বড়াইগ্রাম উপজেলা

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৯:৫৫, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

বড়াইগ্রাম উপজেলা (নাটোর জেলা)  আয়তন: ২৯৯.৬১ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°১০´ থেকে ২৪°২১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°০১´ থেকে ৮৯°১৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে গুরুদাসপুর ও নাটোর সদর উপজেলা, দক্ষিণে আটঘরিয়া ও ঈশ্বরদী উপজেলা, পূর্বে চাটমোহর উপজেলা, পশ্চিমে লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৪৪৮২১; পুরুষ ১২৫৩৯৯, মহিলা ১১৯৪২২। মুসলিম ২২৮২০৫, হিন্দু ১০২৯৬, বৌদ্ধ ৬২৯০, খ্রিস্টান ১৩ এবং অন্যান্য ১৭। এ উপজেলায় পাহাড়ি, মুন্ডা, ওরাওঁ, মাহাতো প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় বড়াল ও মরা বড়াল নদী এবং পাঙ্গিয়ার দিঘি উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন বড়াইগ্রাম থানা গঠিত হয় ১৮৬৯ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১৫২ ১৮২ ১৮০৭২ ২২৬৭৪৯ ৮১৭ ৫৩.৫ ৪০.৬
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৪.৬৮ ১৮০৭২ ১২৩১ ৫৩.৫১
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
গোপালপুর ৩৫ ৭০৩৮ ১১৫৬৬ ১১৩৪৫ ৪৪.৪০
চান্দাই ২৩ ৮১৪২ ৯৯৩১ ৯২৮৯ ৩৩.৯৩
জোনাইল ৫৯ ৯৭৯০ ১৫০৮৯ ১৪৯০১ ৪০.২৩
জোয়াড়ী ৪৭ ১০২৭৮ ২০৬৫০ ১৯৬৪০ ৪৪.৬৭
নগর ৮৩ ১২৪৯৪ ১৯৩৪৯ ১৮১১৬ ৩৭.৭৩
বড়াইগ্রাম ১১ ১৩৬৭২ ২৪৬১৭ ২৩৩৬৭ ৪২.৩২
মাঝগাঁও ৭১ ১২৩২৬ ২৪১৯৭ ২২৭৬৪ ৪৩.৯৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ নগর ইউনিয়নের তাম্রশাসন (৪১৫-৪৫৫), প্রাচীন পর্ণশর্বরী মূর্তি, জোয়ারি ইউনিয়নের মুগল দুর্গ, কালীমন্দির, দুর্গা মন্দির, শিব মন্দির (১২১২ বঙ্গাব্দ), হারোয়ার প্রাচীন জয়কালী মন্দির, আহমদপুরে নবাবী আমলের মসজিদ, বড়াইগ্রাম ইউনিয়নের প্রাচীন জমিদার বাড়ি ও শিবমন্দির, নোয়াবড়ি  গ্রামে সোনা পীরের দরগাহ, চান্দাই ইউনিয়নের সাঁতৈল রাজপ্রাসাদ, মাঝগাঁও ইউনিয়নের প্রাচীন গুনাইহাটি মসজিদ ও ফারসি শিলালিপি।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের ৩ মে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী বনপাড়া মিশন শরণার্থী শিবিরের ৮৫ জন নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ১, স্মৃতিস্তম্ভ ১।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ২৭৪, মন্দির ৮, গির্জা ৪।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪১.৬১%; পুরুষ ৪৪.৭৪%, মহিলা ৩৮.৩৫%। কলেজ ১৮, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৫, কারিগরি স্কুল ও কলেজ ৫, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কেন্দ্র ৪, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮১, মাদ্রাসা ৪৩। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বড়াইগ্রাম ডিগ্রি মহাবিদ্যালয় (১৯৭০), বনপাড়া ডিগ্রি কলেজ (১৯৮৫), রাজাপুর ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৫), মৌখাড়া মহিলা ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৬), বনপাড়া কৃষি ও কারিগরি কলেজ (২০০০), বড়াইগ্রাম পাইলট হাইস্কুল (১৯৫৪), রাজাপুর হাইস্কুল (১৯৫৪), সেন্ট লুই উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৯), সেন্ট যোশেফ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৩), আহমদপুর এম এইচ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৮৫), দাসগ্রাম সিদ্দিকীয়া আলিয়া মাদ্রাসা (১৯৪৫), ধনাইদহ ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৫৭)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২, প্রেসক্লাব ১, ক্লাব ৫৩, সিনেমা হল ৩।

দর্শনীয় স্থান আটাই গ্রামের ১৫০ একর দিঘি, মুঘল দুর্গ (জোয়ারী), সাঁতৈল রাজপ্রাসাদ (চান্দাই), বনপাড়া মিশন (১৯৩০), বোর্নি রোমান ক্যাথলিক মিশন (১৯৪৯)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৩.৭০%, অকৃষি শ্রমিক ২.৭২%, শিল্প ১.০৩%, ব্যবসা ৯.৩১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৫৮%, চাকরি ৪.৪০%, নির্মাণ ০.৭২%, ধর্মীয় সেবা ০.১৩%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৩২% এবং অন্যান্য ৪.০৯%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৭.৭২%, ভূমিহীন ৪২.২৮%। শহরে ৪৬.৪৩% এবং গ্রামে ৫৮.৬০% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আখ, গম, সরিষা, হলুদ, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি মিষ্টি আলু, কাউন, যব, খেজুর, চীনাবাদাম।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপে, পেয়ারা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ২, হ্যাচারি ৭।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১০৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১০ কিমি, কাঁচারাস্তা ৬১০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, মহিষের গাড়ি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা বরফকল, চালকল।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, রৌপ্যশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, সূচিশিল্প, নকশি কাঁথা, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ, কাঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৮, মেলা ৭। মৌখাড়া বাজার, বনপাড়া বাজার, মেরীগাছা হাট ও রাজাপুর হাট এবং জানিতলা বারুনী ও গঙ্গাস্নান মেলা, লক্ষ্মীকোল চড়ক ও দশমী মেলা, নগর ও ধনাইদহ চৈত্র সংক্রান্তি চড়কের মেলা, দ্বারিকুশী ও জোনাইল পৌষ মেলা ও বনপাড়া বৈশাখী মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, কলা, পেঁপে, খেজুর গুড়।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২১.২৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ  রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯২.১৩%, ট্যাপ ০.২৮%, পুকুর ০.১% এবং অন্যান্য ৭.৪৯%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৫.১৫% (শহরে ৫৬.৭৫% এবং গ্রামে ৩৩.৪৭%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৯.৯৮% (শহরে ২৯.৮০% এবং গ্রামে ৫১.৫৫%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ১৪.৮৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৪, ক্লিনিক ২৭, মিশন হাসপাতাল ২।

এনজিও আশা, প্রশিকা, ব্র্যাক।  [মো. এন্তাজ উদ্দিন]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বড়াইগ্রাম উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।