বিকল্প চিকিৎসা

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:২৮, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

বিকল্প চিকিৎসা (Alternative Treatment)  বিকল্প চিকিৎসার ধারণাটি ব্যাপক ও বহুমাত্রিক। এর বহুমাত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্য অঞ্চল ও সমাজভেদে এর উপাদান, প্রয়োগ এবং ব্যবস্থাপনাগত ভিন্নতার জন্য এর কোনো সার্বজনীন সংজ্ঞা নির্ধারণ করা যায়নি। সাধারণভাবে প্রচলিত ও মূলধারার চিকিৎসার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয় এমন চিকিৎসাকে বিকল্প চিকিৎসা আখ্যা দেয়া হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিবর্তনের বিবেচনায় বিচার করলে দেখা যায় যে, বিকল্প চিকিৎসার সঙ্গে কোনো জনসমষ্টির স্বাস্থ্যচর্চার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, বিশ্বাস, জীবনযাত্রা এবং ইতিহাসের সম্পর্ক রয়েছে। ইউরোপীয় এলোপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থা, যা বর্তমান বিশ্বে মূলধারার চিকিৎসা হিসেবে গণ্য এর বাইরের সকল চিকিৎসাকে বিকল্প চিকিৎসা বলে গণ্য করা হয়।

বিকল্প চিকিৎসা একটি চিকিৎসাগত দৃষ্টিভঙ্গি এবং ধারণা যা কোনো ব্যক্তি বা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠি অতীতের ঐতিহ্য হিসেবে দীর্ঘকাল ধরে আস্থার সঙ্গে লালন করে আসছে। ইউরোপীয় এলোপ্যাথির পরিবর্তে স্বাস্থ্যসেবায় গ্রহণ করে থাকে। কারণ, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার ধারণাকে দুটি ভিন্নদৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়ে থাকে। প্রচলিত সর্বজনীন চিকিৎসা ও প্রথাগত ও ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা। বিকল্প চিকিৎসা বলতে মূলত প্রথাগত ও ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাকে বুঝানো হয়ে থাকে। যেমন চৈনিক চিকিৎসা, ভারতীয় উপমহাদেশে আয়ুর্বেদ, ইউনানী, সিদ্ধা এবং যোগ, জাপানে ক্যাম্পু ইত্যাদি। আবার আধুনিক চিকিৎসার উপশাখা হয়েও হোমিওপ্যাথ বিকল্প চিকিৎসার মর্যাদা নিয়েই টিকে আছে। আরো যতরকম জানা-অজানা চিকিৎসা পদ্ধতি পৃথিবীর দেশে দেশে আর সমাজে প্রচলিত তাদের সবই বিকল্প চিকিৎসা বলে স্বীকৃত। যেমন, আদিবাসীরদর মধ্যে প্রচলিত চিকিৎসা এবং বিভিন্ন সমাজে প্রচলিত লোক চিকিৎসা ইত্যাদি। কোনো কোনো দেশে ঐতিহ্যগত চিকিৎসা মূলধারার চিকিৎসা হিসেবেও গণ্য হয়ে থাকে তবু সর্বজনীন না হওয়ায় সেগুলো বিকল্প হিসেবেই চিহ্নিত। যেমন, চৈনিক ও কোরীয় ভেষজ চিকিৎসা।

যতরকম বিকল্প চিকিৎসা পৃথিবীর দেশে দেশে স্বাস্থ্যসেবায় প্রয়োগ করা হয়ে থাকে হোমিওপ্যাথি ছাড়া সেগুলোকে একত্রে প্রথাগত বা ঐতিহ্যগত চিকিৎসা বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়ে থাকে। প্রচলিত চিকিৎসা যেখানে রোগতত্ত্ব এবং এর ব্যবস্থাপনার উপর গুরুত্ব দেয় সেখানে বিকল্প স্বাস্থ্যব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যসুরক্ষার জন্য কতগুলো বিপরীতমুখী অন্তঃস্থ ও বহিঃস্থ ইতিবাচক এবং নেতিবাচক শক্তির ভারসাম্যকে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হয়। প্রচলিত চিকিৎসায় যেখানে রোগের সুনির্দিষ্ট কারণ চিহ্নিতকরণ এবং কোষগত পরিবর্তনের বিষয়টি মূখ্য গণ্য করা হয় সেখানে বিকল্প চিকিৎসায় ইতিবাচক ও নেতিবাচক শরীরবৃত্তীয় পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ থেকে অসুস্থতার ধারণা নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। মনে করা হয়, প্রচলিত আধুনিক চিকিৎসার মতো বিকল্প চিকিৎসা মানবশরীরকে যন্ত্রবত বিবেচনা করে না, সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে নয়, তুলনামূলক সস্তা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন কিন্তু আধুনিক চিকিৎসার মতো বিজ্ঞানসম্মত ও যুক্তির উপর নির্ভর করে না। আধুনিক চিকিৎসা যেখানে স্বাস্থ্যরক্ষার যে কোনো স্তরে নিশ্চিন্তে ও আস্থার সংগে মানুষ গ্রহণ করে সেখানে বিকল্প চিকিৎসা কেবল প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি আছে। তবু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৭৮ সাল থেকে সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার আন্দোলনে বিকল্প চিকিৎসাব্যবস্থাকে স্বাস্থ্যসেবায় প্রয়োগের জন্য সকল দেশের প্রতি স্ব স্ব দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে প্রয়োগ করার জন্য উৎসাহিত করে আসছে।

বাংলাদেশে কিছু কিছু বিকল্প চিকিৎসা আইনস্বীকৃত। সরকারের স্বাস্থ্য অবকাঠামোতে ইউনানী, আয়ুর্বেদ ও হোমিওপ্যাথ বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে স্বীকৃত এবং চর্চা সরকারি স্বাস্থ্য কাঠামোয় এসবের পরিসেবা গ্রহণের সুযোগ নগন্য হলেও সামাজিকভাবে এসব বিকল্প স্বাস্যসেবা ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এবং বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশের প্রায় ৮০ ভাগের বেশি মানুষের ইউনানী, আয়ুর্বেদ, হোমিওপ্যাথিও উপর আস্থা ওয়েছে এবং গ্রামীন জনগোষ্ঠির ৮০ ভাগ তাদের স্বাস্থ্য সেবায় এসব পদ্ধতি গ্রহণ করে থাকে। এইসব আইনস্বীকৃত চিকিৎসা পদ্ধতি ছাড়াও আরো কিছু দেশীয় চিকিৎসা পদ্ধতি সমাজে প্রচলিত আছে যেগুলো বিকল্প চিকিৎসার আওতাভুক্ত। তাছাড়া আদিবাসী এবং উপজাতীয় জনগোষ্ঠির মধ্যে প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিও বিকল্প চিকিৎসার অর্ন্তভুক্ত। শারীরিক ও মানসিক রোগমুক্তির জন্য স্থানীয় লোকচিকিৎসা, বেদে চিকিৎসা, বংশানুক্রমিক কবিরাজি, আধ্যাতিক ও বিশ্বাসগত চিকিৎসা যথা তাবিজ-মাদুলি, তান্ত্রিক ঝাড়ফুক, হুজুরের পানিপড়া, নারীদের জন্য গ্রামীণ সমাজে প্রচলিত নানারকম খনকারি, পীরের দরবার, দরগা, কোনো বিশেষ স্থানে মানত, ছদকা এগুলোর মতো এমন অনেক প্রকার চিকিৎসা রয়েছে যা স্বাস্থ্যনৃবিজ্ঞানের ভাষায় বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে যুগযুগ ধরে সমাজস্বীকৃত হয়ে টিকে আছে।  [জাহাঙ্গীর আলম]