ফরিদপুর উপজেলা

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৫:০৯, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

ফরিদপুর উপজেলা (পাবনা জেলা)  আয়তন: ১৩৮.৩৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°০৫´ থেকে ২৪°১৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°২২´ থেকে ৮৯°৩২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে উল্লাপাড়া ও ভাঙ্গুরা উপজেলা, দক্ষিণে আটঘরিয়া ও সাঁথিয়া উপজেলা, পূর্বে শাহজাদপুর উপজেলা, পশ্চিমে ভাঙ্গুরা ও চাটমোহর উপজেলা।

জনসংখ্যা ১২৩৯১৯; পুরুষ ৬৩৬১৮, মহিলা ৬০৩০১। মুসলিম ১১৮৯৩৫, হিন্দু ৪৯৭৮ এবং অন্যান্য ৬।

জলাশয় বড়াল, গোহালা, গুমানী ও চিকনাই নদী এবং কেনাই পাথর বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন ফরিদপুর থানা গঠিত হয় ১৮৬৯ সালে। বর্তমানে এটি উপজেলা।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
৫৯ ৮৪ ২৩০৭১ ১০০৮৪৮ ৮৯৬ ৪৭.৯ ৪৬.৯
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৯.৬৩ ১৫ ১২৬৫১ ১৩১৪ ৫৬.৭
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৯.৫১ ১০৪২০ ১০৬৯ ৩৭.০
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
ডেমরা ৪২ ৩৯১২ ৮৯৮৪ ৮৪৮৮ ৪৮.৬১
পুঙ্গলী ৮৪ ৭৯২৬ ১২৮৭৩ ১২৩৯৫ ৪৩.৮৬
ফরিদপুর ৫২ ৬৫২১ ১০২৫১ ১০০৪৪ ৪৭.৯৯
বানোয়ারীনগর ১০ ৩০৬১ ৬১১৮ ৫৭৮১ ৩৮.০৫
ব্রি-লাহিড়ীবাড়ী ৩১ ৬২৫২ ৮১৯৪ ৭৫৮৮ ৫৬.৭৬
হাদল ৬৩ ৮২৭৪ ১০৬৯৫ ৯৮৫৭ ৪০.৩৭

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ ফরিদপুর জমিদার বাড়ি, চিথুলিয়ায় ঠাকুর শম্ভুচাঁদের মন্দির, ফরিদপুর থানাপাড়া জামে মসজিদ, নেসরাপাড়া মঠ, ঠাকুরবাড়িয়া মন্দির।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি এ উপজেলায় তপস্বী শম্ভুচাঁদ মল্ল (১৭৮৯-১৮৭২) গুরু সত্য ধর্ম প্রচার করেন। ১৮৭২ সালে প্রজা বিদ্রোহ সংগঠনে স্থানীয় নাগডেমরা গ্রামের দুই ভ্রাতা বাজু সরকার ও ছালু সরকার নেতৃত্ব দেন। ১৯৭১ সালের ২২ মে এ উপজেলার হাদল গ্রামে পাকসেনারা ১৫৬ জন নিরীহ লোককে হত্যা ও নারী নির্যাতন করে। এছাড়া তারা ৭০ টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে ও ব্যাপক লুটপাট চালায়। ৩০ বৈশাখ ডেমরা গ্রামে পাকসেনা ও রাজাকাররা নির্বিচারে গুলি করে প্রায় আট শতাধিক নিরীহ লোককে হত্যা করে এবং মসজিদ, মন্দির, স্কুল-মাদ্রাসা, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয় ও নারী নির্যাতন চালায়। ৪ ভাদ্র গোপালপুর গ্রামে পাকসেনারা সাতশত গ্রামবাসিকে আটক ও ২৬ জনকে হত্যা করে এবং ব্যাপক লুটপাট  ও নারী নির্যাতন চালায়। ২৭ রমজান পাকসেনারা মাজাট গ্রামের ৮ জন এবং রতনপুর গ্রামের ৩ জন নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন বধ্যভূমি ২ (কালিকাপুর ও ডেমরা)।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ১৫০, মন্দির ২৫, মঠ ১, মাযার ১, তীর্থস্থান ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: পার ফরিদপুর মসজিদ, চিথুলিয়ায় হযরত শাহ ফরিদের (রঃ) মাযার, চিথুলিয়ায় ঠাকুর শম্ভুচাঁদ আশ্রম।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৭.১%; পুরুষ ৫০.৫%, মহিলা ৪৩.৫%। কলেজ ৬, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৩, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১৪, কমিউনিটি স্কুল ১, কিন্ডার গার্টেন ৪, মাদ্রাসা ৬৬। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মোহাম্মদ ইয়াছিন ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২), বানোয়ারীনগর সি বি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১২), ডেমরা এইচ জেড উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৭), বানোয়ারীনগর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭২), বানোয়ারীনগর আলীম মাদ্রাসা (১৯০৬), হাদল ফাজিল মাদ্রাসা (১৯০৯)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: ফরিদপুর বার্তা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান  লাইব্রেরি ১৮, ক্লাব ৪২, সিনেমা হল ৩, নাট্যদল ১, নাট্যমঞ্চ ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৯.৩০%, অকৃষি শ্রমিক ২.৪৯%, শিল্প ৪.৯১%, ব্যবসা ১১.২৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৩৩%, চাকরি ৫.১৪%, নির্মাণ ০.৬৭%, ধর্মীয় সেবা ০.০৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৩১% এবং অন্যান্য ৩.৫৪%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬২.৪৯%, ভূমিহীন ৩৭.৫১%। শহরে ৩৭.১২% এবং গ্রামে ৬৮.৪৩% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, ডাল, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি নীল, কাউন, মেস্তা পাট।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১৫, গবাদিপশু ৪৬২১, হাঁস-মুরগি ২৫১, হ্যাচারি ১।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৩০.৫৮ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৩.৪৩ কিমি, কাঁচারাস্তা ১৭৮.৮৯ কিমি; নৌপথ ১৯ নটিক্যাল মাইল।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ডুলি।

শিল্প ও কলকারখানা চালকল, আটাকল, বরফকল, তেলকল।

কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প, বাঁশশিল্প, বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৫, মেলা ৩। বানোয়ারীনগর হাট এবং চিথুলিয়ার ঠাকুর শম্ভুচাঁদের আশ্রমের দোলযাত্রার মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  শুঁটকি মাছ, দুধ।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩১.৩১% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.২৯%, পুকুর ০.০৯%, ট্যাপ ০.৫০% এবং অন্যান্য ৩.১২%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ১৮.৮৬% (গ্রামে ১২.৪৪% ও শহরে ৪৬.৩০%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৭৯.২৬% (গ্রামে ৮৫.৮১% ও শহরে ৫১.৩৩%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১.৮৮% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৬, শিশু ও মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র ৬, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৪।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৭৭০ (বাংলা ১১৭৬) সালের দুর্ভিক্ষে এ উপজেলার বহু লোক প্রাণ হারায়। ১৯৮০ সালের ভূমিকম্পে এ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভূমিতে ফাটল দেখা দেয় এবং বহু জলাশয় পলিতে ভরে যায়। এছাড়া ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের বন্যায় বেশিরভাগ মানুষ পানিবন্দী হয় এবং ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও  ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, কেয়ার। [মো. হাবিবুল্লাহ]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ফরিদপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।