বটব্যাল, উমেশচন্দ্র বিদ্যালঙ্কার

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:১৯, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

বটব্যাল, উমেশচন্দ্র বিদ্যালঙ্কার (১৮৫২-১৮৯৮)  সাহিত্যিক, ম্যাজিস্ট্রেট। ১৮৫২ সালের ৩০ আগস্ট হুগলি জেলার অন্তর্গত খানাকুলের সন্নিকটে রামনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম দুর্গাচরণ বটব্যাল। তাঁর পিতামহ রামকানাই ছিলেন তান্ত্রিক সাধক। তিনি ’জগদীশ্বরী’ নামে এক যন্ত্র তৈরি করে এর মাধ্যমে ইষ্টদেবতার অর্চ্চনার এক ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। পরে তাঁর এ তান্ত্রিক সাধনা পদ্ধতি এক প্রথায় পরিণত হয়। ১৮৬৮ সালে উমেশচন্দ্র রামনগর গ্রামের অন্তর্গত রাধানগরে প্রতিষ্ঠিত খানাকুল-কৃষ্ণনগর ইংরেজি-সংস্কৃত বিদ্যালয় হতে প্রথম বিভাগে এন্ট্রাস পরীক্ষা পাস করে বৃত্তি লাভ করেন। তিনি ১৮৭০ সালে সংস্কৃত কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এফএ এবং ১৮৭৩ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে বিএ পাস করেন।  ১৮৭৪ সালে তিনি সংস্কৃত কলেজ থেকে এমএ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৮৭৬ সালে তিনি প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি লাভ করেন।

এমএ পাস করার পর তিনি নড়াইল ইংরেজি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদে যোগদান করেন। ১৮৭৭ সালের আগস্ট মাসে তিনি স্ট্যাটুটরি সিভিল সার্ভিসের জন্য মনোনিত হন। স্ট্যাটুটরি সিভিল সার্ভিসের অধীনে তিনি ১৮৯১ সালে হতে  বীরভূম, বাঁকুরা, মালদহ, হাওড়া, বগুড়া প্রভৃতি স্থানে ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করেন।

১৮৯৩ সালেল ২৩ জুলাই রাজা বিনয়কৃষ্ণ দেবের বাড়িতে প্রথম ’বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’ প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন এর নাম ছিল-’দি বেঙ্গল একাডেমি অব লিটারেচার’। উক্ত একাডেমির ১৭শ অধিবেশনে (২৬.১১.১৮৯৩) উমেশচন্দ্রকে অন্যতম সভ্য নির্বাচিত করা হয়। একাডেমির কার্যকলাপে ইরেজিবহুলতার কারণে কতিপয় সভ্য আপত্তি করেন। তাছাড়া একাডেমি অব লিটারেচার-এ নাম সম্পর্কে অনেক আপত্তিমূলক বক্তব্য উপস্থাপিত হয়। একারণে ১৮৯৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি উমেশচন্দ্র বটব্যালের প্রস্তাবানুসারে একাডেমি অব লিটারেচারের প্রতিশব্দস্বরূপ ’বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’ নাম গৃহীত হয় (১৮.০২.১৮৯৪)।

মালদহে অবস্থানকালে তিনি শান্ডিল্য গোত্রজ ব্রাক্ষ্মণগণের পূর্বপুরুষ ভট্টনারায়ণকে প্রদত্ত রাজা ধর্ম্মপালের একটি তাম্রশাসন আবিষ্কার করেন। এর পাঠোদ্ধার করে টীকাটিপ্পনীসহ তিনি ইংরেজিতে এশিয়াটিক সোসাইটির জার্ণালে ও বাংলায় ’সাধনা’ পত্রিকায় প্রকাশ করেন।

উমেশচন্দ্রের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য সাংখ্য-দর্শন (১৯০০), বেদ-প্রবেশিকা (১৯০৫), প্রেমশক্তি ও জননী (১৯২২)। গবেষণা জার্নালে তাঁর অনেক রচনার মধ্যে বিশেষভাবে  উল্লেখযোগ্য ’রিলিজিয়ন শব্দের মানে কি’? (সাহিত্য ১৩০০, মাঘ), ’ধর্ম্মপালের তাম্রশাসন’ (সাহিত্য ১৩০১, বৈশাখ), ’গৌরাঙ্গ-চরিত’ (সাহিত্য ১৩০৩, অগ্রহায়ণ), ’বিজ্ঞান ও বেদ’ (সাহিত্য ১৩০৮, বৈশাখ), ’নূতন তাম্রশাসন’ (সাধনা ১৩০১, বৈশাখ), ’চন্ডীদাসের কবিতাস্বাদন’ (ভারতী ১৩০৩, কার্ত্তিক), ’হরিনামের শব্দতত্ত্ব’ (সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা, ১৩০৪, তয় সংখ্যা)। তাছাড়া তিনি সাহিত্য পত্রিকায় বেশসংখ্যক বৈদিক প্রবন্ধ লিখেছেন। উক্ত প্রবন্ধমালাতে বৈদিককালের আর্য সমাজচিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। সাংখ্য-দর্শন-এ তাঁর ব্যুৎপত্তি ছিল। তাঁর এ পর্যায়ের প্রবন্ধ পড়ে রবীন্দ্রনাথ একপত্র মাধ্যমে তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এবং জানিয়েছেন কবি স্বয়ং তাঁর একজন ভক্ত পাঠক।

উমেশচন্দ্র বটব্যাল মৌয়াট পদক লাভ করেন। তাছাড়া সংস্কৃত শাস্ত্রে গভীর ব্যুৎপত্তির কারণে সংস্কৃত কলেজ থেকে তাঁকে ‘বিদ্যালঙ্কার’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৮৯৮ সারের ১৬ জুলাই বগুড়ায় তাঁর মৃত্যু হয়।  [শামীমা আক্তার]