র সরকার সিলে উৎকীর্ণ লিপি পড়েন নিম্নরূপে:

১ম লাইন- শ্রীরক্ত (ম) ঋত্তিকা-(ম) হাবৈহা

২য় লাইন- রিক-আর্য-ভিক্ষু-(সংগ) স (য) অ

(এই সিল বিখ্যাত রক্তমৃত্তিকা মহাবিহারের বিশিষ্ট ভিক্ষু সম্প্রদায়ের)।

অপর একটি ভগ্ন সিলের নিচের অংশে তিন লাইন খোদিত লিপি আছে। বি.এন মুখার্জী এর পাঠ নিম্নরূপভাবে করেছেন:

{লাইন ১} রক্তমৃত্তি (কায়াম) {লাইন ২} (বি) হার (ই) (আর্য) {লাইন ৩} ভিক্ষু (সংঘস্য)

সিলের লিপির ভিত্তিতে সাত শতকের হিউয়েন সাং কর্তৃক বর্ণিত বিখ্যাত রক্তমৃত্তিকা মহাবিহারের এ পর্যন্ত অজ্ঞাত ভৌগোলিক অবস্থান সঠিকভাবে নির্ণয় করা যেতে পারে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায় যে, বিখ্যাত চৈনিক পর্যটকের ভ্রমণকালের সময়ের সঙ্গে সিলের সময়ের মিল রয়েছে।

বৌদ্ধ প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব সম্পর্কে আরও প্রমাণ পাওয়া যায় প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননের ফলে প্রাপ্ত উপকরণাদির মাধ্যমে। এ উপকরণাদির মধ্যে রয়েছে স্টাকো মস্তক, তাম্রচক্র, বৌদ্ধধর্মের প্রতি উৎসর্গীকৃত সিল ইত্যাদি। সিলগুলির একটিতে (নম্বর-১৯) ‘গুহ্যচক্র’ উপাখ্যান লিপিবদ্ধ আছে। ‘গুহ্যচক্র’ শব্দটি কিছু গূঢ় ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ইঙ্গিত দেয় এবং এগুলি ছিল সম্ভবত পরবর্তীকালের তান্ত্রিক মতবাদের পূর্বসূরি। এ সিলই সম্ভবত বাংলায় প্রাপ্ত আদিতম লিপিতাত্ত্বিক উপাদান, যেখানে ধর্মীয় রীতিনীতির উল্লেখ আছে।

পাঁচ শতকে মালয় উপদ্বীপের ওয়েলেসলী প্রদেশ হতে প্রাপ্ত একটি ভগ্ন শিলালিপি থেকেও রক্তমৃত্তিকা নামের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এ লিপিতে রক্তমৃত্তিকা হতে আগত ‘মহানাবিক বুধগুপ্ত’-এর উল্লেখ করা হয়েছে। আলোচ্য রক্তমৃত্তিকা এবং রক্তমৃত্তিকা মহাবিহার সম্ভবত অভিন্ন।

রাজবাড়িডাঙ্গার সাথে রক্তমৃত্তিকা বিহারের শনাক্তীকরণের ওপর ভিত্তি করে সাত শতকের শশাঙ্কের গৌড় রাজ্যের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ এর ভৌগোলিক অবস্থান যে রাজবাড়িডাঙ্গার খননকৃত স্থলের নিকটবর্তী এলাকায় অবস্থিত তা যথার্থভাবেই নিরূপণ করা যায়।  সুচন্দ্রা ঘোষ]