বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১০:৩৪, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র শিক্ষা ও সংস্কৃতিমূলক একটি প্রতিষ্ঠান। মানুষের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং বিভিন্নবিষয়ক জ্ঞান ও রুচিশীল সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার বিকাশ ঘটানো এর উদ্দেশ্য। ঢাকার ১৪ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউতে এর প্রধান কার্যালয় অবস্থিত।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সূচনা হয় ১৯৭৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর এবং এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ১৯৮০ সালের ৬ মার্চ। এটি একটি জনকল্যাণধর্মী ট্রাস্ট হিসেবে নিবন্ধীকৃত। কেন্দ্রের নয় সদস্যবিশিষ্ট ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি হচ্ছেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। অন্য চারজন ট্রাস্টি হলেন মোহাম্মদ ফরিদউদ্দিন, এ.কে.এম রফিকউদ্দিন, লুৎফর রহমান সরকার, মাহবুব জামিল, ড. ইফতেখারুজ্জমান, খন্দকার এম আসাদুজ্জামান, এম আর এম শাহ আলম সরওয়ার এবং মো. মিজারুল কায়েস। কেন্দ্রের নিজস্ব আয়, বিভিন্ন সমাজহিতৈষী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক অনুদানে এর কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। নয় তলা বিশিষ্ট বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র ভবনটিতে ১টি আর্ট গ্যালারী, ১টি নাট্যমঞ্চ, ১টি শিশু কেন্দ্র, ৩টি অডিটোরিয়াম, বিশ্ব সাহিত্যের একটি শাখা, বিশ্ববিখ্যাত সিনেমা ও ছবির ২টি আর্কাইভ, অতিথি ভবন এবং ১টি ক্যাফেটেরিয়া। কেন্দ্রের প্রধান লাইব্রেরীতে ২০০,০০০ বেশি বই রয়েছে। প্রতি বছর ১০,০০০ বেশি পাঠক লাইব্রেরীটি ব্যবহার করে থাকে। এই লাইব্রেরীর মোট সদস্য ৫৮১২ বেশি।

কেন্দ্রের কার্যক্রম  কেন্দ্রের মূল কার্যক্রম জাতীয়ভিত্তিক মানসিক উৎকর্ষ সাধন। এর আওতায় দেশের যেখানেই একসঙ্গে দুটি বা তিনটি স্কুল ও একটি বা দুটি কলেজ রয়েছে, সেখানেই কেন্দ্রের একটি শাখা স্থাপন করা হয়েছে এবং সেখানে রয়েছে বই পড়ার বিশেষ কর্মসূচি। এ কর্মসূচির আওতায় ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিবছর ন্যূনপক্ষে ১৬টি রুচিসম্মত ও উন্নতমানের বই পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। বই পড়াকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে সদস্যদের জন্য রয়েছে পুরস্কারের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা।

বই পড়ার পাশাপাশি কেন্দ্রের সদস্যরা অংশ নেয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে, যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, পঠিত গ্রন্থের ওপর আলোচনা, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, অতিথি বক্তৃতা,  সঙ্গীত শ্রবণ কর্মসূচি, মানুষ ও দেশ সম্বন্ধে জানার বিভিন্ন কর্মসূচি, পরিবেশ পরিচিতি, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ ইত্যাদি। পারস্পরিক ভাববিনিময় এবং আনন্দমুখর সহমর্মিতার এক মনোরম পরিবেশ নির্মাণই এসবের উদ্দেশ্য।

সমগ্র দেশে বিপুল সংখ্যক আলোকিত মানুষ তৈরি করে তাদের একটি সংঘবদ্ধ শক্তিতে পরিণত করার লক্ষ্যে দেশের ৫২৫টি শহরে এই কর্মসূচির শাখা গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রা স্থির হয়েছে। এযাবৎ ৪০০টি বেশি শাখা স্থাপন করা হয়েছে। এই কর্মসূচির সদস্যসংখ্যা বর্তমানে ৭২ হাজারের অধিক।

জাতীয়ভিত্তিক লাইব্রেরি কার্যক্রম  কেন্দ্রের মূল কর্মসূচির একটি হলো জাতীয়ভিত্তিক লাইব্রেরি স্থাপন করা। এই কর্মসূচির আওতাভুক্ত ইউনিটগুলি হলো: ক. কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি স্থাপন; খ. ঢাকাসহ দেশের ৪টি প্রধান শহরে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি স্থাপন এবং গ. সমগ্র দেশে সুনির্বাচিত গ্রন্থসম্বলিত ৩০০টি ছোট আকারের লাইব্রেরি স্থাপন। বর্তমানে এ ধরনের ৪০টি বেশি লাইব্রেরি রয়েছে।

প্রকাশনা কার্যক্রম  কেন্দ্র প্রকাশনা কর্মসূচির আওতায় বাংলা ভাষাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার শ্রেষ্ঠ গ্রন্থসমূহ প্রকাশ করে জনসাধারণের নিকট পৌঁছে দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে। নিম্নোক্ত তিনটি সিরিজের আওতায় গ্রন্থগুলি প্রকাশ করা হচ্ছে: ক. চিরায়ত গ্রন্থমালা এর আওতায় প্রকাশিত হচ্ছে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থসমূহের বঙ্গানুবাদ; খ. চিরায়ত বাংলা গ্রন্থমালা এর আওতায় এযাবৎ প্রকাশিত বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ গ্রন্থসমূহ প্রকাশিত হচ্ছে এবং গ. কিশোর সাহিত্য গ্রন্থমালা এর আওতায় বাংলা ভাষাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার কিশোর সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থসমূহ প্রকাশিত হচ্ছে।

শ্রবণ-দর্শন বিভাগ  শ্রবণ ও দর্শন বিভাগের মাধ্যমে কেন্দ্রের জাতীয়ভিত্তিক মানসিক উৎকর্ষ কার্যক্রমের সদস্য ছাড়াও কেন্দ্রের অন্যান্য কর্মসূচির সভ্যদেরও পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র দেখার ও শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত শোনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শ্রবণ কর্মসূচির আওতায় পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত সংগ্রহের কাজ নিয়মিতভাবে এগিয়ে চলছে। কেন্দ্রের জাতীয়ভিত্তিক মানসিক উৎকর্ষ কার্যক্রমের শাখাগুলিতেও ক্রমান্বয়ে সঙ্গীত শ্রবণ কর্মসূচি চালু করা হচ্ছে। এ বিভাগের আরেকটি শাখা হলো চলচ্চিত্র ও ভিডিও শাখা। এর আওতায় বর্তমানে নিম্নোক্ত কর্মসূচি চালু রয়েছে: ক. চলচ্চিত্র চক্র; খ. চলচ্চিত্র রসাস্বাদন (অ্যাপ্রিসিয়েশন) কোর্স এবং গ. চলচ্চিত্র উৎসব কর্মসূচি।

পাঠচক্র কার্যক্রম  যারা বিশ্বজ্ঞানের জগৎকে গভীরভাবে জানতে আগ্রহী তাদের জন্য কেন্দ্রের বড় শাখাগুলিতে জ্ঞানচর্চা ও পঠন-পাঠনের সুযোগ করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে পাঠচক্র কার্যক্রমের মাধ্যমে। এই কার্যক্রম দুরকমের: ক. বিশ্বসাহিত্য পাঠচক্র সাত বছর মেয়াদি এই পাঠচক্রে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দুশ বই পড়ার সুযোগ রয়েছে; সাহিত্য,  দর্শন, বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজবিদ্যাসহ বিশ্বজ্ঞানের সকল শাখার শ্রেষ্ঠ বইগুলির পঠন-পাঠন এই চক্রের পাঠ্যতালিকাভুক্ত; খ. পাঠচক্র কর্মসূচি এই কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষায়িত পাঠচক্রে অংশগ্রহণকারীদের চারমাসব্যাপী পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।

অনুষ্ঠান বিভাগ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর মননশীল কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রতিবছর কেন্দ্রের মিলনায়তনে আয়োজিত হয় অন্তত ৩০টি অনুষ্ঠান। এছাড়া অতিথি বক্তৃতাও আয়োজিত হয় নিয়মিত।

অন্যান্য কেন্দ্র আর যেসব কর্মসূচি পালন করছে তার কয়েকটি হলো: ক. বাঙালির চিন্তা কর্মসূচি এই কর্মসূচির আওতায় গত দুশ বছর ধরে বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ মনীষীরা শিক্ষা, ধর্ম, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি, দর্শন, শিল্প, সাহিত্য, রাজনীতি, সমাজ ইত্যাদি বিষয়ে যেসব মৌলিক চিন্তা করেছেন, সেসব সংগ্রহ করে প্রকাশ করা; খ. বিরল গ্রন্থ কর্মসূচি এটি লাইব্রেরি কার্যক্রমের একটি কর্মসূচি; বাংলা ভাষার যেসব মূল্যবান গ্রন্থ পুনর্মুদ্রণের অভাবে বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য, সেগুলিকে ফটোকপির মাধ্যমে ৫ কপি করে কেন্দ্রের মূল লাইব্রেরিতে ‘বিরল গ্রন্থ’ শাখায় সংরক্ষণ করা হয় এবং গ. ইংরেজি শিক্ষা কর্মসূচি এই কর্মসূচির আওতায় ইংরেজি সাহিত্যের ২০টি গুরুত্বপূর্ণ বই পড়ার মধ্য দিয়ে সহজ ও উপভোগ্যভাবে সম্পন্নমানের ইংরেজি শেখার ব্যবস্থা রয়েছে।  [মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস]