ভট্টাচার্য, বিচারপতি দেবেশ চন্দ্র

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:৩৫, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

ভট্টাচার্য, বিচারপতি দেবেশ চন্দ্র (১৯১৪-২০০৪)  বিচারপতি, মানবাধিকার আন্দোলনের পুরোধা। ১৯১৪ সালের ৩ নভেম্বর টাঙ্গাইল জেলার এলেঙ্গায় এক জমিদার পরিবারে তাঁর জন্ম। তাঁর শিক্ষা জীবনের শুরু এলেঙ্গার মধ্য ইংরেজি বিদ্যালয়ে। তিনি টাঙ্গাইল শহরের বিন্দুবাসিনী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৩১ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন।  তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে ১৯৩৩ সালে আই.এস.সি এবং ১৯৩৫ সালে বি.এস.সি ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি কলকাতার ইউনিভার্সিটি ল’ কলেজ থেকে ১৯৩৮ সালে বিএল ডিগ্রি এবং ১৯৪০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন।

দেবেশ ভট্রাচার্য ১৯৪১ সালে ময়মনসিংহ জেলা আদালতে আইন ব্যবসা শুরু করেন। আইন ব্যবসার পাশাপাশি তিনি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন বিরোধী এবং কৃষক শ্রমিক আন্দোলনেও অংশগ্রহণ করেন।

রাজনৈতিক আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণে প্রায় দু‘বছর (১৯৪৯-৫১) তাঁকে ময়মনসিংহ ও ঢাকা জেলে অন্তরীণ রাখা হয়। কারামুক্তির পর ১৯৫১ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্টে আইন পেশা শুরু করেন । ১৯৫৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৬১ সালে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট হন। ১৯৬০ সালে তিনি বার কাউন্সিলের সদস্য মনোনীত হন এবং ১৯৬৫ সালের বার কাউন্সিল অ্যাক্ট চালু হওয়া পর্যন্ত ঐ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। পরে হাইকোর্টের রুল কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন এবং ঢাকা হাইকোর্টের অবলুপ্তি পর্যন্ত ঐ পদে বহাল ছিলেন। সম্পত্তি বিষয়ক আইন তথা দেওয়ানি আইনে তিনি বিশেষ পারদর্শিতার স্বাক্ষর রাখেন।

বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর দেবেশ ভট্টাচার্য নবগঠিত হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন এবং ১৯৭২ সালের ২১ জানুয়ারি শপথ নেন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি নিযুক্ত হন ১৯৭৫ সালের জুন মাসে। ১৯৭৭ সালের ডিসেম্বরে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর বেশ কিছু সাংবিধানিক ও মানবাধিকার বিষয়ক রায় দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রায়শই উল্লেখিত হয়ে থাকে।

বিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্য আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদানের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন।  তিনি ছিলেন বাংলাদেশ শত্রু সম্পত্তি আইন প্রতিরোধ কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নিমিত্তে গঠিত গণ-আদালতের তিনি ছিলেন অন্যতম বিচারক। তিনি বাংলাদেশ শান্তি কাউন্সিলের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বাংলাদেশ নাগরিক কমিটির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন।  ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবরে সংঘটিত জগন্নাথ হল দুর্ঘটনার গণতদন্ত কমিশনের তিনি ছিলেন সভাপতি । তিনি বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, এবং মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।

বাংলাদেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা এবং বাংলাদেশে হিন্দু নারীদের বর্ধিত অধিকার অর্জনের লক্ষ্যে হিন্দু আইন সংশোধনের জন্য তিনি সরব ছিলেন। তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমাজকল্যাণমূলক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি ছিলেন আলীম আল-রাজী ল’ কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, ঢাকাস্থ রামকৃষ্ণ মিশনের সভাপতি, নোয়াখালী গান্ধী আশ্রমের সভাপতি এবং চট্টগ্রামের প্রবর্তক সংঘের সভাপতি। এলেঙ্গায় বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক সংগঠনের তিনি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। নিজ গ্রাম এলেঙ্গাতে তাঁর মায়ের নামে একটি বালিকা বিদ্যালয়সহ দু’টি উচ্চ বিদ্যালয় এবং একটি কলেজ প্রতিষ্ঠায় তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল।

পারিবারিক জীবন, আইন পেশা ও রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি তিনি নিয়মিত কাব্যচর্চাও করতেন। কল্পকাব্য মঞ্জুষা শীর্ষক কাব্যগ্রন্থে তাঁর রচিত কবিতাগুলো সংকলিত হয়েছে। চার খন্ডে তাঁর রচিত প্রবন্ধের একটি সংকলন প্রকাশিত হয়েছে।

বিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্য ২০০৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পরলোক গমন করেন।

তাঁর স্মৃতিকে অক্ষয় করে রাখার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্য ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশন কর্তৃক টাঙ্গাইলে একটি মাতৃ-শিশু চিকিৎসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজ পরিচালিত হয়।  [দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য]