বঙ্গাল

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:১৮, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

বঙ্গাল সম্ভবত প্রাচীন বাংলার সুপরিচিত ভৌগোলিক একক বঙ্গ-এর অংশ। উচ্চারণগত দিক থেকে বঙ্গ-এর সঙ্গে প্রায় অভিন্ন বঙ্গাল-এর সর্বপ্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় রাষ্ট্রকূট রাজা তৃতীয় গোবিন্দের নেসারি তাম্রশাসনে (খ্রি. ৮০৫)। এখানে সমসাময়িক পাল রাজা ধর্মপালকে বঙ্গাল-এর রাজা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিরুমুলাই লিপিতে উল্লেখ রয়েছে যে, রাজা রাজেন্দ্র চোল ১০২১-২৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় যুদ্ধাভিযান পরিচালনা করেন এবং ঐ প্রসঙ্গে বঙ্গালদেশ-এর রাজা গোবিন্দ চন্দ্রের নাম উল্লিখিত হয়েছে। বঙ্গালদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে সেদেশে বৃষ্টি-বাদল কখনোই থামে না। বাংলার অন্যান্য ভৌগোলিক এককের (দন্ডভুক্তি, উত্তর-রাঢ় এবং দক্ষিণ-রাঢ়) সঙ্গে যেভাবে বঙ্গাল-এর উল্লেখ করা হয়েছে, তা থেকে মনে হয় যে, ভাগীরথীর পূর্বপার্শ্বেই এই ভূখন্ড অবস্থিত এবং বঙ্গ ও সমতটের চন্দ্র রাজবংশের অধীন ছিল।

বারো থেকে চৌদ্দ খ্রিস্টাব্দের অনেক লিপি ও সাহিত্যিক রচনার মধ্যে বঙ্গাল-এর উল্লেখ পাওয়া যায়। চর্যাচর্যবিনিশ্চয় গ্রন্থে ভুসুক পা’র একটি শ্লোকে (খ্রি. বারো/ তেরো শতক) ‘বঙ্গ’ এবং ‘বঙ্গালি’ উভয়েরই উল্লেখ আছে। ডাকার্ণব-এ (খ্রি. বারো শতক) বঙ্গাল ও হরিকেল-এর উল্লেখ পাওয়া যায়। নয়চন্দ্র সুরি-র হাম্মিরকাব্যে (খ্রি. পনেরো শতক) বঙ্গ ও বঙ্গাল-কে দুইটি পৃথক ভৌগোলিক সত্তা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। লামা তারনাথ ভঙ্গাল (বঙ্গাল নয়)-কে রাঢ় ও বরেন্দ্র হতে সম্পূর্ণ পৃথক বলে উল্লেখ করেছেন। মানিকচন্দ্র রাজার গানে (সম্ভবত খ্রি. সতেরো ও আঠারো শতক) একটি প্রচলিত কলি হলো ‘ভাটি হইতে আইল বঙ্গাল লম্বা লম্বা দাড়ি’ - এখানে বঙ্গালকে ভাটি অঞ্চলের একটি এলাকা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা গঙ্গা-মোহনার পাড়ের গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের নিচু সমতলভূমিকেই বোঝায়। এসব লিপি ও সাহিত্যিক সূত্র বঙ্গাল-এর অবস্থান সম্পর্কে যেমন পরিষ্কার কোন ধারণা দেয় না, তেমনি পরোক্ষভাবে এটি সমগ্র বঙ্গ, নাকি বঙ্গের একটি অংশ ছিল, সে সম্পর্কেও কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব নয়।

আবুল ফজল (খ্রি. ষোল শতক) তাঁর ‘বাঙ্গালা্হ’ - (‘বঙ্গ’+আল) নামের ব্যাখ্যায় বঙ্গ-এর সাথে বঙ্গাল-কে অভিন্ন বিবেচনা করেছেন। আধুনিক গবেষক ডি.সি. সরকার বঙ্গাল শব্দটির উৎপত্তিতে বঙ্গ-এর সাথে প্রাকৃত প্রত্যয় ‘আল’ যোগ করেছেন, কারণ তাঁর মতে বঙ্গাল ছিল বঙ্গের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ/জেলা। গ্রিয়ারসন মত প্রকাশ করেছেন যে, বঙ্গাল এসেছে ‘বঙ্গ+আলয়’ থেকে এবং বঙ্গদের বাসভূমি অর্থে। সুকুমার সেন বলেন, বঙ্গাল এসেছে বঙ্গপাল থেকে (বঙ্গে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী)। তবে বঙ্গাল নামের উদ্ভবের কোন ব্যাখ্যাটি সঠিক সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়।

তবে এটা প্রমাণিত যে, বিভিন্ন উৎসে বঙ্গ ও বঙ্গাল নির্বিচারে ব্যবহূত হয়েছে। কখনও কখনও একই সাথে এদের উল্লেখ করা হয়েছে। দক্ষিণ ভারতে বঙ্গাল শব্দটি প্রথম চালু হয়। দক্ষিণ ভারতের উৎকীর্ণ লিপি থেকে জানা যায় যে, বঙ্গাল শব্দটি ব্যবহূত হতো বঙ্গ এলাকা অর্থে, বঙ্গের অন্তর্ভুক্ত কোন পৃথক ইউনিট হিসেবে নয়। যদিও অনেক পন্ডিত মনে করেন, (যেমন: আর.সি মজুমদার) ‘বঙ্গাল’ বঙ্গ থেকেই উদ্ভূত, সম্ভবত ‘বঙ্গাল’ বঙ্গেরই অংশবিশেষ যা বঙ্গের সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে (দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব অংশে) অবস্থিত ছিল।  [আবদুল মমিন চৌধুরী]

গ্রন্থপঞ্জি  DC Sircar, Studies in the geography of Ancient and Medieval India, Delhi , 1971; RC Majumdar, History of Ancient Bengal, Calcutta , 1974 (Reprint); Amitabh Bhattacharyya, Historical Geography of Ancient and Early Mediaeval Bengal, Calcutta , 1977.