বোধিসত্ত্ব মঞ্জুশ্রী

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১০:১৫, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

বোধিসত্ত্ব মঞ্জুশ্রী  বৌদ্ধ দেবতা। প্রায় সকল দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নিকটই তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে পূজিত হন। ভিন্ন ভিন্ন নামে তাঁর অনেকগুলি প্রতিমূর্তি আছে, যথা: মঞ্জুবজ্র, মঞ্জুবর, মঞ্জুঘোষ, ধর্মধাতু বাগীশ্বর, ধর্মচক্রমঞ্জুশ্রী, নামসঙ্গীতি মঞ্জুশ্রী ইত্যাদি।

মঞ্জুশ্রীর মুখমন্ডল তিনটি এবং সেগুলি হলুদ, সবুজ ও সাদা বর্ণের। তিনি ষড়ভুজা। তাঁর ডান দিকের তিন হাতে তরবারি, বরদমুদ্রা ও তীর এবং বামদিকের তিন হাতে প্রজ্ঞাপারমিতা গ্রন্থ, নীলপদ্ম ও ধনু। তিনি তরবারি দ্বারা সমস্ত অজ্ঞানতাকে দূরীভূত এবং প্রজ্ঞাপারমিতা গ্রন্থদ্বারা সবাইকে সর্বোৎকৃষ্ট অতীন্দ্রিয় জ্ঞানদান করেন।

বোধিসত্ত্ব মঞ্জুশ্রী

মহাযান বা বজ্রযানী বৌদ্ধ মন্দিরসমূহে অবলোকিতেশ্বরের পর মঞ্জুশ্রীর অবস্থান। অধিবিদ্যামূলক জ্ঞানের দেবতা হিসেবে বোধিসত্ত্ব মঞ্জুশ্রী খ্রিস্টীয় ৪র্থ-৫ম শতকে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অধিষ্ঠিত ছিলেন। মহাযানীদের বিশ্বাস, তিনি প্রধান বোধিসত্ত্বগণের একজন; যারা মঞ্জুশ্রীর পূজা ও আরাধনা করে তারা জ্ঞান, উত্তম স্মৃতিশক্তি, বুদ্ধি, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব ও বাগ্মিতা লাভ করে। তারা আরও বিশ্বাস করে যে, শুধু তাঁর সাধন বা মন্ত্রাদি উচ্চারণ করেই পরিপূর্ণ জ্ঞান লাভ করা যায়। তিনি জ্ঞানের দুর্বোধ্য বিষয়গুলিকে সহজতর করেছেন এবং তিনি জ্যোতিষশাস্ত্রেরও একজন পৃষ্ঠপোষক।

আনুমানিক খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতকে রচিত গুহ্যসমাজতন্ত্র কিংবা তারও পূর্বে রচিত আর্যমঞ্জুশ্রীমূলকল্প গ্রন্থে প্রথম বোধিসত্ত্ব মঞ্জুশ্রীর নাম পাওয়া যায়। পরে রচিত অনেক বৌদ্ধগ্রন্থে তাঁর সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্যের সন্ধান মেলে। ফা-হিয়েন, হিউয়েন সাং, ইৎ-সিং প্রমুখের ভ্রমণবৃত্তান্তে বোধিসত্ত্ব মঞ্জুশ্রীর নামোল্লেখ আছে।সদ্ধর্মপুন্ডরীক গ্রন্থে বলা হয়েছে, শাক্যমুণি বুদ্ধের সঙ্গে বোধিসত্ত্ব মঞ্জুশ্রীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। এছাড়াও নামসঙ্গীতি গ্রন্থে বোধিসত্ত্ব মঞ্জুশ্রীকে  আদি বুদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

চীনা বৌদ্ধধর্মে প্রচলিত একটি কিংবদন্তি থেকে জানা যায় যে, চীনের সাধারণ মানুষের মুক্তি ও তাদের সদ্ধর্ম শিক্ষা দেওয়ার জন্য  গৌতম বুদ্ধ বোধিসত্ত্ব মঞ্জুশ্রীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। স্বয়ম্ভূপুরাণ-ও বোধিসত্ত্ব মঞ্জুশ্রীকে একজন মহান সাধক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এছাড়া এখানে আরও অনেক মনোমুগ্ধকর কাহিনী আছে। সেসব কাহিনীর ভিত্তিতে বোধিসত্ত্ব মঞ্জুশ্রীকে নেপালের সভ্যতা ও সংস্কৃতির স্রষ্টা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারও কারও ধারণা, বোধিসত্ত্ব মঞ্জুশ্রী একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু হিসেবে নেপালে  বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেন। মঞ্জুশ্রীকে কৃষির দেবতা, আধ্যাত্মিক জগতের স্থপতি এবং বিজ্ঞানের দেবতাও মনে করা হয়। বছরের প্রথম দিনটি মঞ্জুশ্রীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত বিধায় এদিন নেপালে অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে তাঁর পূজা হয়।

বোধিসত্ত্ব মঞ্জুশ্রীর তান্ত্রিক-অতান্ত্রিক অনেক ধরনের মূর্তি পাওয়া যায়। অতান্ত্রিক মূর্তিগুলি সাধারণত এক মাথা ও দুই হাতবিশিষ্ট। কখনও তিনি বজ্রাসনে উপবিষ্ট, কখনও সিংহের উপর আসীন; আবার কখনও ধ্যানাসনে উপবিষ্ট।  [ভিক্ষু সুনীথানন্দ]