বসু, রাজশেখর

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৭:৫০, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
রাজশেখর বসু

বসু, রাজশেখর (১৮৮০-১৯৬০)  লেখক, বিজ্ঞানী, অভিধান প্রণেতা। ১৮৮০ সালের ১৬ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার বামুনপাড়া গ্রামে মাতুলালয়ে তাঁর জন্ম; পৈতৃক নিবাস নদীয়া জেলার উলা গ্রামে। পিতা দার্শনিক পন্ডিত চন্দ্রশেখর বসু ছিলেন দ্বারভাঙ্গা রাজ এস্টেটের ম্যানেজার।

রাজশেখর দ্বারভাঙ্গা রাজ স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৮৯৫), পাটনা কলেজ থেকে এফএ (১৮৯৭) এবং  প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে রসায়ন ও পদার্থবিদ্যায় অনার্সসহ বিএ (১৮৯৯) ও রসায়নে (১৯০০) এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯০২ সালে বিএল ডিগ্রি লাভ করে তিনি কিছুদিন আইন ব্যবসায় নিয়োজিত ছিলেন। পরে তিনি আচার্য  প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠিত ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস কোম্পানিতে যোগদান করেন (১৯০৩)। দক্ষতা ও সৃজনশীলতা গুণে একসময় তিনি এই কোম্পানির পরিচালক পদে উন্নীত হন। কোম্পানিতে গবেষণার মাধ্যমে রাজশেখর কেমিস্ট্রি ও ফিজিওলোজির মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে এক নতুন পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন। ১৯৩২ সালে অবসর গ্রহণ করলেও তিনি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত উপদেষ্টা হিসেবে বেঙ্গল কেমিক্যালের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

রাজশেখর চাকরি এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার পাশাপাশি বাংলা  অভিধান ও  পরিভাষা রচনায় মনোনিবেশ করেন। ১৯০৬ সালে গঠিত জাতীয় শিক্ষা পরিষদে তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। তিনি ১৯৩৫ সালে  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত বাংলা বানান সংস্কার সমিতি এবং ১৯৪৮ সালে সরকার গঠিত পরিভাষা সংসদের সভাপতি নির্বাচিত হন।

রাজশেখর বসু বাংলা সাহিত্যে রসরচনার জন্য খ্যাতিমান ছিলেন। লেখক হিসেবে তিনি ‘পরশুরাম’ ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন। ১৯২২ সালে এ ছদ্মনামে তাঁর ‘শ্রীশ্রীসিদ্ধেশ্বরী লিমিটেড’ ব্যঙ্গ রচনাটি প্রকাশিত হয়। তীব্র ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ শিল্পিত ভঙ্গিতে প্রকাশের অনাবিল ক্ষমতা ছিল তাঁর। এছাড়া সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কার এবং যাবতীয় সঙ্কীর্ণতার বিরুদ্ধে তিনি বেশ কিছু মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা মোট একুশ। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: রম্য-রচনা গড্ডলিকা (১৯২৪), কজ্জলী (১৯২৭), হনুমানের স্বপ্ন (১৯৩৭), গল্পকল্প (১৯৫০); গল্প কৃষ্ণকলি (১৯৫৩), আনন্দীবাঈ (১৯৫৭); প্রবন্ধ লঘুগুরু (১৯৩৯), ভারতের খনিজ (১৯৪৩), কুটিরশিল্প (১৯৪৩), বিচিন্তা (১৯৫৫); অনুবাদ মেঘদূত (১৯৪৩), বাল্মীকি রামায়ণ (১৯৪৬), মহাভারত (১৯৪৯), হিতোপদেশের গল্প (১৯৫০) ইত্যাদি। তাঁর চলন্তিকা (১৯৩৭) বাংলা ভাষায় বহুল প্রচলিত একখানি জনপ্রিয় অভিধান।

বিজ্ঞান ও সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ রাজশেখর জগত্তারিণী স্বর্ণপদক (১৯৪০), রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৫৫), সরোজিনী পুরস্কার (১৯৫৫), সাহিত্য আকাদেমী পুরস্কার (১৯৫৮) ও পদ্মভূষণ (১৯৫৬) উপাধি লাভ করেন। ১৯৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৯৫৮ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধি (ডিলিট) প্রদান করে। ১৯৬০ সালের ২৭ এপ্রিল কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়।  [আইয়ুব হোসেন]