ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তি

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৪:১৫, ১ মার্চ ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তি  ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে শান্তি ও সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ ২৫ বছর মেয়াদী একটি মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমান। ইন্দিরা গান্ধীর বাংলাদেশ সফরের সময় এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

চুক্তিটিতে মোট ১২টি ধারা ছিল: (১) চুক্তি স্বাক্ষরকারী পক্ষদ্বয় ঘোষণা করছে যে, দু’দেশের জনগণের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও সৌহার্দ বজায় থাকবে, এক পক্ষ অন্য পক্ষের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখন্ডতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে এবং এক পক্ষ অন্য পক্ষের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না; (২) চুক্তি স্বাক্ষরকারী পক্ষদ্বয় সব ধরনের উপনিবেশবাদ ও বর্ণবাদের নিন্দা করছে এবং তার অবসানের লক্ষ্যে কাজ করে যাবার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে; (৩) চুক্তি স্বাক্ষরকারী পক্ষদ্বয় জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতির প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করছে এবং মনে করে যে, জোটনিরপেক্ষ নীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বে উত্তেজনা হ্রাস, বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সম্ভব; (৪) কোনো আন্তর্জাতিক সমস্যার কারণে চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশ দুটির স্বার্থ বিঘ্নিত হলে তারা নিজেদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করবে ও মত বিনিময় করবে; (৫) চুক্তি স্বাক্ষরকারী পক্ষদ্বয় অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক এবং কারিগরি ক্ষেত্রে পরস্পরকে সহযোগিতা প্রদান করবে এবং সমতা ও পারস্পরিক সুবিধার ভিত্তিতে বাণিজ্য, যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করবে; (৬) উভয় পক্ষ বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদীর অববাহিকা উন্নয়ন, জলবিদ্যুৎ উন্নয়ন ও সেচ প্রকল্পের ক্ষেত্রে যৌথ গবেষণা পরিচালনা ও যৌথ কর্মসূচি গ্রহণ করবে; (৭) উভয় পক্ষ শিল্পকলা, সাহিত্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়ন সাধন করবে; (৮) দু’দেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো পক্ষ অন্য কোনো দেশের সঙ্গে এমন কোনো সামরিক চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারবে না, যা চুক্তি স্বাক্ষরকারী কোনো পক্ষের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়। এক পক্ষ অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালাতে পারবে না এবং অন্য পক্ষের সামরিক ক্ষতি হতে পারে কিংবা নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে এমন কোনো কাজে নিজ দেশের ভূমি ব্যবহারের জন্য তৃতীয় কোনো পক্ষকে অনুমতি দিতে পারবে না; (৯) চুক্তি স্বাক্ষরকারী কোনো পক্ষের বিরুদ্ধে যদি তৃতীয় কোনো দেশ সামরিক আগ্রাসন চালায়, তাহলে চুক্তি স্বাক্ষরকারী কোনো পক্ষ ঐ তৃতীয় দেশটিকে সমর্থন করতে পারবে না বরং স্বাক্ষরকারী উভয় পক্ষ দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে যৌথ কর্মসূচি গ্রহণ করে সেই হুমকি মোকাবেলার ব্যাপারে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং নিজ নিজ দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে; (১০) চুক্তি স্বাক্ষরকারী প্রত্যেক পক্ষ তৃতীয় কোনো পক্ষের সঙ্গে গোপনে বা প্রকাশ্যে এমন কোনো চুক্তি সম্পাদন করতে পারবে না, যা বর্তমান চুক্তির স্বার্থকে বিঘ্নিত করে; (১১) বর্তমান চুক্তির মেয়াদ ২৫ বছর। তবে চুক্তি সম্পাদনকারী পক্ষদ্বয়ের পরস্পরের সম্মতিতে এর নবায়ন করা যাবে; (১২) চুক্তির কোনো ধারা নিয়ে আপত্তি উঠলে তা দ্বিপাক্ষিকভাবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে পারস্পরিক সম্মান ও সমঝোতার ভিত্তিতে সমাধান করা হবে।

১৯৯৭ সালের ১৯ মার্চ চুক্তিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে এবং অতঃপর আর এ চুক্তির নবায়ন করা হয় নি। [তারেক শামসুর রহমান]