মহাথের, শান্তপদ

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:৪০, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

মহাথের, শান্তপদ (১৯১৫-১৯৮৭)  বৌদ্ধধর্মীয় পন্ডিত, শিক্ষাবিদ। ১৮৩৬ শকাব্দের (১৯১৫ খ্রি.) ২৭ ফাল্গুন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানার (বর্তমান লোহাগাড়া) চেঁদিরপুনি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাল্য নাম ছিল সুশান্ত। স্বগ্রামের বৌদ্ধ বিহারে তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। পরে বোর্ড স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা এবং পার্শ্ববর্তী আধুনগর স্কুলে তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। শারীরিক ও পারিবারিক বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে না পারলেও পালি, বাংলা, ইংরেজি ও সংস্কৃত ভাষা অধ্যয়নের মাধ্যমে তিনি নিজেকে সমৃদ্ধ করেন। চৌদ্দ বছর বয়সে তিনি  প্রব্রজ্যা এবং বিশ বছর বয়সে  উপসম্পদা লাভ করেন। প্রব্রজ্যা গ্রহণের পর তিনি বিভিন্ন আচার্যের অধীনে পালিচর্চা ও ত্রিপিটকসহ অন্যান্য বৌদ্ধধর্মীয় গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন করেন। পাহাড়তলীর মহামুনি পালি টোলেও তিনি কিছুদিন অধ্যয়ন করেন এবং সেখান থেকে ‘ত্রিপিটক বিশারদ’ উপাধিতে ভূষিত হন। পাহাড়তলী অবস্থানকালে তিনি নিকটবর্তী জগৎপুর আশ্রমে গিয়ে সংস্কৃত ভাষা শেখেন। পরবর্তীসময়ে হাটহাজারীর মির্জাপুর গৌতমাশ্রম বিহারে পালি টোল প্রতিষ্ঠা করে তিনি পালি ও বৌদ্ধধর্মীয় শিক্ষা বিস্তারে অনন্য ভূমিকা পালন করেন। টোলটি পরে কলেজে রূপান্তরিত হয় এবং আমৃত্যু তিনি এর অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি বার্মিজ, সিংহলিজ, ইংরেজি ও থাই ভাষাও জানতেন। তিনি প্রাচীন  পুথি পাঠেও দক্ষ ছিলেন। ১৯৭৯-৮০ সময়ে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্যভাষা বিভাগে খন্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন।

বিদ্যানুরাগী পন্ডিত শান্তপদ মহাথের আধ্যত্মিকতা ও ধর্ম সাধনার পাশাপাশি  ত্রিপিটক সংক্রান্ত বহু মূল্যবান গ্রন্থ রচনা ও অনুবাদ করেন। তাঁর গ্রন্থগুলি হলো: মিলিন্দপ্রশ্ন, ধাতুকথা, অপদান, চরিয়াপিটক, অঙ্গুত্তরনিকায়, শীলার্থদীপন, অভিধর্মার্থসংগ্রহ প্রভৃতি। এসকল গ্রন্থে তাঁর পান্ডিত্যের পরিচয় পাওয়া যায়। এছাড়া প্রজ্ঞাভূমিনির্দেশ ও বুদ্ধের উপদেশসংগ্রহ (অঙ্গুত্তরনিকায়ের আলোকে) সহ তাঁর কয়েকটি অপ্রকাশিত পান্ডুলিপিও রয়েছে। সঙ্ঘশক্তি, জগজ্জ্যোতি, নালন্দা, পারমিতা, কৃষ্টি প্রভৃতি মাসিক ও সাময়িক পত্রিকায় বৌদ্ধ ধর্ম, দর্শন, ইতিহাস, সাহিত্য ও ঐতিহ্য সম্পর্কে তাঁর বহু মূল্যবান প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর এসকল প্রবন্ধ সুধীমহলে প্রশংসিত হয়েছে।

শান্তপদ ছিলেন একজন দৃঢ় প্রত্যয়ী ও অসীম ধৈর্যের অধিকারী ব্যক্তি।  বৌদ্ধধর্ম ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সংহতি ও জাগৃতির জন্য তিনি নিরলসভাবে কাজ করেছেন। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে বৌদ্ধদের ধর্ম ও সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে তিনি অসামান্য অবদান রাখেন। তিনি উভয় বঙ্গে বহু বিহার প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকার মেরুল বাড্ডাস্থ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার প্রতিষ্ঠায়ও তাঁর অবদান ছিল। তাঁর জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলি হলো: ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে রেঙ্গুনে অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ বৌদ্ধ সঙ্গীতিতে বাঙালি বৌদ্ধদের অন্যতম প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ ও ত্রিপিটক পরিশোধনের কার্য সম্পাদন, ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দ থেকে দুদশকেরও অধিককাল পর্যন্ত সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বব পালন, ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে থাইল্যান্ডের ধর্মমঙ্গল বিহারে বুদ্ধের পবিত্র ধাতু (Relic) প্রদানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের বৌদ্ধদের মধ্যে সেতুবন্ধ স্থাপন প্রভৃতি। আজীবন শান্তি ও মানবতার পক্ষে কথা বলার জন্য ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে মঙ্গোলিয়ার উলান বাতরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনে এশিয়ান বুদ্ধিস্ট কনফারেন্স ফর পিস (ABCP) কর্তৃক তিনি শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি বৌদ্ধধর্ম, বিশ্বশান্তি ও শিক্ষা সম্পর্কিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগদানের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দের ১৯ আগস্ট  ঢাকা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারএ তিনি পরলোকগমন করেন।  [সুকোমল বড়ুয়া]