মেলান্দহ উপজেলা

মেলান্দহ উপজেলা (জামালপুর জেলা)  আয়তন: ২৩৯.৬৫ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৫১´ থেকে ২৫°৫০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৪২´ থেকে ৮৯°৫৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ইসলামপুর উপজেলা, দক্ষিণে জামালপুর সদর ও মাদারগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে জামালপুর সদর, শেরপুর সদর ও ইসলামপুর উপজেলা এবং পশ্চিমে মাদারগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৯২৩৪৭; পুরুষ ১৪৯৭০৮, মহিলা ১৪২৬৩৯। মুসলিম ২৮৮৫২১, হিন্দু ৩৭৯৮ এবং অন্যান্য ২৮।

জলাশয় ঝিনাই, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও মাদারদহ নদী এবং বুরুঙ্গি, সিলান, পীরগাছা, হারকার, কিলাকিলি, বাগবার ও বাগদেও বিল এবং চাতাল খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন মেলান্দহ থানা গঠিত হয় ২১ মে ১৯২৫ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৫ এপ্রিল ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১১ ১৪০ ১৯২ ৩৪১৩৯ ২৫৮২০৮ ১২২০ ৩৩.৭ ২৫.৭
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১২.৯৬ ২৭ ২৮৭১৪ ২২১৫ ৩৫.২
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৫.৪১ ৫৪২৫ ১০০৩ ২৫.৭৬
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আদ্রা ১৭ ৫০৬৩ ১০৩৩১ ৯৯৭৬ ২৯.৭৩
কুলিয়া ৬৬ ৫৪৬৭ ১৩০০৪ ১২০১০ ২৫.১৯
ঘোষের পাড়া  ৪৭ ৭৫৭০ ১৬২৬৫ ১৫৫৪০ ২৮.১১
চর বনিপাকুরী ১৯ ৫৮৩৮ ১৫০৭২ ১৪৬৪৫ ২৭.৯৫
ঝাউগড়া ৫৭ ৫২৭৭ ১২৯৬৮ ১২৩৪৪ ২২.২৭
দুরমুঠ ২৮ ৪১১২ ১০৩৯৩ ৯৮৬৭ ২৬.১৯
নয়ানগর ৯৫ ৬৪৫১ ৯৮৮৮ ৯৩৬৫ ২৩.৫৩
নাংলা ৮৫ ৬০৮২ ১১০৯৫ ১০৭৩২ ২২.৬৭
ফুলকোচা ৩৮ ৫০৮৫ ১১৮৬৭ ১১৪৯৯ ৩৫.৪৬
মাহমুদপুর ৭৬ ৮২৭১ ১৭৩৯১ ১৬৩৭৬ ২০.৮৩
শ্যামপুর ৯৭ - ৬৬৯০ ৬৩১৫ ১৬.৮৮

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ বাশুরিয়া এলাকায় নীলকুঠি (বিলুপ্ত), ফুলকোচা ও মহিরামকুলে জমিদারদের কাচারি (বিলুপ্ত প্রায়) ও দিঘি।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা এ উপজেলার দেওয়ানগঞ্জে অপারেশন চালায়। এ সময় উপজেলার পয়লা ব্রিজের কাছে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘর্ষ হয়।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ৪ (আদিপৈত, কায়েতপাড়া, কোনামালঞ্চ, চরগোবিন্দপুর); শহীদ মিনার ২।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৫১৯, মন্দির ৭।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ২৬.৬%; পুরুষ ৩০.৫%, মহিলা ২২.৫%। কলেজ ৭, কারিগরি কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪২, কারিগরি বিদ্যালয় ৩, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৩৫, কমিউনিটি বিদ্যালয় ৮, কিন্ডার গার্টেন ১২, এনজিও স্কুল ৫০, মাদ্রাসা ৫৩। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মেলান্দহ সরকারি ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২), হাজরাবাড়ী সিরাজুল হক ডিগ্রি কলেজ (১৯৭৬), হাজরাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৬), মেলান্দহ উমির উদ্দিন পাইলট উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৩৭), ফুলকোচা বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫১), মেলান্দহ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৩)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: ঝিনাই, উৎসমুখ, শিল্প-সাহিত্যপত্র (অবলুপ্ত); মাসিক: ছন্দের ঝিনাই।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৫, ক্লাব ৪১, নাট্যদল ২, সিনেমা হল ৫, মহিলা সংগঠন ২, খেলার মাঠ ১১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭০.৫০%, অকৃষি শ্রমিক ৩.০২%, শিল্প ০.৪৪%, ব্যবসা ১০.৩৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৫৮%, চাকরি ৪%, নির্মাণ ১.০০%, ধর্মীয় সেবা ০.১৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২৩% এবং অন্যান্য ৭.৭৩%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৬.০৮%, ভূমিহীন ৪৩.৯২%। শহরে ৩৭.১২% এবং গ্রামে ৫৮.৫% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, সরিষা, আখ, আলু, চীনাবাদাম, ছোলা, মাষকলাই, তামাক, মরিচ, পান, সুপারি, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি ভূট্টা, তিল, কাউন, তিসি।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, নারিকেল, কলা, পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার গবাদিপশু ৩, হাঁস-মুরগি ১১, হ্যাচারি ৬।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১১৩ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২৬ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪২৮ কিমি; রেলপথ ১২ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, সোয়ারি।

কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, নকশি কাঁথা, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৬। মেলান্দহ বাজার, হাজরাবাড়ী বাজার ও ঝাউগড়া বাজার উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, পাট, আলু, গুড়, চীনাবাদাম, মরিচ, ছোলা।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৭.২২% (শহরে ১৮.২০% এবং গ্রামে ৫.৮২%) পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.০১%, ট্যাপ ০.১৯%, পুকুর ০.১৪% এবং অন্যান্য ৪.৫৭%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ১৩.৮৭% (শহরে ১১.২৭% এবং গ্রামে ১৩.৯৮%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫৯.১০% (শহরে ৫৮.২৭% এবং গ্রামে ৫৯.২%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ২৭.২৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৯,& ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ৮, কমিউনিটি ক্লিনিক ১৯, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৫।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৯১ সালে টর্নেডোর কারণে এ উপজেলার ঝাউগড়া ইউনিয়নের ফসল ও ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, কেয়ার। [সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মেলান্দহ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।