বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:৩১, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি (বঙ্গীয় ইঙ্গ-ভারত সমিতি)  ১৮৪৩ সালের ২০ এপ্রিল কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত ব্রিটিশ ভারতের দ্বিতীয় রাজনৈতিক জনসংগঠন। জমিদারদের সংগঠন হিসেবে ১৮৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত জমিদার সমিতি (Zamindari Association) ছিল এ ধরনের প্রথম সংগঠন। বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি ছিল সীমিত পর্যায়ে ইন্দো-ব্রিটিশ সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করে গঠিত একটি প্রকাশ্য রাজভক্ত প্রতিষ্ঠান। ভূমিভিত্তিক অভিজাতবর্গের স্বার্থ রক্ষাকারী অন্তর্মুখী জমিদার সমিতির মত বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি বাংলার বুদ্ধিজীবীদের একটি অংশ, বিশেষত ইয়ং বেঙ্গল গ্রুপ, যারা পাশ্চাত্য শিক্ষা ও বুদ্ধির মাধ্যমে অর্জিত আভিজাত্যের গর্ব করত, কেবল তাঁদের স্বার্থকে তুলে ধরত।

বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটির প্রবক্তা ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক জর্জ টমসন, যিনি উইগীর প্রগতিশীল আদর্শে মুগ্ধ হয়ে এবং ভারত বিষয়ে কৌতূহলী হয়ে নিজেকে প্রধান করে ১৮৩৯ সালে লন্ডনে ‘ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৮৪৩ সালে ভারতে বসন্তকালীন সাময়িক অবস্থানকালে কলকাতায় কয়েকজন শিক্ষিত বাঙালির সাথে জর্জ টমসনের সাক্ষাৎ হয়। বাঙালিদের সঙ্গে নিয়ে তিনি জমিদার সমিতির সমান্তরালে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করেন। তাঁর ধারণা ছিল যে, নবগঠিত প্রতিষ্ঠানটি ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটির একটি সহযোগী সংগঠন হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু পরিশেষে এটি একটি আলাদা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি’ নামে আবির্ভূত হয়। তবে সংগঠনটি ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি ও ভারত সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখে। বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটির ঘেষিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যাবলি ছিল; ভারতীয় জনগণের মধ্যে সুনাগরিকের গুণাবলি গড়ে তোলা, তাদের মনে ব্রিটিশ শাসনের অবস্থা ও নিজেদের ন্যায্য অধিকারসমূহ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং ইংল্যান্ডের শাসনকর্তা সার্বভৌম রাজা বা রাণী ও সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের সাথে সঙ্গতি রেখে শান্তিপূর্ণ ও আইনানুগভাবে তা আদায়ের জন্য সচেষ্ট হওয়া।

কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী নয় এমন সকল প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এর সদস্যপদ উন্মুক্ত ছিল। সদস্যদেরকে সমিতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যাবলি সজ্ঞানে সমর্থন করা ছাড়াও সমিতির তহবিলে চাঁদা প্রদার অথবা দান করতে হতো। জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান নেওয়ায় অভিজাত ভূস্বামীগণ নিজেদেরকে এ সংগঠন থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে দূরে সরিয়ে রাখেন। সমিতির সম্পাদক নিজস্ব মঞ্চ থেকে এবং সংবাদপত্রের মাধ্যমে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত, জমিদার এবং নীলকরদের তীব্র সমালোচনা করতে শুরু করেন।

সোসাইটির প্রথম ১৫-সদস্যের নির্বাহী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন চারজন ইউরোপিয়ান ও এগারজন ভারতীয়। তাঁদের মধ্য থেকে জর্জ টমসন প্রেসিডেন্ট, জি.এফ রেমফ্রাই ও রামগোপাল ঘোষ ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং প্যারীচাঁদ মিত্র এর সম্পাদক ছিলেন। তারাচাঁদ চক্রবর্তী, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, ব্রজনাথ ধর, কৃষ্ণমোহন ব্যানার্জী, হরি মোহন, গোবিন্দচন্দ্র সেন, চন্দ্রশেখর দেব, শ্যামাচরণ সেন ও সাতকড়ি দত্ত প্রমুখ ছিলেন কমিটির বাঙালি সদস্যবৃন্দ। এঁদের সকলেই ইয়ং বেঙ্গল গ্রুপের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

সোসাইটির মূল কাজ ছিল আমলাতন্ত্রের সঙ্গে ‘লবিং’ করা এবং সরকারের নিকট বিভিন্ন আবেদনপত্র পেশ করা। সরকারি অফিসমূহে ভারতীয়দের নিয়োগ বৃদ্ধি ও বিচার বিষয়ক সংস্কারের সনির্বন্ধ অনুরোধ জানিয়ে সরকারের নিকট বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি অনেক আবেদনপত্র পেশ করেন। ভারতীয়দের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ প্রদান ও নিবন্ধন বিভাগে সংস্কার সাধন এ প্রচেষ্টারই ফল বলে মনে করা হয়। ভারতে অন্যান্য রাজনৈতিক দলসমূহের উত্থানে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করলেও বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি অথবা জমিদারি সমিতিদ্বয়ের মধ্যে কোনটিই খুব বেশি কিছু অর্জন করতে পারে নি। উভয় সংগঠণের কার্যক্রমই ১৮৫০ সালের মধ্যে নিস্তেজ হয়ে যায়।  [বি.আর খান]