মুদ্রানীতি

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:৪৬, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

মুদ্রানীতি  বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রণয়ন করে। এক্ষেত্রে দারিদ্র বিমোচন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর মত সামষ্টিক লক্ষ্যমাত্রাসমূহ বিবেচনায় রাখা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক বৈশ্বিক, অভ্যন্তরীণ এবং সামষ্টিক অর্থনীতিকে বিবেচনায় রেখেই মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে, যা মূলত পরবর্তী কয়েকটি মাসের জন্য কার্যকর থাকে। পরবর্তী মাসগুলিতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে ব্যাপক কোন পরিবর্তন ঘটলে বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি সে অনুযায়ী সমন্বয় করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা অনিশ্চিত হলেও বাংলাদেশের বাণিজ্যের প্রধান অংশীদার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ঘুরে দাড়াবার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। এই পরিবর্তন বাংলাদেশের মুদ্রানীতির রূপরেখা তৈরিতে প্রভাব ফেলেছে প্রধানত মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণ, সাধারণ ভোগ্যপণ্যের দামস্তর বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যের উর্দ্ধগতিকে গুরুত্ব দিয়ে মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হয়। মুদ্রানীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে অর্থনীতির অস্থিতিশীলতা মোকাবেলা করা হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের মত দেশে যেখানে বিপুল সংখ্যক দরিদ্র মানুষের বাস সেখানে খাদ্যদ্রব্য ও নিজ প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

দ্রব্যমূল্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে বিবেচনায় নিয়ে এবং সেই সাথে ঋণদান ও মুদ্রা সরবরাহের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রেখে আগামী ছয় মাসের জন্য মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হয়। মুদ্রানীতির মূল লক্ষই হলো ব্যাপক মুদ্রা (এম. ২) অর্থাৎ ব্যাংকের সকল চলতি এবং সঞ্চয়ী আমানতের সমষ্টির নিয়ন্ত্রণ। এম ২ প্রবৃদ্ধি নির্ভর করে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, সহনীয় মাত্রায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং একটি গ্রহণযোগ্য মাত্রায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের বাস্তবমুখী প্রাক্কলনের ওপর।

অভ্যন্তরীণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৭ শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রবৃদ্ধি ৬.৫ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশে নির্ধারণ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে বৈশ্বিক আর্থিক অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে কৃষি ও শিল্প আয়ের সম্মিলিত উৎপাদন মিলে উল্লেখিত প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে উন্নত বিশ্বে স্বল্পকালীন মেয়াদে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। খাদ্য ও জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির কারণে এশিয়ার অধিকাংশ অঞ্চলে মূল্যস্ফীতির মাত্রা বেশি। পরবর্তী ছয় মাসের মুদ্রানীতি প্রণয়নে এই সমস্ত বিষয় বিবেচনায় রাখা হয়।

২০১১-১২ অর্থ বছরে মূল্যস্ফীতি প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৭.৫ শতাংশ, কিন্তু ২০১১ সালের ডিসেম্বরে তা বৃদ্ধি পেয়ে গড়ে ১০.৭ শতাংশে দাঁড়ায়। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণগুলি যা বাংলাদেশ ব্যাংক চিহ্নিত করে সেগুলি হলো, আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ ঋণ বৃদ্ধি এবং অতি সম্প্রতি জ্বালানি ও পেট্রোরিয়ামের মূল্যের সমন্বয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে খোলাবাজার কার্যক্রম, সংবিধিবদ্ধ জমার অনুপাত পরিবর্তন এবং ব্যাংক হার পরিবর্তনের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০১২ সালের মুদ্রার সরবরাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা পূর্ববর্তী সময়ের মুদ্রানীতি বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতার আলোকে গ্রহণ করা হয়েছে বলে অনেকটা বাস্তবানুগ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ মতে, নভেম্বর ২০১১ এ রিজার্ভ মুদ্রা এবং ব্যাপক মুদ্রার (এম. ২) প্রবৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ১৫.৪ এবং ১৭ শতাংশ যা ১৬ শতাংশের কম। রাষ্ট্রীয় খাতের ঋণের পরিমাণ পূর্ববর্তী মুদ্রানীতিতে প্রদত্ত পূর্বাভাষের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক আরও মনে করে যে বহিষ্করণ বা বিনিয়োগ প্রভাব (Crowding out effect) ছিল সীমিত। কিন্তু (জানুয়ারি-জুন ২০১২) মুদ্রানীতির বিবরণে দেখা যায় ব্যক্তি খাতের ঋণ সুবিধার্থে ব্যাংক থেকে রাষ্ট্রীয় খাতের ঋণ কমানো হয়েছিল যাতে ব্যক্তিখাতে ঋণ প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত না হয়।

সাম্প্রতিক বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ঐ২ ২০১২ বছরে মুদ্রানীতিতে যে বিষয়গুলো বিবেচনায় এনেছে তা হলো: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বাহিরের চাপের মোকাবিলা করে প্রবৃদ্ধির পথ অনুসরণ করা; প্রবৃদ্ধির হার ত্বরান্বিত করার পক্ষে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা; এ ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্য মজুদ মুদ্রা ও ব্যাপক মুদ্রার বৃদ্ধির হার যথাক্রমে ১২.২ শতাংশ ও ১৭ শতাংশ সীমিত করা (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন জানু-জুন ২০১২ মুদ্রানীতির বিবরণী)

বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতির আলোকে কর্মসূচি বাস্তবায়নে যে সকল নীতিগত পদক্ষেপ নিয়েছে তা হলো, উৎপাদনশীল বিনিয়োগে ব্যক্তিগত ঋণ বৃদ্ধির সুযোগ সুবিধা বাড়ানো; বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকের জন্য তারল্য বৃদ্ধি নিশ্চিত করবে যাতে উৎপাদনশীল খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত না হয়; বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হার মনিটর করবে যাতে এই হারের বৃদ্ধি একমাত্র এসএমই ছাড়া অন্য খাতে ৫ শতাংশের নিচে থাকে; ভবিষ্যৎ নতুন বহিঃখাতের সাথে লেনদেনে ভারসাম্য রক্ষার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি চাহিদা যৌক্তিকরণ করবে; এবং দেশের সঞ্চয় যাতে দরিদ্র বান্ধব হয়। সেই অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি কৌশল বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যংক কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে এবং এর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির চেষ্টা করতে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

বর্তমান মুদ্রানীতি সরকারের যৌক্তিক আর্থিক নীতির আলোকে প্রণীত হয়েছে।  [আমিরুল ইসলাম চৌধুরী]

গ্রন্থপঞ্জি  Executive Summary of Monetary Policy Statement (January-June 2012).