মাসির-উল-উমারা

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:৪৩, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

মাসির-উল-উমারা  ১৭৮০ সাল পর্যন্ত মুগল প্রশাসকদের একটি জীবনীমূলক অভিধান। এখানে উল্লিখিত সময়ে মুগল প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের নামের তালিকা পাওয়া যায়। গ্রন্থটি শাহ নওয়াজ খান (শামসাম-উদ-দৌলা উপাধি প্রাপ্ত) এবং তাঁর পুত্র আব্দুল হাই কর্তৃক যৌথভাবে রচিত। শাহ নওয়াজ খান ১৭৪১ সালের আগস্ট মাস থেকে ১৭৪৭ সাল পর্যন্ত এটি সংকলনে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। দুর্ভাগ্যবশত এসময়ে কর্তৃপক্ষের কোপানলে পড়ে তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসর নিতে হয়। কিন্তু স্বল্প কালের মধ্যে ১৭৪৭ সালে তিনি আবার বেরারের গভর্নর নিযুক্ত হন। বাহ্যত তিনি বইটির কথা ভুলে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরে যখন তাঁর পুত্র আব্দুল হাই বইটির গুরুত্বের কথা তাঁকে স্মরণ করিয়ে দেন তখন তিনি তাঁকেই তা সম্পূর্ণ করার পরামর্শ দেন। ঘটনাক্রমে শাহ নওয়াজ খান ১৭৫৮ সালে বন্দি হন, তাঁর ঘরবাড়ি লুণ্ঠিত হয় এবং মাসির-উল-উমারার পান্ডুলিপিসহ সকল বইপত্র হারিয়ে যায়। বছর খানেক পর বইটির অসমাপ্ত পান্ডুলিপি উদ্ধার করা হয় এবং গ্রন্থকারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহযোগী মীর গোলাম আলী বইটি পুনর্বিন্যাস করেন। এ পুনর্গঠিত কপি মাসির-উল-উমারার প্রথম সংস্করণ বলে পরিচিত। শাহ নওয়াজের পুত্র আব্দুল হাই সৌভাগ্যক্রমে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান। পরে তিনি পিতার উপাধি ‘শামসাম-উদ-দৌলা’ গ্রহণ করেন এবং উচ্চ পদ লাভ করেন। তিনি ১৭৬৮-৬৯ সালে আরও জীবনী সংগ্রহ করার কাজ শুরু করেন এবং ১৭৮০ সালে তা শেষ করেন। এটিকে গ্রন্থটির দ্বিতীয় সংস্করণ বলা হয়।

আব্দুর রহিমের সম্পদনায় কলকাতা এশিয়াটিক সোসাইটি ১৮৮৭ সালে মাসির-উল-উমারার মূল গ্রন্থ প্রকাশের পদক্ষেপ নেয় এবং ১৮৯৬ সালে মির্জা আশরাফ আলীর সম্পাদনায় তা তিন খন্ডে প্রকাশিত হয়। এ খন্ডগুলি হেনরী বেভারীজ কর্তৃক ইংরেজিতে অনূদিত হয় এবং বেণীপ্রসাদ ১৯৪১ এবং ১৯৫২ সালে টীকা-টিপ্পনীসহ সংশোধিত আকারে তা সম্পূর্ণ করে প্রকাশ করেন। দুই খন্ডে সমাপ্ত ইংরেজি অনুবাদে অক্ষরক্রমে মোট ৭৩৪টি জীবন বৃত্তান্ত দেওয়া আছে। ফারসি ভাষায় মূল গ্রন্থটি ২৭০০ পৃষ্ঠার ছিল।

ভারতে মুগল ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে মাসির-উল-উমারা-কে জ্ঞানের এক অপরিহার্য আধার বলে অভিহিত করা হয়। সমসাময়িক কালে লেখা মুগল সাম্রাজ্য বিষয়ক ইতিহাসের কোন অভাব নেই। সেসবের মধ্যে বাবুরনামা, হুমায়ূননামা, পাদশানামাআলমগীরনামা প্রভৃতি নামা জাতীয় গ্রন্থ প্রধান। এগুলিতে মুগল সম্রাটদের কীর্তিগাথা বর্ণিত আছে। এছাড়া সম্রাটদের আদেশে বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে লিখিত ইতিহাস, সরকারি দলিপত্র এবং পত্রাদিতে এ সময়ের ঘটনাবলি সংরক্ষিত হয়। এতদসত্ত্বেও মাসির-উল-উমারা সরকারি কর্মকর্তাদের জীবন ও কার্যক্রম বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে থাকে; তাদের শিক্ষা-সংস্কৃতি, ভাব-প্রবণতা ও অবসর বিনোদন প্রভৃতি সব কিছুই এখানে পাওয়া যায়। মোট কথা এটি মুগল সাম্রাজ্যের সম্পূর্ণ ইতিহাস উদ্ঘাটনের জন্য এক মূল্যবান পরিপূরক উৎস।

বাংলার ইতিহাস পুনর্গঠনের জন্যও মাসির-উল-উমারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। বাংলা বিশাল মুগল সাম্রাজ্যভুক্ত এক ক্ষুদ্র প্রদেশ ছিল। বড় জোর এটি সমগ্র সাম্রাজ্যের পনেরো ভাগের এক ভাগ বা উনিশ ভাগের এক ভাগ ছিল। তাই রাজধানী শহরে লেখা সাম্রাজ্যের ইতিহাসে বাংলায় নিযুক্ত কর্মকর্তাদের কর্মবিবরণী যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। এক্ষেত্রে মাসির প্রদত্ত তথ্যাবলি বাংলার কর্মচারীদের জীবন ও কার্যাবলি সম্পর্কে পরিপূরক তথ্যাদি সরবরাহ করে। সকল নামকরা ব্যক্তিত্ব, আমীর-ওমরাহ, সেনাপতি, মন্ত্রী, গভর্নর, অর্থনীতিবিদ, কবি-সাহিত্যিক প্রায় সকল স্তরের লোক যাঁরা কর্ম জীবনে স্ব স্ব ক্ষেত্রে সম্পূর্ণতা ও কৃতিত্ব অর্জন করেছেন, তাঁদের সকলের জীবন কাহিনী এ গ্রন্থে সংরক্ষিত আছে।  [আবদুল করিম]

গ্রন্থপঞ্জি  Shahnawaz Khan and Abdul Hai, Maasir-ul-Umara, text published in the Bibliotheca Indica, Calcutta, 1887-1896; H Beveridge and B Prasad (tr), Maasir-ul-Umara of Shahnawaz Khan and Abdul Hai, Calcutta, I, 1941, II, 1952