বিড়াল

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৬:৩১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

বিড়াল  Mammalia শ্রেণির, Carnivora বর্গভুক্ত, Felidae গোত্রের প্রাণী। এ দলে আছে নিঃসঙ্গচারী, মাংসাশী ও শিকারি শ্রেণির প্রায় ৩৪টি প্রজাতি। অধিকাংশ বিড়ালকেই দুই দলের একটিতে ফেলা যায়: বড় বিড়াল (সিংহ, বাঘ, চিতাবাঘ ইত্যাদি) এবং ছোট বিড়াল (বনবিড়াল, মেছোবিড়াল ইত্যাদি)। বিড়ালের নিকটতম আত্মীয় হায়না ও গন্ধগোকুল (civet)। কখনও কখনও অল্পবিস্তর বিড়ালের মতো স্বভাব ও আকৃতির অন্যান্য স্তন্যপায়ীকেও ‘বিড়াল’ বলা হয়। অস্ট্রেলিয়ায় ছোট বেজিসদৃশ মারসুপিয়াল (marsupial) ড্যাসিয়ুরকে ‘দেশী বিড়াল’, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে Mustelidae গোত্রের এক ধরনের স্কিন্ককে ‘সিভেট বিড়াল’ এবং রেকুন পরিবারের একটি সদস্য ক্যাকোমিসলকে সাধারণভাবে ‘অঙ্গুরিলেজি বিড়াল’ বলা হয়। অলিগোসিন যুগের শেষার্ধে প্রায় ৪ কোটি বছর আগের জীবাশ্মে বিড়াল গোত্রভুক্ত প্রাণীর নজির দেখা যায়। প্লায়োসিন যুগের শেষার্ধে প্রায় এক কোটি বছর আগে আজকের বিড়ালের প্রথম আবির্ভাব ঘটে। বিলুপ্তদের অনেকগুলি ছিল ভয়ঙ্কর দাঁতযুক্ত বিশালদেহী।

১. মেছোবিড়াল, ২. বনবিড়াল, ৩. চিতাবিড়াল

সিংহ দলে বাস করলেও বিড়ালরা সাধারণত নিঃসঙ্গচারী। শিকার ধরে চুপিসারে কাছাকাছি গিয়ে এবং দ্রুত দৌড়ে বা লাফিয়ে। জীবিত বৃহত্তম বিড়াল হলো বাঘ ও ক্ষুদ্রতমটি বনবিড়াল। বাংলাদেশে এই উভয় প্রজাতির বিড়ালই আছে। এদের দাঁত ও নখর সর্বাধিক লক্ষণীয় ও বিশেষীকৃত। এরা আঘাত ও কাটার জন্য দাঁত এবং শিকার ধরে রাখার জন্য নখর ব্যবহার করে। বিড়াল গোত্রের অনেকেই বৃক্ষারোহণে দক্ষ এবং ক্ষিপ্রগতিসম্পন্ন। আঙ্গুলে ভর দিয়ে চলে এবং পায়ের প্যাডের চারপাশে ঘন লোম থাকায় বিড়াল সতর্কভাবে পা ফেলে নিঃশব্দে শিকার ধরতে পারে। বিড়াল ছোট বড় নানা মেরুদন্ডী, প্রধানত স্তন্যপায়ী ও পাখি খায়। মাথার সামনের দুটি বড় চোখ দ্বিনেত্রীয় ও নিখুঁত দৃষ্টির জন্য অত্যুত্তম এবং ধাবন ও ঝাঁপ দেওয়ার সময় দূরত্ব নির্ধারণের জন্য অপরিহার্য। বিড়াল দিনে ভালো দেখে, তবে রাতে দেখার জন্যও চোখ অভিযোজিত। বড় বড় কান শব্দতরঙ্গ শনাক্ত করতে পারে। স্বাদ ও ঘ্রাণশক্তি বিকশিত, তবে কুকুরের তুলনায় কিছুটা কম। দীর্ঘ ও শক্ত গোঁফ স্পর্শ-সংবেদী এবং বিশেষত রাতে সক্রিয় বিড়ালের জন্য আবশ্যকীয়। ঘড়ঘড় আওয়াজ তোলার ক্ষমতা ছোট বিড়ালের একক বৈশিষ্ট্য এবং বড় বিড়ালের এই ক্ষমতা না থাকলেও তারা সগর্জনে নিজের উপস্থিতি জানাতে পারে।

পোষা বিড়াল আফ্রিকার বনবিড়ালেরই (Felis libyca) একটি জাত। এরা আজও আফ্রিকা আর দক্ষিণপশ্চিম এশিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে আছে এবং আধুনিক পোষা বিড়ালের সঙ্গে অবাধ আন্তঃপ্রজনন ঘটায়। মিশর থেকে ধীরে ধীরে পৃথিবীর অবশিষ্ট এলাকায় পোষা বিড়াল ছড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘকাল ধরে ধর্ম ও জাদুবিদ্যায় বিড়ালের এক বিশেষ ভূমিকা ছিল। মিশরীয়দের বাস্ট নামের এক বিড়াল-মাথা দেবী ছিল। মিশরে হাজার হাজার বিড়ালের মমি পাওয়া গেছে। বহুকাল থেকেই কালো বিড়াল অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার অধিকারী বলে গণ্য হয়ে আসছে। বিড়াল শিশুদের ছড়ায় ও গল্পে সুপরিচিত। হিন্দুধর্মে বিড়াল পবিত্র প্রাণী এবং বিড়াল হত্যার জন্য আছে বিড়ালের স্বর্ণপ্রতিমা দানের প্রায়শ্চিত্তের বিধি।

অস্ট্রেলীয় অঞ্চল, মাদাগাস্কার ও প্রশান্তমহাসাগরীয় দ্বীপসমূহ ছাড়া পৃথিবীর সর্বত্র ৩৪ প্রজাতির বিড়াল ছড়িয়ে রয়েছে। বিড়ালের প্রজাতিসমূহের বিস্তার দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় সর্বোচ্চ, যেখানে একটি এলাকায় একত্রে ৭ প্রজাতির বিড়াল দেখা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থানীয় বিড়াল প্রজাতির সংখ্যা ৭ এবং ইউরোপে ৪। বাংলাদেশে আছে ৮ প্রজাতি, তন্মধ্যে ৬টি বিভিন্ন ধরনের হুমকির মুখে। হুমকিগ্রস্ত ৬ প্রজাতির মধ্যে সোনালি বিড়াল, গেছোবাঘ বা লামচিতা, চিতাবাঘ ও বাঘ অতিবিপন্ন এবং বনবিড়াল ও মেছোবিড়াল বিপন্ন।

বাংলাদেশের বন্য বিড়ালের অবস্থা ও বিস্তার  বনবিড়াল/ওয়াব (Jungle Cat/Swamp Cat, Felis chaus); মেছোবিড়াল/মেছোবাঘ (Fishing Cat, Prionailurus viverrinus); চিতাবিড়াল (Leopard Cat, Prionailurus bengalensis); এই তিন প্রজাতির বিড়াল দেশের সর্বত্র বিস্তৃত। সোনালি বিড়াল (এড়ষফবহ Cat/Temminck’s Cat/Asian Golden Cat/Asiatic Golden Cat, Catopuma temmincki); Marbled Cat (Pardofelis marmorata); দেশের দক্ষিণ-পূর্ব বনাঞ্চলে বিস্তৃত। গেছোবাঘ/লামচিতা (Clouded Leopard, Neofelis nebulosa); চিতাবাঘ (Leopard/Panther, Panthera pardus); মিশ্র-চিরহরিৎ বনাঞ্চলে বিস্তৃত। বাঘ (Tiger/Bengal Tiger/Royal Bengal Tiger, Panthera tigris) সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে বিস্তৃত। [মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম]

আরও দেখুন বাঘ