বগুড়া সদর উপজেলা

Banglapedia admin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১০:১০, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

বগুড়া সদর উপজেলা (বগুড়া জেলা)  আয়তন: ১৭৬.৫৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৪১´ থেকে ২৪°৫৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°১৬´ থেকে ৮৯°৩০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে শিবগঞ্জ (বগুড়া) উপজেলা, দক্ষিণে শাজাহানপুর উপজেলা, পূর্বে গাবতলী, পশ্চিমে কাহালু উপজেলা।

জনসংখ্যা ৫৫৫০১৪; পুরুষ ২৮৮০৮৪, মহিলা ২৬৬৯৩০। মুসলিম ৫২১৩০৩, হিন্দু ৩৩০০২, বৌদ্ধ ৫৫, খ্রিস্টান ৬২২ এবং অন্যান্য ৩২।

জলাশয় প্রধান নদী: করতোয়া, ইছামতি। নুরাইল বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন ১৯৮৩ সালের ১ ডিসেম্বর বগুড়া সদর উপজেলা গঠিত হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১১ ৯৩ ১২২ ৩৫০৩৯৭ ২০৪৬১৭ ৩১৪৩ ৭২.২ ৫৪.৪
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৫১.৭৬ ১৮+২ (আংশিক) ১১১ ৩৫০৩৯৭ ৬৭৭০ ৭২.২
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার(%)
পুরূষ মহিলা
এরুলিয়া ২১ ৪০০১ ১৩৮১৮ ১৩৩৫১ ৬৬.৪
গোকুল ৩৪ ২৯৮৪ ১৪০৬৭ ১৩৩৬৫ ৫৪.৮
নামুজা ৬০ ৪১৭২ ১১৯২০ ১১৮১০ ৪৫.৬
নিশিন্দারা ৬৪ ১১৫১ ৭৮৬৬ ৭০৬৫ ৬৮.৭
নুনগোলা ৬৯ ৩২৫২ ১০১৪২ ৯৯৫৪ ৪৪.৭
ফাঁপোড় ২৫ ২৪২২ ৫৯৩১ ৫৭৪৪ ৬৮.৩
রাজাপুর ৭৩ ৮৯৩ ৩৬৯০ ৩৪৭৮ ৪৭.৭
লাহিড়িপাড়া ৪৭ ৪৫৩৫ ১৩৬৪০ ১৩৩০০ ৫০.৬
শাখারিয়া ৮২ ১৮৭৬ ৭৩৯৬ ৭২৬০ ৪৬.৭
শেখেরকোলা ৮৬ ৩৪৯৪ ৭৪৭১ ৭২১৪ ৫০.৯
সাবগ্রাম ৭৭ ২০৫৯ ৮২২৩ ৭৯১২ ৫৫.৪

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ নবাব প্যালেস (ইংরেজ আমলে নীলকুঠি হিসেবে ব্যবহূত হতো), জৈন মন্দির, আনোয়ার পুরের সাবরুল রাজার বাড়ি।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় ক্যাপ্টেন গিয়াসের নেতৃত্বে ইপিআর, স্থানীয় পুলিশ ও ছাত্রজনতার একটি দল ২৩ জন পাকসেনাকে হত্যা করে এবং ৩টি গাড়ি ধ্বংস করে। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা জলেশ্বরীতলাস্থ ‘স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান’-এ হামলা করে প্রায় চার কোটি টাকা লুট করে এবং যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহের জন্য উক্ত টাকা মুজিবনগর অস্থায়ী সরকারের হাতে অর্পণ করেন। ২৩ এপ্রিল পাকবাহিনী ট্যাঙ্কবহর নিয়ে বগুড়া শহরে প্রবেশ করে এবং তাদের জঙ্গি বিমান থেকে শহরে বোমা নিক্ষেপ করলে ৩ জন লোকের মৃত্যু হয়। সদরের বিভিন্ন জায়গায় সংঘটিত প্রতিরোধ লড়াইয়ে ও চোরাগুপ্তা হামলায় ২০ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং অর্ধশতাধিক লোক মারা যায়। পাকবাহিনী ১৯৭১ সালে বিবিরপুকুরে ১৪ জনকে হত্যা করে এবং শহীদনগরে ৯ জন মুক্তিযোদ্ধাকে করতোয়া নদীর পাশে হত্যা করে মাটিতে পুঁতে রাখে।

বিস্তারিত দেখুন বগুড়া সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৬।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৬৭৭, মন্দির ২০, মাযার ৩, গির্জা ২। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: বগুড়া কেন্দ্রীয় বড় মসজিদ, করোনেশন স্কুল মসজিদ, কাটনার পাড়া মাদ্রাসা মসজিদ, বাদুড় তলা জামিল মাদ্রাসা জামে মসজিদ, পার্ক জামে মসজিদ (শেরপুর রোড), সাথমাথা গোহাইল রোড পুলিশ লাইন জামে মসজিদ, বায়তুন নূর জামে মসজিদ (শেরপুর রোড), বড়গোলা সেউজগাড়ী জামে মসজিদ, মদিনা জামে মসজিদ (কারমাইকেল রোড), কালিতলা হাট সাতানী মসজিদ, সূত্রাপুর ঈদগাহ মসজিদ, জৈন মন্দির, টেম্পল রোড কালী মন্দির, জলেশ্বরীতলা কালী মন্দির, ফতেহ আলী বাজার কালী ও গোবিন্দ মন্দির,  দত্তবাড়ী কালী মন্দির, ফতেহ আলী মাযার, ভাই পাগলার মাযার (ঠনঠনিয়া), চাচা পাগলার মাযার (সান্তাহার রোড), ব্যাপ্টিস্ট মিশন চার্চ, সূত্রাপুর ক্যাথলিক চার্চ।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৬৫.৭%; পুরুষ ৬৮.৬%, মহিলা ৬২.৬%। আইন কলেজ ১, মেডিকেল কলেজ ১, হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজ ১, ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ১, কলেজ ১৫, প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট ১, নার্সিং ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ১, পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট ২, ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার ৩, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ স্কুল ৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১৫। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (১৯৯২), সরকারি আজিজুল হক কলেজ (১৯৩৯), বগুড়া পৌর উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৪৪), বগুড়া জেলা স্কুল (১৮৫৪), সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কাটনার সেন্ট্রাল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯২), বগুড়া করোনেশন ইনস্টিটিউট (১৯১১), সরকারি মুস্তাফাবিয়া আলিয়া মাদ্রাসা (১৯২৫)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: করতোয়া, সাতমাথা, দূর্জয় বাংলা, আজ ও আগামীকাল, চাঁদনীবাজার; বিলুপ্তপ্রায় দৈনিক: উত্তরাঞ্চল, উত্তরবার্তা, মুক্তবার্তা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১৯, ক্লাব ১৪৬, সিনেমা হল ৫।

দর্শনীয় স্থান মহাস্থানগড়ের ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষ, ভিমের জাঙ্গাল, নবাব বাড়ি প্যালেস মিউজিয়াম, কারুপল্লী, ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশুপার্ক, শাহনেওয়াজ শিশুবাগান, উডবার্ন পার্ক।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৫.০৯%, অকৃষি শ্রমিক ২.৭৯%, শিল্প ২.৬৭%, ব্যবসা ২০.৩২%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৮.৪৭%, চাকরি ১৬.১৫%, নির্মাণ ২.৮৭%, ধর্মীয় সেবা ০.১৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৬৯% এবং অন্যান্য ১০.৭৭%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, আলু, ভুট্টা, সরিষা, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি পান।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৫১৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৫৮ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৩৭ কিমি; রেলপথ ৮ কিমি, রেলস্টেশন ২।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা পোশাকশিল্প, চামড়াশিল্প, তামাকশিল্প, টেক্সটাইল মিলস, লৌহ ও ইস্পাত কারখানা, যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা, দিয়াশলাই কারখানা, হারিকেন তৈরির কারখানা, খাদ্য ও পানীয় প্রস্ত্তত কারখানা, হিমাগার।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প, সূচিশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৮২, মেলা ৭। কালিতলা হাট, সাবগ্রাম হাট, সুলতানগঞ্জ হাট, নুনগোলা হাট এবং বারুণী মেলা ও কারবালা মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  কলা, আলু, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৮৩.০% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮২.১ %, ট্যাপ ১৬.৭% এবং অন্যান্য উৎস ১.২%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭৭.৯% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৮.৫% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩.৬% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ২১, মিশনারী হাসপাতাল ১, ডায়াবেটিক হাসপাতাল ১, দাতব্য চিকিৎসালয় ২৯, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৫, মা ও শিশুকেন্দ্র ১১, ক্লিনিক ১০১, বক্ষব্যাধি ক্লিনিক ১, স্কুল হেল্থ ক্লিনিক ১।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, ওয়ার্ল্ডভিশন, ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ।  [স্বাগত চৌধুরী]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বগুড়া সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।