বুগরা খান

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:৩০, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

বুগরা খান লখনৌতির গভর্নর (১২৮১-১২৮৭ খ্রি.) এবং পরবর্তীতে একই রাজ্যের স্বাধীন সুলতান (১২৮৭-১২৯১ খ্রি.) ছিলেন। দিল্লির সুলতান গিয়াসউদ্দীন বলবন এর কনিষ্ঠ পুত্র বুগরা খান প্রথমে সামানা ও সনমের গভর্নর নিয়োজিত হন। তুগরল খানের বিদ্রোহ দমনের জন্য সুলতান যখন লখনৌতির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন, বুগরা খানকে তিনি তাঁর সফরসঙ্গী করেন। এই বিদ্রোহ দমনে সুলতানের প্রায় তিন বছর সময় লাগে। অবশেষে তুগরল খান নিহত হন এবং তাঁর অধিকাংশ সহযোগীকে ফাঁসি দেয়া হয়।

দিল্লির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার আগে সুলতান বুগরা খানকে লখনৌতির শাসনকর্তা নিয়োজিত করেন। তিনি অবশ্য শাহজাদাকে বিদ্রোহীর পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে দেন। পুত্রের বিচক্ষণতা সম্পর্কে সুলতান খুব উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন না; তাই তিনি তাঁর দুজন অভিজ্ঞ সেনাপতিকে রাজকার্যে সহায়তার জন্য লখনৌতিতে রেখে যান।

ইতোমধ্যে সুলতানের জ্যেষ্ঠপুত্র যুবরাজ মুহম্মদ মোঙ্গলদের সাথে এক সংঘর্ষে নিহত হলে সুলতান বুগরা খানকে রাজধানী দিল্লীতে ডেকে পাঠান এবং তাঁকে সালতানাতের দায়িত্ব গ্রহণ করতে বলেন। কিন্তু বুগরা খান দিল্লির সুলতান হওয়ার চাইতে বাংলার প্রাদেশিক শাসনকর্তা হিসেবে থাকাটাই অধিকতর পছন্দ করেন। এ কারণে তিনি গোপনে এবং সুলতানের পূর্বানুমতি ব্যাতীরেকেই লখনৌতির উদ্দেশ্যে দিল্লি ত্যাগ করেন। ফলে সুলতান মুহম্মদের পুত্র কায়খসরুকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন এবং এর পরেই তাঁর মৃত্যু হয়।

কায়খসরুর পর বুগরা খানের অকর্মণ্য পুত্র কায়কোবাদকে সিংহাসনে বসিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজামউদ্দীন কার্যত সকল ক্ষমতা নিজে করায়ত্ত করেন। কায়কোবাদও থাঁর অপরিণামদর্শীতার পরিচয় দিলে বুগরা খান পুত্রের নীতিবোধ জাগ্রত করার জন্য দিল্লি অভিমুখে যাত্রার সিদ্ধান্ত নেন। কায়কোবাদও পিতাকে বাধা দেওয়ার জন্য সসৈন্য অগ্রসর হন। উভয়পক্ষ সরযূ নদীর দুই তীরে সম্মুখীন হয়ে শিবির সন্নিবেশ করে। যদিও বিনাযুদ্ধেই পিতা পুত্রের মধ্যেকার সকল সমস্যার অবসান ঘটে। বুগরা খান তাঁর পুত্রকে রাজকার্য সম্পর্কে উপদেশ দেন ও রাজকাজে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন। আমীর খসরু এই ঘটনাকে তাঁর কিরান-উস-সাদাইন (দুই তারকার মিলন) গ্রন্থে স্মরণীয় করে রেখেছেন।

বুগরা খান লখনৌতিতে ফিরে এসে স্বাধীনভাবে রাজ্য শাসন করেন। জালালুদ্দীন খলজীর নেতৃত্বে সংঘটিত এক অভ্যুত্থানে ১২৯০ খ্রিস্টাব্দে কায়কোবাদ নিহত হলে দিল্লিতে বলবনের বংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। মর্মাহত বুগরা খান পুত্র রুকনুদ্দীন কায়কাউস এর উদ্দেশে সিংহাসন ত্যাগ করেন।

বুগরা খানের শাসনামল থেকে বাংলা স্বাধীন নীতি অনুসরণ করতে শুরু করে। তাঁর শাসনের গুরুত্ব সেখানেই নিহিত। সম্ভবত তিনি দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্বদিকে লখনৌতি রাজ্যের সম্প্রসারণের সূচনা ঘটান। তাঁর উত্তরসূরিদের আমলে এই ধারা অব্যাহত থাকে। তাঁর পুত্র ও উত্তরাধিকারী কায়কাউস নিজেকে মুদ্রা ও লিপিতে ’সুলতান-বিন-সুলতান’ (সুলতানের পুত্র সুলতান) হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এ থেকে অনুমান করা যায় যে, বুগরা খান কার্যত একজন স্বাধীন সুলতান ছিলেন। অন্তত তিনি পরবর্তী স্বাধীন সুলতানি আমলের ভিত্তি রচনা করেছিলেন।  [মোহাম্মদ আনসার আলী]