মার্শম্যান, জোশুয়া

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:৪৩, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

মার্শম্যান, জোশুয়া (১৭৬৮-১৮৩৭)  পন্ডিত, প্রাচ্যবিদ্যাবিশারদ, ধর্মতাত্ত্বিক, শ্রীরামপুর মিশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর জন্ম ১৭৬৮ সালের ২০ এপ্রিল ইংল্যান্ডের ওয়াল্টশায়ারের ওয়েস্টবারি লিফ-এ। তাঁর বাবা জন একজন তাঁতব্যবসায়ী যিনি প্রথম জীবনে ইংরেজ সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে কুইবেক বিজয়াভিযানে অংশগ্রহণ করেন। মায়ের নাম মেরী কুজেনার। বাল্যকালে দারিদ্রে্যর কারণে তাঁর আনুষ্ঠানিক শিক্ষা বাধাগ্রস্ত হয়। কিন্তু জ্ঞানের তীব্র আকাঙ্ক্ষার কারণে তিনি নানা ধরনের বই পড়তে থাকেন। বলা হয়ে থাকে যে, আঠারো বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই তিনি পাঁচ শতাধিক বই পাঠ করেছিলেন। পরে তিনি ব্রিস্টল একাডেমীতে ল্যাটিন, গ্রিক, হিব্রু এবং সিরীয় ভাষা শিক্ষা লাভ করেন। ১৭৯৪ সালে তিনি ব্যাপটিজমে দীক্ষা নেন। এ সময় তিনি ব্রিস্টলের ব্রডমিডে ব্যাপটিস্ট চ্যাপেল দাতব্য বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিযুক্ত হন। এ সময় তিনি বাইবেলের শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি ল্যাটিন থেকে অনুবাদ করে সংক্ষিপ্ত আরবি ব্যাকরণ প্রকাশ করেন। ব্যাপটিস্ট মিশনারী সোসাইটির পত্রিকার মাধ্যমে তিনি উইলিয়ম কেরী (১৭৬১-১৮৩৪) সম্পর্কে জানতে পারেন। তিনি ভারতে উইলিয়ম কেরীর কার্যক্রমে উৎসাহিত হন এবং তাঁর সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দিতে আগ্রহী হন। জোশুয়া মার্শম্যান তাঁর স্ত্রী হান্নাহ এবং কয়েকজন অনুসারীকে নিয়ে পোর্টমাউথ থেকে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ১৭৯৯ সালের ১৩ অক্টোবর তারা ভারতের শ্রীরামপুরে উইলিয়ম কেরীর সঙ্গে যোগ দেন।

কিছুদিনের মধ্যে মার্শম্যান এবং হান্না ইউরোপীয়দের সন্তানদের জন্য একটি বোর্ডিং স্কুল চালু করেন। এক বছরের মধ্যে মার্শম্যান সংস্কৃত এবং বাংলা ভাষায় ব্যাপক দক্ষতা অর্জন করেন। এর পরে তিনি ধ্রুপদী ভারতীয় সাহিত্য ইংরেজিতে এবং বাইবেল ভারতীয় ভাষায় অনুবাদ শুরু করেন। ১৮০৬ সালে মার্শম্যান উইলিয়ম কেরী সহযোগে বাল্মিকী রচিত রামায়ণ -এর ইংরেজি অনুবাদ শ্রীরামপুর প্রেস থেকে প্রকাশ করেন। ১৮০৮ সালে এর দ্বিতীয় খন্ড প্রকাশিত হয়। এ সময় তিনি চীনা ভাষা অধ্যয়ন করেন এবং ধর্মীয় নির্দেশনা এ ভাষায় অনুবাদ করেন। তিনি এ সময় চীনা ভাষার ব্যাকরণও সংকলন করেন। এ ছাড়া তিনি ১৮০৯ সালে A Dissertation on the Character and Sounds of the Chinese Language, কনফুসীয় শিক্ষার অনুবাদ (১৮০৯) এবং ১৮১৪ সালে Clavis Sinica  প্রকাশ করেন।

জোশুয়া মার্শম্যান


জোশুয়া মার্শম্যান কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে একটি প্রচার-পুস্তিকা রচনা করেন। উইলিয়ম কেরী, জোশুয়া মার্শম্যান এবং উইলিয়ম ওয়ার্ডের ইস্যুকৃত এ প্রসপেক্টাসে এশীয়, ইউরোপীয় এবং অন্যান্য তরুণদের প্রাচ্য সাহিত্য এবং ইউরোপীয় বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য কলেজের প্রস্তাব করা হয়। এ উদ্দেশে ১৮১৮ সালের ৫ জুলাই শ্রীরামপুর কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে অর্থাভাবে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হতে থাকে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য মার্শম্যান ১৮২৬ সালে ইংল্যান্ড গমন করেন এবং সেখান থেকে ডেনমার্ক ভ্রমণ করেন। এ সময় তিনি কলেজের জন্য ডেনমার্কের রাজা ষষ্ঠ এডওয়ার্ডের চার্টার লাভ  করেন। ১৮২৯ সালের মে মাসে তিনি শ্রীরামপুর ফিরে আসেন। রাজকীয় গ্রান্টের মাধ্যমে তিনি উইলিয়ম কেরী সহযোগে পূর্ণোদ্যমে মিশন পরিচালনায় আত্মনিয়োগ করেন।

জোশুয়া মার্শম্যান যিশুর পুনরুত্থান, যিশু ঈশ্বরের পুত্র সম্পর্কিত খ্রিস্ট ধর্মীয় ব্যাখ্যা এবং ত্রিত্ববাদ সম্পর্কে রাজা রামমোহন রায়ের (১৭৭২-১৮৩৩) বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন। তিনি উনিশ শতকের বিশের দশকের শুরুতে ধর্ম সম্পর্কে রামমোহন রায়ের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। মার্শম্যান রামমোহনের একত্ববাদের ধারণার তীব্র বিরোধী ছিলেন। তিনি এ সম্পর্কে ১৮২২ সালে লন্ডনের কিংসবেরি থেকে প্রকাশ করেন A Defense of the Deity and Atonement of Jesus Christ, In Reply to Ram-Mohun Ray of Calcutta.

জোশুয়া মার্শম্যান ভারতে সংবাদপত্রের সূচনাকারীদের অন্যতম। তিনি ১৮১৮ সালে প্রথম বাংলা সাপ্তাহিক সমাচার দর্পণ প্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। এ ছাড়া তিনি Friends of India নামে একটি মাসিক পত্রিকাও প্রকাশ করেন। পরবর্তীকালে তাঁর পুত্র জন ক্লার্ক মার্শম্যান এটির প্রকাশনা ও সম্পাদনার কাজ চালিয়ে যান। ১৮২১ সালে তিনি শিশুদের জন্য ধর্মীয় শিক্ষামূলক গ্রন্থ School Dialogues; or Lessons on the commandments and the way of Salvation প্রকাশ করেন। মার্শম্যান প্রথম চীনা ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করেন। এটি ১৮২১ সালে শ্রীরামপর প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। তিনি কিছু খ্রিস্টীয় প্রার্থনা সঙ্গীতও রচনা করেন।

জোশুয়া মার্শম্যান ১৮১১ সালে রোড আইল্যান্ডের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক Doctor of Divinity ডিগ্রি লাভ করেন। ১৮৩৭ সালের ৫ ডিসেম্বর শ্রীরামপুরে তাঁর মৃত্যু হয়।  [এ.টি.এম যায়েদ হোসেন]