মন্ত্রণালয়/বিভাগ

Nasirkhan (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৮:২৩, ২১ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

মন্ত্রণালয়/বিভাগ  সচিবালয়ের কার্য নির্বাহের জন্য বাংলাদেশ সচিবালয়ের অংশ হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে গঠিত প্রশাসনিক ইউনিট। ১৯৯৬ সালের কার্যবিধিতে সুনির্দিষ্ট সরকারি কার্য সম্পাদনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও সরকার কর্তৃক ঘোষিত কোন স্বয়ংসম্পূর্ণ  প্রশাসনিক ইউনিটকে বিভাগ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। বিভাগ বা কতিপয় বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত মন্ত্রককে মন্ত্রণালয় হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। সরকারের কার্যাবলি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে বণ্টন করা হয়। সরকারি কার্যবণ্টনের দায়িত্ব কেবিনেট বিভাগের ওপর ন্যস্ত। প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অধীনে রয়েছে অধিদপ্তর, অধীনস্থ দপ্তর এবং কতিপয় আধা সরকারি সংস্থা। মন্ত্রণালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক কার্য-কাঠামোর বিশদ বর্ণনা নিম্নরূপ:

সচিবের অব্যবহিত অধস্তনরূপে কর্মরত একজন অতিরিক্ত সচিব বা যুগ্মসচিব সাধারণত মন্ত্রণালয়ের একটি উইং-এর প্রধান থাকেন। মন্ত্রণালয়/বিভাগের ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের জন্য গঠিত স্বয়ংসম্পূর্ণ উপ-বিভাগকে উইং বলা হয়। উইংয়ের নিম্নস্তর হচ্ছে শাখা। কতগুলি উপশাখার সমন্বয়ে শাখা গঠিত এবং এর প্রধান থাকেন উপসচিব বা সমপদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। শাখার অধীনে থাকে উপশাখা। উপশাখা হচ্ছে সহকারী সচিব বা ঊর্ধ্বতন সহকারী সচিবের অধীনে ন্যস্ত মন্ত্রণালয়/বিভাগের মৌলিক কার্যনির্বাহী ইউনিট।

সচিব হচ্ছেন মন্ত্রণালয়/বিভাগের প্রশাসনিক প্রধান। তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের প্রশাসন পরিচালনা, শৃঙ্খলা বিধান এবং এর ওপর অর্পিত কার্যাবলি যথাযথভাবে সম্পাদনের দায়িত্বে নিয়োজিত। তিনি মন্ত্রণালয়/বিভাগ, অধিদপ্তর ও অধীনস্থ দপ্তরগুলোতে বিধিবিধানসমূহ যথাযথভাবে অনুসৃত হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণের দায়িত্বও পালন করেন। মন্ত্রণালয়ের/বিভাগের কার্যক্রম সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে অবহিত করার দায়িত্বও সচিবের। একজন সচিব সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও অধীনস্থ দপ্তরসহ মন্ত্রণালয়/বিভাগের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মন্ত্রণালয়/বিভাগ এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাপর সংস্থার জন্য বরাদ্দকৃত তহবিল ঐসময়ে প্রচলিত বিধি/আইন অনুসারে ব্যয় করা হচ্ছে কিনা তাও তাকে নিশ্চিত করতে হয়।

কার্যবিধির আওতায় মন্ত্রণালয়/বিভাগের ভূমিকা হলো: (ক) নীতি নির্ধারণ, (খ) পরিকল্পনা প্রণয়ন, (গ) পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মূল্যায়ন, (ঘ) আইন প্রণয়নের উদ্যোগ, (ঙ) সংসদে দায়িত্ব সম্পাদনে মন্ত্রীকে সহায়তা করা, (চ) উচ্চ পর্যায়ের কর্মচারী ব্যবস্থাপনা অর্থাৎ সংবিধিবদ্ধ সরকারি সংস্থার সদস্য/পরিচালক পদমর্যাদার নিচে নয় এবং অধিদপ্তর ও অধীনস্থ দপ্তরসমূহের ক্ষেত্রে জাতীয় বেতন স্কেল ৫-এর নিচে নয় এধরনের কর্মচারীদের বিষয় এবং (ছ) সময়ে সময়ে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নির্ধারিত অপরাপর বিষয়/বিষয়সমূহ।

কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে নীতি প্রণয়ন মন্ত্রণালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কোন বিষয়ে নীতি প্রণয়নের কাজ একাধিক মন্ত্রণালয়ে  অর্পিত হলে সেক্ষেত্রে আন্তঃমন্ত্রণালয় পরামর্শ বাধ্যতামূলক। আন্তঃমন্ত্রণালয় পরামর্শের পর প্রণীত নীতির খসড়া অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় পেশ করা হয়। পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রত্যেক মন্ত্রণালয় উন্নয়ন প্রকল্প তৈরি করে। সাধারণত এই প্রকল্প দু ধরনের হয়, বৈদেশিক সাহায্যভিত্তিক প্রকল্প এবং সম্পূর্ণভাবে সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্প। এসব প্রকল্পের অনুকূলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন নিতে হয়। এ অনুমোদন প্রক্রিয়ায় পরিকল্পনা কমিশনের প্রাক্-পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হয়। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংশ্লিষ্ট সংস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। এধরণের প্রত্যেকটি প্রকল্পের মূল্যায়ন ও তদারকি কার্য সম্পন্ন হয় মন্ত্রণালয়ের মাসিক বৈঠকে অগ্রগতি পর্যালোচনার মাধ্যমে। দক্ষতার সঙ্গে সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ নির্বাহী কমিটি ও জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এন.ই.সি) নিকট জবাবদিহি করতে হয়।

কোনো আইন প্রণয়ন করতে হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রথম ঐ আইনের প্রস্তাব পেশ করে, আন্তঃমন্ত্রণালয় পরামর্শের ব্যবস্থা করে এবং পরে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে পাঠায়। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে খসড়া প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় পেশ করা হয়। মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর আইন মন্ত্রণালয় প্রস্তাবটিকে আইনের ছকে বিন্যাস করে সংসদে পেশের উপযোগী করে এবং এটিকে সংসদের সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। স্থায়ী কমিটির মতামতের ভিত্তিতে প্রস্তাবিত আইনের চূড়ান্ত খসড়াটি অনুমোদনের জন্য জাতীয় সংসদে পেশ করা হয়।

মন্ত্রণালয়ের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে জাতীয় সংসদে তার দায়িত্ব সম্পাদনে মন্ত্রীকে সহায়তা করা। মন্ত্রীকে এ ধরণের সহায়তা করার দুটি দিক রয়েছে। প্রথমত, প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের কার্যাবলি দেখাশুনার জন্য একটি করে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আছে। সংসদে বিভিন্ন দলের নির্বাচিত সদস্যদের সমন্বয়ে এ কমিটি গঠিত। মন্ত্রীও এ কমিটির একজন সদস্য। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের কাজ হলো কমিটিতে উত্থাপিত বিভিন্ন বিষয়ের আলোচনায় মন্ত্রী ও কমিটির অন্যান্য সদস্যদের সহায়তা করা। দ্বিতীয়ত, সংসদ অধিবেশনকালে মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে সংসদ-সদস্যরা প্রশ্ন উত্থাপন করেন। সংসদে এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট  মন্ত্রণালয় মন্ত্রীকে উপাত্ত ও অন্যান্য সম্পূরক তথ্য সরবরাহ করে।

শীর্ষ পর্যায়ে কর্মচারী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পদোন্নতি, প্রশিক্ষণ ও শৃঙ্খলা বিধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়সহ কোনো কোনো শ্রেণীর কর্মকর্তার পদায়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। এসকল বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, সংস্থাপন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সময়ে সময়ে জারিকৃত বিধি ও নির্দেশনা অনুসারে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।

সাধারণত বড় মন্ত্রণালয়ের একাধিক বিভাগ থাকে। অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে ৩টি করে বিভাগ। প্রত্যেকটি বিভাগের জন্য রয়েছেন পৃথক পৃথক সচিব এবং এঁরা একই মন্ত্রীর অধীনে কাজ করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একজন প্রতিমন্ত্রীও মন্ত্রণালয়ের কোনো বিভাগের প্রধান হতে পারেন। অনুরূপভাবে একজন প্রতিমন্ত্রী একাধিক বিভাগসহ একটি মন্ত্রণালয়ের প্রধানও থাকতে পারেন। মন্ত্রীর অধীনেও কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী থাকতে পারেন।

মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী কে মন্ত্রণালয়ের প্রধান হবেন সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোন বিধান নেই। এটি নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনার উপর; কারণ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী নিয়োগের একক দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর। তিনি মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টনেরও চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ। প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনা মতে দায়িত্ব বণ্টন পরিবর্তিত হতে পারে। আবার একীভূত বা পৃথকীকরণের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়কে পুনর্গঠিত করার বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনার ওপর নির্ভরশীল।  [এ.এম.এম শওকত আলী]