মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা (মুন্সিগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ১৬০.৭৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°২৩´ থেকে ২৩°৩৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°২৮´ থেকে ৯০°৩৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে নারায়ণগঞ্জ সদর, বন্দর (নারায়ণগঞ্জ) ও সোনারগাঁও উপজেলা, দক্ষিণে ভেদরগঞ্জ ও নড়িয়া উপজেলা, পূর্বে গজারিয়া ও মতলব উপজেলা, পশ্চিমে টঙ্গিবাড়ী ও নড়িয়া উপজেলা।

জনসংখ্যা ৩২৭০১৫; পুরুষ ১৭০৭৪৭, মহিলা ১৫৬২৬৮। মুসলিম ৩১০০৯২, হিন্দু ১৬৭১৬, বৌদ্ধ ৭৬, খ্রিস্টান ৫৮ এবং অন্যান্য ১০৪।

জলাশয় মেঘনা, পদ্মা, ধলেশ্বরী ও ইছামতী নদী উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন মুন্সিগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৯০১ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
৯৪ ১৮৭ ১০৭৯০৩ ২১৯১১২ ২০৩৪ ৫৯.৭ ৪৬.০
পৌরসভা (মীরকাদিম)
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৪.১৭ ৩১ ৪১৩২০ ২৯১৬ ৬০.৮
পৌরসভা (মুন্সিগঞ্জ)
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৪.২৯ ৪৬ ৫৩২০২ ১২৪০১ ৬০.৮
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২.৮৯ ১৩৩৮১ ৪৬৩০ ৫২.২
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আধারা ২০ ৮১৭৬ ১৫০৫১ ১৪২২৪ ২৭.০৯
চর কেওয়ার ২৮ ৫৩৭৩ ১৫৮৭৭ ১৪৩৩৯ ৪৮.৩৮
পঞ্চসার ৭৬ ৩০৩২ ২৯৮৭২ ২৬৫৫১ ৪৮.৮৪
বজ্রযোগিনী ২২ ২৪৬১ ৮৮০৭ ৮২৭২ ৫১.৬৮
বাংলা বাজার ২৩ ৪৮৮৯ ৭৭৩৩ ৬৮৯৬ ৩৭.৮০
মহাখালী ৪৭ ২৩৮৪ ৯৪৯৫ ৯৪১৪ ৫৬.৮১
মোল্লাকান্দি ৫৭ ৩৮৪৯ ১৩২৮০ ১২৫০৩ ৪০.০১
রামপাল ৮৫ ১৮৩১ ১৬৪২৮ ১৫১১৯ ৫৯.৮৩
শিলই ৩৮ ৭৪২০ ৪০৪৯ ৪১৪৯ ৩২.০৭

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ ইদ্রাকপুর দুর্গ (১৬৬০), বজ্রযোগিনীতে পন্ডিতের ভিটা (অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের জন্মস্থান), রামপালে বাবা আদম শহীদের মসজিদ (১৪৮৩ খ্রি), রাজা বল্লালসেনের বাড়ি, রামপাল দীঘি, রাজা হরিশচন্দ্রের দীঘি, কোদাল ধোয়ার দীঘি, রাজা শ্রীনাথের বাড়ি, শ্রী শ্রী লক্ষ্মীনারায়ণ জিউর মন্দির, বার আউলিয়ার মাযার, হরগঙ্গা কলেজের গ্রন্থাগার কক্ষে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আশুতোষ গাঙ্গুলীর মার্বেল মূর্তি।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকবাহিনী ঢাকায় গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করলে ছাত্র-যুবকরা ট্রেজারি থেকে অস্ত্র লুট করে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পাকবাহিনী যাতে জলপথে মুন্সিগঞ্জে পৌঁছতে না পারে সেজন্য নদীতীরে স্থায়ী পাহারার ব্যবস্থা করা হয়। ৩১ মার্চ পাকবাহিনী নারায়ণগঞ্জ আক্রমণ করলে মুন্সিগঞ্জের তরুণরা নারায়ণগঞ্জবাসীদের সঙ্গে মিলিত হয়ে আক্রমণ প্রতিহত করে। ৯ মে পাকবাহিনী হরগঙ্গা কলেজে ক্যাম্প স্থাপন করে এবং এর দুদিন পর এলাকার প্রায় ১৪ জন নিরপরাধ লোককে হত্যা করে। ১৪ মে কেওয়ারে অভিযান চালিয়ে কিছুসংখ্যক যুবককে নির্মমভাবে হত্যা করে। ধলেশ্বরী নদীর সন্নিকটস্থ নয়াগাঁও গ্রামের রাধিকামোহন ঘোষের বাড়ি তখন মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন আশ্রয়স্থল ও ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহূত হয়। নদীতীরস্থ এই বাড়ির পাকা দালানের ছাদ থেকে নৌপথে পাকসেনাদের জাহাজের উপর আক্রমণ চালানো হতো।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন বধ্যভূমি ও স্মৃতিস্তম্ভ ১ (মুন্সিগঞ্জ হাইস্কুলের পুরাতন ছাত্রাবাস)।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ১৭০, মন্দির ২২, মাযার ২, দরগাহ ১, আখড়া ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: কাচারিঘাট জামে মসজিদ, থানা জামে মসজিদ, লঞ্চঘাট মসজিদ, জয়কালীমাতা মন্দির, জগদ্ধাত্রী মন্দির, কাদিরা পাগলার মাযার, ছালা-পাগলীর মাযার, এলাহী মস্তানের দরগাহ, লক্ষ্মীনারায়ণ জিউর আখড়া।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫০.৬%; পুরুষ ৫৩.৫%, মহিলা ৪৭.৪%। কলেজ ৪, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ১, প্রাইমারি শিক্ষক ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৬, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০৯, মাদ্রাসা ৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সরকারি হরগঙ্গা কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, মুন্সিগঞ্জ কলেজ, বজ্রযোগিনী জে.কে উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৩), মুন্সিগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৫), এ.ভি.জে.এম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯২), বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), রামপাল এন.বি.এম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৩), ইদ্রাকপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭০), কে.কে গভ. ইনস্টিটিউশন (১৯৪২)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: মুন্সিগঞ্জের কাগজ; সাপ্তাহিক: মুন্সিগঞ্জ সংবাদ, খোলা কাগজ, কাগজের খবর, সত্য প্রকাশ; মাসিক: বিক্রমপুর বার্তা, বিক্রমপুর, ছোট কাগজ ‘অ’, বিবক্ষা; অবলুপ্ত সাময়িকী: কালের ভেলা, সংশপ্তক, সরব।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২, সঙ্গীত একাডেমি ২, নাট্যদল ৩, নাট্যমঞ্চ ১, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ৪, আর্টস্কুল ১, সিনেমা হল ৬, অডিটোরিয়াম ১, ক্লাব ৬, মহিলা সমিতি ১৭, স্টেডিয়াম ১।

দর্শনীয় স্থান ইদ্রাকপুর দূর্গ, রামপালের দিঘি, হরিশচন্দ্রের দিঘি, পন্ডিত অতীশ দীপঙ্করের ভিটা।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৭.৬৯%, অকৃষি শ্রমিক ৫.৫৭%, শিল্প ১.২৫%, ব্যবসা ২২.৫৯%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৩৬%, চাকরি ১১.০৬%, নির্মাণ ১.৬৮%, ধর্মীয় সেবা ০.১৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৩.৮১% এবং অন্যান্য ১১.৮৪%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪২.২৭%, ভূমিহীন ৫৭.৭৩%। শহরে ২৪.৮৬% এবং গ্রামে ৫০.৮৫% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, গম, পাট, সরিষা, মরিচ, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি কাউন, তিসি, অড়হর।

প্রধান ফল-ফলাদি কলা, আম, পেঁপে, কাঁঠাল, লিচু।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১, দুগ্ধ খামার ১৫, হাঁস-মুরগি ১।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৭.২৭ কিমি, কাঁচারাস্তা ১০০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা সিমেন্ট কারখানা, কাগজ কল, বস্ত্রকল, চালকল, বিস্কুট ফ্যাক্টরি, করাত কল, ইটের ভাটা।

কুটিরশিল্প মৃৎশিল্প, পাটিশিল্প, বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৭, মেলা ৮। মুন্সির হাট, চিতলিয়া হাট, মীরকাদিম হাট, মাকহাটি হাট, মুন্সিগঞ্জ বাজার, কাটাখালি বাজার, কমলাঘাট বাজার ও রিকাবী বাজার এবং বারুণী মেলা (কমলাঘাট), রামপাল মাঘী পূর্ণিমা মেলা, দশমী মেলা (কমলাঘাট), মুন্সিগঞ্জ রথযাত্রা মেলা, রামপাল রথযাত্রা মেলা ও মনসার মেলা (মুন্সিগঞ্জ) উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য আলু, শাকসবজি, পাট।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৭৫.৮৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯১.৭৫%, ট্যাপ ৩.৯৮%, পুকুর ১.৩০% এবং অন্যান্য ২.৯৭%। এ উপজেলার ২০.২২% অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬০.৫০% (শহরে ২৫.২৪% এবং গ্রামে ৫৪.৭০%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৫.৯০% (শহরে ২৫.২৪% এবং গ্রামে ৪১.১৫%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ৩.৬০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ১, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ১, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৯, ক্লিনিক ৯।

এনজিও আশা, ব্র্যাক, প্রশিকা।  [রতন তনু ঘোষ]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।