বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৪:৪১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা (ঠাকুরগাঁও জেলা)  আয়তন: ২৮৪.১২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°৫৯´ থেকে ২৬°১২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°১০´ থেকে ৮৮°২২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ও আটোয়ারী উপজেলা, দক্ষিণে রানীশংকাইল উপজেলা, পূর্বে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য।

জনসংখ্যা ১৬৯৭৭১; পুরুষ ৮৭৯৯৭, মহিলা ৮১৭৭৪। মুসলিম ১৩৫৭২৬, হিন্দু ৩২৬৮২, বৌদ্ধ ১১১৬, খ্রিস্টান ১১ এবং অন্যান্য ২৩৬।

জলাশয় প্রধান নদী: তীরনাই, কুলিক, নাগর।

প্রশাসন বালিয়াডাঙ্গী থানা গঠিত হয় ১৮০৬ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ২ জুলাই ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৭৮ ৭৮ ১৪১০২ ১৫৫৬৬৯ ৫৯৮ ৪৬.৫ ৩৮.৫
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৭.৭২ ১৪১০২ ৭৯৬ ৪৬.৫
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আমজানখোর ১০ ৯২১৯ ১০১৫১ ৯২৬৩ ২৬.৬৭
চাড়োল ৫২ ৮০১১ ১১২৩২ ১০৪৬৬ ৪২.৮২
দুওসুও ৭৩ ৭৯৮৯ ১২৪৫৩ ১১৪৯৬ ৪৬.২০
ধনতলা ৬৩ ৮৮১০ ৯৯৯৭ ৯২০৯ ৪৩.৩৬
পাড়িয়া ৮৪ ৯২৩৪ ১০৩৮৭ ৯৭৯৩ ৩৯.০৯
বড় পলাশবাড়ী ৩১ ৯৭৫২ ১১০৪০ ১০৬৯৪ ২৭.৮৬
বড়বাড়ী ২১ ৮৪১৯ ১১৯৩৯ ১০৭৮৯ ৩৯.৫১
ভানোর ৪২ ৮৭৭৬ ১০৭৯৮ ১০০৬৪ ৪৫.৭০

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ মুগল সম্রাট শাহ্ আলমের সময়ে নির্মিত সনগাঁও তিনগম্বুজ শাহী মসজিদ, মুগল আমলে নির্মিত তিনগম্বুজ ফতেহপুর মসজিদ, হরিণমারী হাটের শিবমন্দির, ইমামবাড়া, সর্বমঙ্গলা জামে মসজিদের শিলালিপি, গড়খাঁড়ি দুর্গ, সনগাঁও দুর্গ।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি  ১৯৪৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তেভাগা আন্দোলনকালে জোতদাররা ধনতলা ইউনিয়নের ঠুমনিয়া মন্ডলপাড়া গ্রামের ৪ জন কৃষককে হত্যা করে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বেলচা ঝিগড়া গ্রামে পাকসেনারা ১৮ জন লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। এছাড়াও বড় পলাশবাড়ী ইউনিয়ন কুশলডাঙ্গী হাট সংলগ্ন তীরনাই নদীর পাশে পাকসেনারা ৯ জনকে গুলি করে হত্যা করে।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন বধ্যভূমি ১ (কুশলডাঙ্গী হাট)।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩০০, মন্দির ২৪, গির্জা ১১, মাযার ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: উদয়পুর মোহনাশ্রম।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৯.২%; পুরুষ ৪৭.৯%, মহিলা ২৯.৮%। কলেজ ৪, কারিগরি কলেজ ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৮, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৩৩, মাদ্রাসা ২৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কালমেঘ আর আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ (১৯৪০), সমিরউদ্দিন স্মৃতি মহাবিদ্যালয় (১৯৮৯), চরতা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৮), লাহিড়ী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩২), বালিয়াডাঙ্গী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৯), বালিয়াডাঙ্গী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৮৫), বালিয়াডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৪০), কালমেঘ ঈদগাহ এফআর ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৬৭)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী অনিয়মিত: চারণ, তীরনাই, নবীন।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৩৪, নাট্যদল ৩, যাত্রাদল ১, সিনেমা হল ২, খেলার মাঠ ৩২।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৯.৩৪%, অকৃষি শ্রমিক ২.৮৪%, শিল্প ০.৩৫%, ব্যবসা ৮.০৯%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৬৪%, চাকরি ২.৭৮%, নির্মাণ ০.৪৪%, ধর্মীয় সেবা ০.০৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৮% এবং অন্যান্য ৩.২৬%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৬.৪৬%, ভূমিহীন ৩৩.৫৪%। শহরে ৬৫.৭% এবং  গ্রামে ৬৬.৫২% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, ভূট্টা, আখ, আলু, সরিষা, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি পাট, কাউন, ডাল, আউশ ধান।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, জাম, কলা, তরমুজ।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার গবাদিপশু ৪১, হাঁস-মুরগি ১৫।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৫২.৫৪ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪৫৭.১ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা রাইসমিল, হাসকিং মিল, স’মিল, ফ্লাওয়ারমিল, অয়েলমিল, আইস ফ্যাক্টরি, বিস্কুট ফ্যাক্টরি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বুননশিল্প, বাঁশের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৭, মেলা ২২। লাহিড়ী হাট, কালমেঘ হাট, হরিণমারী হাট, কুশলডাঙ্গী হাট, মোড়ল হাট, পাড়িয়া হাট, হলদিবাড়ি হাট এবং আধারদিঘি নববর্ষের মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  আম, তরমুজ, আলু।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১০.৫৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.৫%, পুকুর ০.০৮%, ট্যাপ ০.২৩% এবং অন্যান্য ৪.১৯%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৫.৬১% (গ্রামে ৪.৪৫% এবং শহরে ১৮.৫৩%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২২.৬৭% (গ্রামে ২৩.৫% এবং  শহরে ১৩.৫৩%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৭১.৭২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন  সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৭, কুষ্ঠ চিকিৎসা কেন্দ্র ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৮৮ সালে অতিবৃষ্টির ফলে বড় পলাশবাড়ী ও আমজানখোর ইউনিয়নের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আরডিআরএস, কেয়ার, বালিয়াডাঙ্গী ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন। [আবু মো. ইকবাল রুমী শাহ]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।