মহীসোপান

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:৪১, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

মহীসোপান (Continental shelf)  স্থলভাগ সন্নিহিত সমুদ্রতলের অংশ যেখানে পানির গভীরতা সর্বোচ্চ ২০০ মিটার। মহীসোপান বলতে মহাদেশীয় ভূভাগের স্থানীয়ভাবে নিমজ্জমান অংশকে বোঝায়। এগুলো খুবই সমতল তলাবিশিষ্ট এবং নতিমাত্রা ১:৫০০-এরও কম। অনেক বিশেষজ্ঞ মহীসোপানকে মহীচত্বর হিসেবে আখ্যায়িত করেন। মহীসোপানের গড় প্রস্থ প্রায় ৬৫ কিমি; কোথাও ২০/৩০ মিটার আবার কোথাও বা ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি। অধিকাংশ মহীসোপানই স্থলভাগের অংশ হিসেবে থাকার সময়কার অর্জিত বৈশিষ্ট্যাদি আজও ধারণ করে আছে। তাই দেখা যায় যে ১৫,০০০ বছর আগে যখন সমুদ্রপৃষ্ঠ আজকের তুলনায় প্রায় ১২০ মিটার নিচে ছিল, তখনকার হিমবাহ আবৃত স্থলভাগের কিংবা স্থলভাগের মধ্যকার নদীতলের উপাদান বা বৈশিষ্ট্যাদির চিহ্ন আজও বিরাজমান আছে। মহীসোপানের উপরিস্থিত অগভীর পানি গভীর ও অবারিত সমুদ্রের পানি থেকে পৃথক। উপকূলীয় নদীসমূহের প্রচুর দ্রবীভূত পুষ্টি উপাদান এই অগভীর পানিতে এসে মিশে যায়। এতে পললের পরিমাণও সাধারণত উচ্চমাত্রায় থাকে বলে মাঝ সমুদ্রের পানিরাশির চেয়ে এই পানি কম পরিষ্কার। বিভিন্ন সামুদ্রিক উদ্ভিদ, শৈবাল, প্রবাল, ঝিনুক, শামুক, বিভিন্ন প্রজাতির গর্তবাসী, পোকামাকড়, খোলসবিশিষ্ট প্রাণী, উদ্ভিদ ও বিভিন্ন সিলেনটারেটা (coelenterates) মহীসোপানের অগভীর পানিতে নিবাস গড়ে তোলে। এছাড়া বিভিন্ন সামুদ্রিক ক্ষুদ্র প্রাণী, স্টার ফিস, বৃটল স্টার, সি কুকুমবার ও স্পঞ্জ ফিস এই অঞ্চলে বসবাস করে।

বাংলাদেশের উপকূলভাগের মহীসোপানের বিস্তার স্থানবিশেষে বিভিন্ন। হিরণ পয়েন্ট ও সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের মধ্যে বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলভাগে এর বিস্তার ১০০ কিলোমিটারের কম। আবার কক্সবাজার উপকূলে তা ২৫০ কিলোমিটারেরও বেশি। সমুদ্রতলের শিলা বৈশিষ্ট্যাদি বিশ্লেষণে দেখা যায় বাংলাদেশের মহীসোপানে অবক্ষেপিত সূক্ষ্ম পলিকণার পরিমাণ দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমেই বেশি। এগুলো সবচেয়ে বেশি অবক্ষেপিত হয়েছে অন্তঃসাগরীয় গিরিখাত সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ডে। বাংলাদেশের মহীসোপানের বেশিরভাগ অংশ পলি ও কর্দমে আবৃত। চট্টগ্রাম ও টেকনাফের মহীসোপানের অগভীর অংশ (২০ মিটারের কম) বালি আবৃত এবং জোয়ারভাটার সময় সুগঠিত বালুকাবেলা দৃষ্টিগোচর হয়। এই অঞ্চলের মহীসোপানে দৃষ্ট বালু তরঙ্গের প্রকটতা খুবই উল্লেখযোগ্য (৩-৫ মিটার), যা উচ্চ শক্তিসম্পন্ন অবক্ষেপ পরিবেশের বিদ্যমানতা প্রমাণ করে। এমনকি সুন্দরবন-পটুয়াখালী-নোয়াখালী উপকূলে অবস্থিত মহীসোপানের দক্ষিণাংশের অগভীর অংশও পলি ও কর্দমে ঢাকা, যা তীর বরাবর কর্দমপূর্ণ জোয়ারভাটা গঠিত সোপান সৃষ্টি করেছে। মহীসোপানের এই অংশে অবস্থিত কিছু মগ্ন চড়া ও বালুর শৈলশিরা সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ডের দিকে সম্প্রসারিত হয়ে আছে। এ থেকে আভাস মিলছে যে, বর্তমান মহাসাগরীয় পরিবেশেও সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ডের মাধ্যমে পলল বঙ্গোপসাগরের গভীরতর অংশে প্রবেশ করছে।  [মাহমুদ আলম]