ময়রা

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:৪০, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

ময়রা  মিষ্টান্ন প্রস্ত্ততকারী সম্প্রদায়। এ সম্প্রদায়ের সদস্যগণ দুধ, ছানা, ময়দা, ঘি, গুড় এবং চিনির সংমিশ্রণে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন দ্রব্য তৈরি করেন। ময়রাদের তৈরি সুপরিচিত এবং সুস্বাদু মিষ্টান্নের মধ্যে আছে সন্দেশ, রসগোল্লা, মতিচুর, মিহিদানা, লুচি, কচুরি, জিলাপি, খাজা, বরফি, হালুয়া ইত্যাদি। অতীতে ময়রারা ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। বিভিন্ন পেশাগত গোষ্ঠীর দক্ষ লোকজনের সমন্বয়ে ময়রার দল গঠিত হয়। তবে ময়রারা মধুনাপিত, মোদক এবং কুরি বলে পরিচিত পেশাজীবীদের থেকে পৃথক বৈশিষ্ট্যমন্ডিত, কেউ কেউ মধুনাপিতকে ময়রা সম্প্রদায়ের একটা উপ-সম্প্রদায় বলে মনে করেন। বর্তমানে অবশ্য এদেরকে একে অপরের থেকে আলাদা করা অর্থহীন, কারণ বাস্তবে উভয় সম্প্রদায় বা দলই মিষ্টান্ন প্রস্ত্ততকারক হিসেবে সুপরিচিত। ময়রারা ছিল মূলত বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশ। তারা গণেশকে বিশেষ দেবতা মনে করে এবং তাঁর পূজা করে। এই পূজা অনুষ্ঠানের বিশেষ মৌসুম হচ্ছে আখ কাটার সময়, যখন দেবতাকে প্রসন্ন করার জন্য একেবারে টাটকা গুড়ের সংমিশ্রণে মিষ্টান্ন তৈরি করা হয়। ময়রাদের বিশ্বাস মিষ্টান্ন তৈরি করাই তাদের মূল পেশা। কিন্তু আজকাল তাদের অনেকেই চাষবাসসহ অন্যান্য পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করছে। হিন্দুদের মধ্যে ময়রারা উচ্চ সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা কমিউনিটিতে মিষ্টান্ন সরবরাহ করে এবং উৎসবাদিতে পবিত্রতা রক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকে। তারা নবশাক সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত এবং ব্রাহ্মণরা তাদের ছোঁয়া পানি গ্রহণ করে। খাদ্যগ্রহণ প্রণালীতেও তারা নিজেদের সম্প্রদায়ের নিয়মনীতি মেনে চলে।

অতীতে হিন্দুদের মধ্যেই ভাল মিষ্টান্ন প্রস্ত্ততের দৃষ্টান্ত লক্ষ্য করা যেত এবং তখন লোকজন ভ্রমণের সময় খাবার হিসেবে একমাত্র মিষ্টান্নই সঙ্গে রাখত। মিষ্টান্ন এখন উৎসবের খাবার তালিকায় অগ্রগণ্য এবং বাসাবাড়িতে অতিথি আপ্যায়নে অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। ঐতিহ্যবাহী মেলা এবং উৎসবাদিতে প্রচুর মিষ্টান্ন বিক্রয় হয়। সমাজে ময়রাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকাল ময়রারা বিশেষ কোন সম্প্রদায়ে আবদ্ধ নেই। বিভিন্ন ধর্মের এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিমন্ডলের লোকজন ময়রার কাজে নিজেকে জড়িত করছে। ধনী ব্যবসায়ীরা আজকাল মিষ্টান্ন তৈরির কাজে বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করছে। অনেক ময়রা মিষ্টান্ন তৈরির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করছেন, মিষ্টান্ন প্রস্ত্ততকারক কারখানাগুলি টিকিয়ে রাখছেন। শহরের আধুনিক মিষ্টান্ন তৈরির কারখানাগুলির মধ্যে পেশাগতভাবে নিয়োজিত কর্মীদের একটা বড় অংশই মুসলমান। আবার গৃহবধূরাও অনেক ধরনের মিষ্টান্ন ও পিঠা তৈরি করে থাকেন যেমন: পাকান পিঠা, পাটিসাপটা, রসচিতই ইত্যাদি। এসব মিষ্টদ্রব্য প্রস্ত্ততে ব্যবহূত হয় চালের গুড়া, ময়দা, তেল, ঘি, খেজুরের গুড় ও রস, তালের গুড় ও রস, আখের গুড় ইত্যাদি।  [গোফরান ফারুকী]