বামাবোধিনী পত্রিকা

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:২৭, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

বামাবোধিনী পত্রিকা ১৮৬৩ সাল থেকে উমেশচন্দ্র দত্ত (১৮৪০-১৯০৭) কর্তৃক সম্পাদিত মাসিক পত্রিকা। কয়েকজন তরুণ ব্রাহ্ম নেতার সঙ্গে একত্রিত হয়ে ১৮৬৩ সালে উমেশচন্দ্র দত্ত বামাবোধিনী সভা প্রতিষ্ঠা করেন। এর লক্ষ্য ছিল বাঙালি গৃহবধূদের শিক্ষিত করে তোলা এবং তাদের মানসিক উন্নতির জন্য পুস্তক ও পত্রিকা প্রকাশ করা। ১৮৪৯ সালে বেথুন স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৮৬৩ সালে বাংলায় বালিকা বিদ্যালয়ের মোট সংখ্যা ছিল ৩৫; ছাত্রীসংখ্যা ছিল মাত্র ১১৮৩ জন। উমেশচন্দ্র ও অন্যরা পত্রিকার মাধ্যমে নারীশিক্ষা বিস্তার করতে বাঙালি পরিবারসমূহের অনুভূতি স্পর্শ করার চেষ্টা করেছিলেন। বামাবোধিনী পত্রিকা ছিল এ ধরনের পথপ্রদর্শনকারী প্রচেষ্টারই ফল।

১৮৬৩ সালের আগস্ট মাসে (বাংলা ১২৭০ সনের ভাদ্র মাসে) বামাবোধিনী  পত্রিকাটির যাত্রা শুরু হয়। যদিও ১৮৫৪ সালে  প্যারীচাঁদ মিত্র ও রাধানাথ শিকদার অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে মাসিক পত্রিকা শুরু করেন, কিন্তু তাঁরা এটি মাত্র চার বছর চালাতে পেরেছিলেন। শুরু থেকে বামাবোধিনী পত্রিকা সাফল্যের মুখ দেখে এবং অনেক উত্থান-পতনের মধ্যেও ১৯২২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ষাট বছর টিকে থাকে। শুরুতে ক্ষেত্রমোহন ও বসন্তকুমার দত্তের সহযোগিতায় উমেশচন্দ্র ৪৪ বছর এ মাসিক পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন। তাঁর পরে সুকুমার দত্ত, তারাকুমার কবিরত্ন ও অন্যরা পত্রিকাটির সম্পাদনা চালিয়ে যান।

রক্ষণশীল ও উদারবাদী উভয় সম্প্রদায়ের লেখকবৃন্দকে বামাবোধিনী তার নিজ দলে ভেড়ায়। এ পত্রিকায় ধর্ম, ন্যায়শাস্ত্র, বিজ্ঞান, ইতিহাস, পারিবারিক চিকিৎসা, শিশুদের প্রতি যত্ন নেয়া, নারীশিক্ষা ইত্যাকার অনেক বিষয়ের ওপর প্রতিবেদন ছাপা হত। সব লেখা নারীদের কেন্দ্র করে এবং তাদের অগ্রগতি অর্জনের লক্ষ্যেই নিবেদিত ছিল। শুরু থেকেই এটি দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করে যে, নারীদের জন্য যে বিষয়াবলি প্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত সেগুলি এতে আলোচিত হবে। এখানে বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয় তাদের মন থেকে সকল সন্দেহ ও কুসংস্কার দূর করে তাদেরকে সঠিক ও অপরিহার্য জ্ঞান প্রদান করা। বামাবোধিনী বাংলার ইতিহাসের সন্ধিক্ষণ প্রত্যক্ষ করেছে এবং এর পৃষ্ঠায় পরিবর্তনশীল সমাজ ও পরিবারে নারীদের ভূমিকা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। নারী নিপীড়নে যে শক্তিসমূহ স্থিরসঙ্কল্প ছিল তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ প্রকাশের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিল এ পত্রিকা।

বামাবোধিনী নারীজাতিকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করে। তারা এতে নিয়মিতভাবে লিখতেন যাঁদের অনেকে পরবর্তীকালে প্রসিদ্ধ লেখিকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এটি ছিল বাংলা ভাষায় প্রথম পত্রিকা যা নারীদের জন্য একটি ফোরামের ব্যবস্থা করে। সহজে বুঝতে পারার সুবিধার্থে এতে সরল ভাষা ব্যবহার করা হতো। যখন বামাবোধিনী আত্মপ্রকাশ করে সমাজ তখন নারীদের উন্নয়নের ব্যাপারে অত্যধিক সমালোচনামুখর ছিল; পত্রিকাটির প্রকাশ বন্ধ হওয়ার আগেই নারীরা নিজেদের অধিকারের বিষয়ে সোচ্চার হয়ে উঠেছিল। আমূল সংস্কারের পক্ষে এ পরিবর্তন আনয়নে বামাবোধিনী বিরাট ভূমিকা পালন করে।  [ইন্দ্রজিৎ চৌধুরী]