ভান্ডারিয়া উপজেলা

ভান্ডারিয়া উপজেলা (পিরোজপুর জেলা)  আয়তন: ১৬৩.৫৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°২২´ থেকে ২২°৩৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৫৪´ থেকে ৯০°০৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে রাজাপুর ও কাউখালী উপজেলা (পিরোজপুর), দক্ষিণে মঠবাড়ীয়া, পূর্বে কাঁঠালিয়া ও রাজাপুর উপজেলা, পশ্চিমে পিরোজপুর সদর উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৫৫২৫৬; পুরুষ ৭৯০৮১, মহিলা ৭৬১৭৫। মুসলিম ১৩৯৯৭১, হিন্দু ১৫২২৬, খ্রিস্টান ৩৬ এবং অন্যান্য ২৩।

জলাশয় প্রধান নদী: বলেশ্বরী, কচা, পোনা ও নলবুনিয়া; চেচড়ি-রামপুর বিল (পদ্মার বাওর) উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন ভান্ডারিয়া থানা গঠিত হয় ১৯১২ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৫ এপ্রিল ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৩৭ ৪০ ২২৬৯৫ ১৩২৫৬১ ৯৪৯ ৬৮.৬ ৬১.৬
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৯.৭৪ ২২৬৯৫ ২৩৩০ ৬৮.৬
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
ইকড়ী ৫৯ ৭১২৩ ১১০২৭ ১০৮৭৫ ৫৭.৩৩
গৌরিপুর ৪৭ ৬৩৫৪ ১৫৯৭২ ১৪২০২ ৬৩.৬৬
তেলিখালী ৮৩ ৬৩৪০ ১১১৬৩ ১০৭৯১ ৫৫.৭৩
ধাওয়া ৩৫ ৫৮৬৬ ৯৮৬০ ৯৯১৬ ৬৯.৩২
নাদমূল্লা ৭১ ৫০০২ ১০৫২৪ ১০৬৯৭ ৬০.৬৬
ভান্ডারিয়া ১১ ২৮৪১ ১২৬৬০ ১১৩০৮ ৬৭.৮৯
ভিটাবাড়ীয়া ২৩ ৪৬৩৪ ৭৮৭৫ ৮৩৮৬ ৬৩.৫৮

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ ভেলাই চোকদারের দীঘি, জোড় মসজিদ বা শিয়া মসজিদ, ঠাকুর মদনমোহন মন্দির, কৃষক বিদ্রোহের শহীদদের মাযার (সিংখালী)।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি  ১৮৫৪ সালে সিংখালী কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। কৃষক নেতা গগন ও মোহন মিয়া ইংরেজ শাসন ও স্থানীয় জমিদারদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এতে ১৭ জন বিদ্রোহী শহীদ হন। ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে সুবাদার আজিজ শিকদারের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ভান্ডারিয়া থানা আক্রমণ করে কয়েকজন রাজাকারকে হত্যা করে। ২৯ নভেম্বর ভান্ডারিয়া বন্দর আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে এই উপজেলা থেকে পাকবাহিনী পশ্চাদপসরণ করে।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন ভাস্কর্য ১ (স্বর্গবাণী)।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৬৬০, মন্দির ১৭২। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: ভেলাই চোকদারের জোড় মসজিদ, ভান্ডারিয়া জামে মসজিদ, ইকড়ী জামে মসজিদ, ঠাকুর মদনমোহন মন্দির।

শিক্ষার হার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  গড় হার ৬২.৭%; পুরুষ ৬৩.৮%, মহিলা ৬১.৫%। কলেজ ৫, টেকনিক্যাল কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২৪, মাদ্রাসা ৮১, এতিমখানা ৩। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ভান্ডারিয়া সরকারি কলেজ, মাজিদা বেগম মহিলা কলেজ, আমানউল্লাহ মহাবিদ্যালয়, ভান্ডারিয়া বিহারী লাল মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১৩), বড় কানুয়া আঃ মজিদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৭), তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভান্ডারিয়া থানা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ইকড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: ভান্ডারিয়া বার্তা (১৯৯৮), মুখর বাংলা (২০০০)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৩২, লাইব্রেরি ৮, সাহিত্য সংগঠন ১, সিনেমা হল ১, শিল্পকলা একাডেমি ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪৯.৮২%, অকৃষি শ্রমিক ৫.৩০%, শিল্প ০.৫৮%, ব্যবসা ১৬.৪৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৯৫%, চাকরি ১১.২০%, নির্মাণ ১.৯৭%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.৪৬% এবং অন্যান্য ৯.৯৩%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৭০.০৫%, ভূমিহীন ২৯.৯৫%। শহরে ৬১.৩০% এবং গ্রামে ৭১.৪৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পান, মরিচ, ইক্ষু।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, নারিকেল, সুপারি, পেয়ারা, কলা, চালতা, আমড়া।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১৮৫০, গবাদিপশু ১৯০, হাঁস-মুরগি ১২০।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৪৬ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৩৩ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৫০ কিমি; নৌপথ ৩৯ নটিক্যাল মাইল।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি।

শিল্প ও কলকারখানা ধানকল, করাতকল, বরফকল, ছাপাখানা, ইটভাটা, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ, শীতল পাটি।

হাটবাজার ও মেলা  হাটবাজার ১৮, মেলা ৪। ভান্ডারিয়া বাজার, ইকড়ী বাজার এবং দশহরা মেলা, গৌরিপুরের হোলি উৎসব ও বৈশাখী মেলা এবং পাতলাখালীর বৈশাখী মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   পেয়ারা, কলা, আমড়া, পান, নারিকেল, শীতল পাটি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২৬.৫৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৬৭.৭৮%, পুকুর ২৭.৮৬%, ট্যাপ ০.৩৬% এবং অন্যান্য ৪.০০%। এ উপজেলায় অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৯.৭৭% (গ্রামে ৩৪.৭৩% ও শহরে ৭০.২৩%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫৭.১৬% (গ্রামে ৬২.১৭% ও শহরে ২৬.৮৯%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩.০৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৭, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৮।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চল হিসেবে এ উপজেলাটি বার বার জলোচ্ছ্বাস ও ঘুর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া ১৯৪১, ১৯৬১, ১৯৬৫, ১৯৬৬, ১৯৭০, ১৯৭৭, ১৯৮৬, ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের ঘুর্ণিঝড়ে এ উপজেলার অনেক লোকের প্রাণহানিসহ ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, ফসল ও অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, কারিতাস, আশা, কেয়ার। [গোলাম মোস্তফা সিদ্দিকি]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ভান্ডারিয়া উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।