বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৯:৫৩, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট মৎস্যচাষ পরিকল্পনা, সমন্বয় ও গবেষণার জন্য ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি স্বায়ত্তশাসিত জাতীয় গবেষণা সংস্থা। ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও জনবল সংগ্রহ ও উন্নয়ন অবকাঠামো গড়ে তোলার পর যথার্থ কাজ শুরু হয়েছে ১৯৮৬ সাল থেকে।

ইনস্টিটিউটের প্রধান লক্ষ্য গোটা জলজ জীবসম্পদের উন্নয়ন ও সর্বোত্তম ব্যবহার সম্পর্কিত মৌলিক ও ফলিত গবেষণা পরিচালনা; উন্নত মাছচাষ ও ব্যবস্থাপনার সাশ্রয়ী, স্বল্প-শ্রমঘন, পরিবেশ অনুকূল প্রযুক্তি উদ্ভাবন; চিংড়িসহ বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মৎস্যসম্পদ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের প্রযুক্তি উদ্ভাবন; এবং প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা।

মহাপরিচালক এ ইনস্টিটিউটের প্রধান। বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি বোর্ড অব গভর্নরের উপর ইনস্টিটিউট পরিচালনা, প্রশাসন ও তদারকির দায়িত্ব ন্যস্ত। ইনস্টিটিউটের সদর দফতর রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার উত্তরে ময়মনসিংহে অবস্থিত। সদর দফতর ছাড়াও সংস্থার চারটি গবেষণা স্টেশন রয়েছে: স্বাদুপানির মাছচাষ গবেষণার জন্য ময়মনসিংহের স্বাদুপানির স্টেশন (Freshwater Station); নদীর মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের জন্য

বাংলাদেশে সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ ও প্রযুক্তি স্টেশন

চাঁদপুরে অবস্থিত নদী-স্টেশন (Riverine Station); স্বল্পলোনা পানির মৎস্য ও চিংড়ি গবেষণার জন্য খুলনার পাইকগাছায় অবস্থিত স্বল্পলোনা পানির স্টেশন (Brackishwater Station) এবং সমুদ্রে মৎস্যচাষ ও সংগ্রহ, উৎপন্ন পণ্য-উন্নয়ন ও গুণমান নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক গবেষণার জন্য কক্সবাজারে অবস্থিত সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ ও প্রযুক্তি স্টেশন (Marine Fisheries and Technological Station)। অধিকন্তু আছে দুটি সাবস্টেশন একটি রাঙ্গামাটিতে, হ্রদের মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য এবং অন্যটি সান্তাহারে প্লাবনভূমির বাস্তুতন্ত্র সমীক্ষার উদ্দেশ্যে। প্রত্যেকটি স্টেশনেই আছেন একজন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, যাঁর ওপর স্টেশনের গবেষণা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ন্যস্ত। গবেষণা কার্যক্রমের ব্যয়ভার বহন করে বাংলাদেশ সরকার, IDA, USAID, IDRC এবং অন্যান্য সংস্থা।

স্বাদুপানির স্টেশনের ৪০ হেক্টরের চত্বরটি ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্নিকটে অবস্থিত। এই স্টেশনে আছে ০.০৪-০.০৬২ হেক্টর আয়তনের ১১৮টি নিষ্কাশনযোগ্য পরীক্ষামূলক পুকুর এবং বছরে ৩০ কোটির বেশি পোনা-উৎপাদনক্ষম একটি সুসজ্জিত ও অত্যাধুনিক কার্প-হ্যাচারি।

চাঁদপুরের নদী-স্টেশনের প্রায় ১৭.২ হেক্টর জমিতে আছে ০.১২-০.৩৭ হেক্টর আয়তনের ৩৬টি স্থায়ী পুকুর, একটি হ্যাচারি এবং নদীতে জরিপকার্য ও পরীক্ষামূলকভাবে মাছধরার জন্য গবেষণা সরঞ্জামসহ একটি নৌযান।

খুলনার পাইকগাছায় ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত স্বল্পলোনা পানির স্টেশনের চত্বরটি ৩০.৩৫ হেক্টরের। সেখানে আছে ০.১-১ হেক্টর আয়তনের ৫২টি পরীক্ষামূলক পুকুর এবং চিংড়ি ও স্বল্পলোনা পানির মাছের জন্য একটি হ্যাচারি।

১৯৯১ সালে কক্সবাজারে প্রতিষ্ঠিত সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ ও প্রযুক্তি স্টেশনের আয়তন ৪ হেক্টর। সেখানে আছে পাঁচটি বিশেষ ল্যাবরেটরি এবং একটি অভ্যন্তরীণ ও একটি বহিস্থ সিস্টার্ন কমপ্লেক্স (cistern complex)।

বাংলাদেশে মৎস্যচাষ গবেষণার ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল তথ্যাদি নথিভুক্তির একটি আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট সদর দফতরে একটি গ্রন্থাগার ও দলিলপত্র সংরক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। গ্রন্থাগারে আছে প্রায় ২,৬০০ টি টেকনিক্যাল ও সাধারণ বইপত্র এবং ৮৩টি বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী।

ইনস্টিটিউটের নিয়মিত ও অনিয়মিত প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে গবেষণা ফলাফল, বার্ষিক প্রতিবেদন, তথ্যবার্তা, সাময়িকী, নির্দেশিকা, গবেষণা রিপোর্ট এবং সম্মেলন, সেমিনার ও কর্মশালার কার্যবিবরণী, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়েল, সম্প্রসারণ সামগ্রী, পুস্তিকা, প্রচারপত্র ও পোস্টার। ইনস্টিটিউটের গবেষণা কার্যক্রম বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা সংস্থা ও অন্যান্য দেশী ও বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে। মৎস্যচাষ উন্নয়নের প্রযুক্তি সম্প্রসারণে দেশে কর্মরত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সঙ্গেও ইনস্টিটিউট নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে।  [এস.এস হুমায়ুন কবির]

আরও দেখুন মৎস্য উৎপাদন