মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট

মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (Soil Resources Development Institute/SRDI)  পূর্বতন মৃত্তিকা জরিপ বিভাগের পুনঃনামকরণ, পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের পর ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। দেশে মৃত্তিকা জরিপ পর্যবেক্ষণ কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে খাদ্য ও কৃষি সংস্থা/ইউএনডিপি ও পাকিস্তান সরকারের পরিকল্পনাধীনে ১৯৬১ সালে মৃত্তিকা জরিপ বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৯ সাল থেকে কেন্দ্রীয় মৃত্তিকা গবেষণা ইনস্টিটিউট এই প্রকল্পের নির্ধারিত কাজ সম্পাদন করছিল। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর পরিকল্পনাটি ১৯৭২ সালে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে মৃত্তিকা জরিপ বিভাগ হিসেবে পরিচিত হয়। ১৯৭০ সাল থেকে দেশের চাহিদার নিরিখে মৃত্তিকা জরিপের তথ্যাদি ব্যাখ্যা এবং আরও নিখুঁতভাবে মৃত্তিকার প্রকৃতি বর্ণনার লক্ষ্যে মৃত্তিকার কিছু কিছু মাঠপর্যায় বৈশিষ্ট্যের সমীক্ষা অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রকল্পের কর্মকান্ড সম্প্রসারিত হয়েছিল। ১৯৭৫ সালে দেশের মৃত্তিকার প্রাক্পর্যবেক্ষণ জরিপ সম্পূর্ণ হয়।

মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট প্রকৃতপক্ষে নিম্নলিখিত প্রধান উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান: দেশের মৃত্তিকা ও ভূমি সম্পদ সম্পর্কে অবিরাম তথ্যসরবরাহ এবং এই জাতীয় জরিপের মানচিত্র ও ফলাফল প্রস্ত্ততকরণ; স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি কৃষি উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রস্ত্ততের জন্য মৃত্তিকা, জমির সামর্থ্য ও শস্যের উপযুক্ততা সম্পর্কে মৌলিক তথ্যাদি যুগিয়ে উন্নয়ন সংস্থাগুলিকে যথাযথ সহায়তা; স্থানীয়, আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা ও ভূমি ব্যবহার বাস্তবায়ন উন্নয়নের ক্ষেত্রে দাতাসংস্থাগুলির কর্মকান্ড সমন্বয়; কৃষি সম্প্রসারণ ও গবেষণা কর্মীদের মৃত্তিকা ও কৃষি উন্নয়ন সম্ভাব্যতা সম্পর্কে সহজ নির্দেশনা প্রদান; কৃষক ও সার ব্যবসায়ীদের মৃত্তিকা ও সার পরীক্ষণের কাজে সহায়তা; এবং মৃত্তিকা জরিপের তথ্যাদি, ভূমিব্যবহার পরিকল্পনা, শস্যচাষ সম্ভাবনা ইত্যাদি সম্পর্কে বিভিন্ন পর্যায়ের কৃষি সম্প্রসারণ ও গবেষণা কর্মীদের প্রশিক্ষণ।

ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হলেন পরিচালক। বর্তমান কর্মচারী সংখ্যা ৪৬৭, (১৯০ টেকনিকাল কর্মী, ১০ সাধারণ কর্মী এবং ২৬৬ সহযোগী কর্মচারী)। ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম পাঁচটি টেকনিক্যাল বিভাগ এবং একটি প্রশাসনিক বিভাগের মাধ্যমে পরিচালিত। বিভাগগুলি হলো:

খামার বিভাগ  মৃত্তিকা পরীক্ষা ও জরিপ এই বিভাগের প্রধান কাজগুলির অন্তর্ভুক্ত। কৃষি গবেষণা, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কার্যক্রমে নিয়োজিতদের মৃত্তিকা মানচিত্র, প্রতিবেদন ও উন্নয়ন কর্মকান্ড সম্পর্কে উপদেশমূলক সেবা প্রদানও এই বিভাগের দায়িত্ব। বৃহত্তর জেলাগুলিতে এই বিভাগের চারটি আঞ্চলিক ও ২০টি বৃহত্তর জেলা কার্যালয় রয়েছে।

মৃত্তিকা বিশ্লেষণ বিভাগ  জয়দেবপুর, কুমিল্লা, রাজশাহী ও খুলনায় এই বিভাগের একটি করে চারটি আঞ্চলিক গবেষণাগার এবং ঢাকায় একটি কেন্দ্রীয় গবেষণাগার রয়েছে। মৃত্তিকার নমুনা বিশ্লেষণের তথ্যাদি প্রেরণই এই বিভাগের প্রধান কাজ।

গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ  এই বিভাগের অধীনে চারটি কেন্দ্র বা শাখা রয়েছে- বান্দরবনে অবস্থিত মৃত্তিকা সংরক্ষণ ও জলবিভাজিকা ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র, খুলনায় বটিয়াঘাটায় অবস্থিত মৃত্তিকা ও পানির লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র; মৃৎপদার্থবিদ্যা, আকরিক শাখা এবং মৃৎ-অণুজীববিদ্যা ও প্রাণরসায়ন শাখা। উপরোক্ত কেন্দ্র বা শাখাগুলিতে গবেষণা কার্যক্রম চলছে। মৃত্তিকা সংরক্ষণ ও জলবিভাজিকা ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে উদ্ভাবিত মৃত্তিকার পানি সংরক্ষণের কিছু প্রযুক্তি পাহাড়ী এলাকার কৃষকদের কাছে হস্তান্তরিত হয়েছে।

মৃত্তিকা জরিপ বিভাগ  এই বিভাগের দুটি শাখা- মৃত্তিকা জরিপ ও শ্রেণীবিভাগ এবং মানচিত্রাঙ্কন ও দূর-অবধারণ (remote sensing) শাখা। এই বিভাগ মৃত্তিকা শ্রেণীবিভাজনের কাজে ব্যবহূত জরিপের তথ্যাদি ব্যাখ্যা করে এবং মানচিত্রাঙ্কন ও দূর-অবধারণ প্রযুক্তির মাধ্যমে মৃত্তিকা ও শস্যের ডাটাবেস প্রস্ত্ততেও সাহায্য যোগায়।

ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা বিভাগ  কৃষি জলবায়ু, মৃত্তিকার ধরন ও মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ভূমি ব্যবহার মানচিত্রাঙ্কনের দায়িত্ব এই বিভাগের উপর ন্যস্ত। ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা (Geographical Information Systems/GIS) প্রবর্তনের মাধ্যমে সাংখ্যিক লেখচিত্র ও মানচিত্র যোগান এই বিভাগের কাজ।

বিভাগীয় ও শাখাভিত্তিক কাজ ছাড়াও মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের কিছু বিশেষ কর্মসূচি রয়েছে, যেগুলি জাতিকে প্রয়োজনীয় সেবা দিচ্ছে। সেগুলির মধ্যে রয়েছে: মৃত্তিকা পরীক্ষা, ব্যাবস্থাপনা ও মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের প্রকল্পগুলি, উপজেলার ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহার নির্দেশনা (উপজেলা নির্দেশিকা); স্থির বা ভ্রাম্যমাণ মৃত্তিকা পরীক্ষা ভ্যানের (MSTV) মাধ্যমে কৃষকদের উপদেশ সেবা প্রদান এবং মৃৎস্বাস্থ্য কার্ড।  [মো. শহীদুল ইসলাম]