বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৯:১৩, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ১৯৫৯ সালের ৬৭ নং অধ্যাদেশ বলে স্থাপিত ‘পূর্ব পাকিস্তান বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন’ নামের স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ৪৮ মোতাবেক কর্পোরেশনটির নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন’ রাখা হয়। চেয়ারম্যান প্রতিষ্ঠানটির প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং এর সদর দপ্তর ঢাকায় অবস্থিত। বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম ও বিরলবসতি অঞ্চলের প্রাকৃতিক বন থেকে কাঠ সংগ্রহ এবং এভাবে খালি হওয়া জমিতে বাণিজ্যিক ও পরিবেশগত উভয় দিক থেকে মূল্যবান নির্দিষ্ট জাতের গাছের ঘন ও নিবিড় বন সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সেগুলি বন বিভাগকে প্রদান; দেশের ক্রমবর্ধমান কাঠের চাহিদা পূরণে সহায়তার লক্ষ্যে সংগৃহীত কাঠ টেকসই করার জন্য বৈজ্ঞানিকভাবে কাঠের সিজনিং ও প্রক্রিয়াজাতকরণ; পরিবেশরক্ষক গাছের ওপর নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে নিরেট কাঠের বিকল্প হিসেবে অব্যবহার্য নরম কাঠ, জ্বালানি কাঠ, কাঠের বর্জ্য ও টুকরা থেকে ভিনিয়ার্ড বোর্ড, পার্টিকল বোর্ড, ভিনিয়ার, প্লাইউড প্রভৃতি প্রস্ত্তত; পল্লী বিদ্যুতায়নে ব্যবহূত কাঠের বৈদ্যুতিক খুঁটি, অ্যাঙ্কর লগ, স্থিতিকারক খুঁটি (stabilizer pole) ও আড়খুঁটির (cross-arms) বর্ধিত চাহিদা পূরণ করে দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয়; পতিত, পাহাড়ি ও আধা-পাহাড়ি জমিতে রাবার চাষের মাধ্যমে একদিকে বনায়ন ও পরিবেশ উন্নয়নে সহায়তা এবং অন্যদিকে কাঁচা রাবার আমদানি বন্ধের জন্য রাবার উৎপাদন করে  এর চাহিদা পূরণ এবং দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচানো।

কর্পোরেশন কর্ণফুলী উপত্যকা সংরক্ষিত বন এবং সাংগু মাতামুহুরী সংরক্ষিত বন থেকে যথাক্রমে ১৯৬০ ও ১৯৬৩ সালে কাঠ সংগ্রহ শুরু করে। বর্তমানে কর্পোরেশনের যে ১২টি কাঠনির্ভর শিল্প ইউনিট রয়েছে সেগুলির অবস্থান, উৎপাদন ক্ষমতা ও উৎপাদের বিবরণ নিম্নরূপ:

শিল্প ইউনিটের ধরন                        ইউনিটের সংখ্যা অবস্থান উৎপাদন ক্ষমতা উৎপাদন/সেবা
কাঠ সংগ্রহ ইউনিট কাপ্তাই ও চট্টগ্রাম গোলাকার কাঠের গুঁড়ি = ২৫.৫০ লক্ষ ঘনফুট জ্বালানিকাঠ = ৫০০ লক্ষ ঘনফুট গোলাকার কাঠ, বাছাইকরা কাঠ ও জ্বালানিকাঠ
কাঠচেরাই, সিজনিং ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ইউনিট   কাপ্তাই, চট্টগ্রাম ও খুলনা কাঠচেরাই = ৯.৫০ লক্ষ ঘনফুটকাঠ সিজনিং = ৮০০ লক্ষ ঘনফুটকাঠ প্রক্রিয়াকরণ = ১৩.৭০ লক্ষ ঘনফুটকাঠ পালিশ = ২.৫০ লক্ষ ঘনফুট  চেরাইকৃত কাঠ, রেলওয়ে স্লিপার,বৈদ্যুতিক খুঁটি, অ্যাঙ্কর লগ, স্থিতিকারক খুঁটি,আড়খুঁটি, কেবল- ড্রাম, প্রভৃতি।
কাঠ সিজনিং এবং বাক্স- পেটরা তৈরির ইউনিট  ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা কাঠচেরাই = ৪.৫০ লক্ষ ঘনফুটকাঠ সিজনিং = ৫০ হাজার ঘনফুটদরজা ও জানালা = ৯ লক্ষ ঘনফুটআসবাবপত্র = ৫৫ হাজার ঘনফুট  চেরাইকৃত কাঠ, দরজা ও জানালা, আসবাবপত্র ও সিজনকৃত কাঠ ।
আসবাবপত্র তৈরির ইউনিট  ঢাকা ও চট্টগ্রাম আসবাবপত্র = ৮১ হাজার ঘনফুটআসবাবপত্র ও ফ্লাশডোর = ১ লক্ষ ঘনফুট  আসবাবপত্র ও ফ্লাশডোর
পার্টিকল র্বোড এবং ভিনিয়ার তৈরির ইউনিট   চট্টগ্রাম ভিনিয়ার পার্টিকল বোর্ড = ৬৪ লক্ষ ঘনফুটভিনিয়ার = ৫২ লক্ষ ঘনফুট  ভিনিয়ার পার্টিকল বোর্ড ও ভিনিয়ার
প্লাইউড/চায়ের বাক্স  তৈরির ইউনিট   চট্টগ্রাম প্লাইউড = ৭০ লক্ষ ঘনফুটচায়ের বাক্স = ৩ লক্ষ   প্লাইউড ও চায়ের বাক্স

শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কর্পোরেশন পার্বত্য চট্টগ্রামের কাসালং, রিংখেং ও সাংগু মাতামুহুরীর সংরক্ষিত বন থেকে প্রায় ৭০,৭২৯ একর বনাঞ্চল পেয়েছে এবং এসব এলাকার কাঠ সংগ্রহ করে সেই খালি জমিতে গভীর বন সৃষ্টির জন্য বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছে। এসব বনাঞ্চল থেকে এযাবৎ সংগৃহীত কাঠের পরিমাণ প্রায় ২ কোটি ৮ লক্ষ ঘনফুট। এই কাঠ দিয়ে তৈরি রেলের স্লিপার, আড়খুঁটি, দরজা, জানালা, আসবাবপত্র, ভিনিয়ার্ড পার্টিকল বোর্ড, ভিনিয়ার, প্লাইউড, চায়ের বাক্স, কেবল-ড্রাম প্রভৃতি বিভিন্ন সরকারি ও আধা-সরকারি এজেন্সি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থা ও উন্নয়ন প্রকল্পে সরবরাহ করা হয়েছে।

এছাড়া এই কর্পোরেশনের উদ্যোগে ১৯৬২-১৯৭৯ সাল পর্যন্ত নিজস্ব ব্যয়ে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের সংরক্ষিত বন এলাকার মধ্যে প্রায় ১৩,০০০ একর জমিতে রাবার বাগান গড়ে উঠেছে। তদুপরি কর্পোরেশন বাংলাদেশ সরকার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলায় ৭টি ও বৃহত্তর সিলেট জেলায় ৪টি এস্টেটে রাবার বাগান এবং রংপুর ও চট্টগ্রামে ২টি এস্টেটে পরীক্ষামূলক রাবার বাগান গড়ে তুলেছে।

বর্তমানে বৃহত্তর চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ জেলাগুলির পতিত, পাহাড়ি ও আধা-পাহাড়ি অঞ্চলে এই কর্পোরেশনের প্রায় ৩২,৬৬৫ একর রাবার বাগান রয়েছে, আর সেখানে রাবার গাছের সংখ্যা প্রায় ৪১ লক্ষ। এভাবে কর্পোরেশন গভীর বন সৃষ্টির কাজে নিয়োজিত রয়েছে এবং কাঠ সংগ্রহের পর খালি জমি বন বিভাগকে হস্তান্তর করে বনায়নে সহায়তা করছে। তদুপরি কর্পোরেশন বেসরকারি উদ্যোক্তাদের রাবার বাগান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তাও যোগায় এবং বেসরকারি রাবার চাষীরা এ পর্যন্ত ৪০ লক্ষাধিক রাবার গাছসহ ৩৩,০০০ একর রাবার বাগান গড়ে তুলেছে। উল্লেখ্য, কর্পোরেশন যেসব প্রাকৃতিক সংরক্ষিত বন থেকে কাঠ সংগ্রহ করে, সেখানে একরপ্রতি গাছের গড় ঘনত্ব মাত্র ৯ থেকে ১০। পক্ষান্তরে, কর্পোরেশনের গড়ে তোলা রাবার এস্টেটে একর প্রতি গাছের গড় ঘনত্ব ১২৬টি। সুতরাং রাবার এস্টেটে গাছের ঘনত্ব সংরক্ষিত প্রাকৃতিক বনের তুলনায় ১২ গুণেরও বেশি। [মোঃ হাবিবুর রহমান]

আরও দেখুন বন ও বনবিজ্ঞান; বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট