ফররুখ সিয়ার মসজিদ

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৪:৫৫, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

ফররুখ সিয়ার মসজিদ  লালবাগ শাহী মসজিদ নামেও পরিচিত। মসজিদটি ঢাকার লালবাগ দুর্গ এর দক্ষিণ দিকের প্রবেশ তোরণ থেকে কয়েকগজ দূরে অবস্থিত। মসজিদটি বাংলায় বিদ্যমান মুগল মসজিদগুলির মধ্যে সবচেয়ে বড়। এখানে একসঙ্গে ১৫০০ মুসল্লির স্থান সংকুলান হয়। পিতা সুবাহদার আজিম-উস-শান এর প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকায় অবস্থানকালে শাহজাদা ফররুখ সিয়ার ১৭০৩-০৬ সালের মধ্যে এ মসজিদ নির্মাণ করেন। পরবর্তীকালে কয়েক দফা মেরামত ও সম্প্রসারণের ফলে মসজিদটিকে বর্তমানে আধুনিক রূপ পরিগ্রহ করেছে। ১৮৭০ সালে খাজা আব্দুল গনির উদ্যোগে সর্বপ্রথম মসজিদটিতে সংস্কার কাজ করা হয় এবং এ সময় মসজিদের কাঠের তৈরি আদি ছাদের পরিবর্তে বর্তমানের চুন সুরকির ঢালাই ছাদ দেওয়া হয়। এরপর পাকিস্তানি আমলে একটি মসজিদের নতুন মিনার নির্মাণ করা হয়। ১৯৮০-এর দশকে মসজিদটি সম্পূর্ণভাবে মেরামত করা হয় এবং পূর্ব দিকে সমতল চুন সুরকির ঢালাই ছাদসহ বড় ধরনের সম্প্রসারণের কাজ করা হয়।

ফররুখ সিয়ার মসজিদ

মসজিদটির মূল পরিকল্পনা এখনও অবিকৃত। বাইরে থেকে এর পরিমাপ উত্তর-দক্ষিণে ৪৯.৯৯ মি এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১৬.৪৫ মি। ভেতরের দিকে এ পরিমাপ ৪৭.৮৫ মি × ১৪.৩৩ মি এবং দেওয়ালগুলি মাত্র ১.০৭ মিটার পুরু। বাইরের চারকোণের বিশাল অষ্টভুজ বুরুজগুলি ছাদের অনুভূমিক বপ্র (parapet) ছাড়িয়ে উপরে উঠে গেছে এবং আদিতে এগুলির উপর নিরেট ছত্রী ও ক্ষুদ্রাকৃতির গম্বুজ আচ্ছাদিত ছিল। দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এর ধ্বংসাবশেষ এখনও বিদ্যমান। মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ দেওয়ালের প্রত্যেকটিতে তিনটি করে খিলানযুক্ত প্রবেশদ্বার রয়েছে যা উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রসারিত তিনটি আইলের (aisle) সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল। কিবলা দেওয়ালের কেন্দ্রস্থলে একটি অর্ধ-অষ্টভুজ মিহরাব আছে। বর্তমানে এটিকে অনেক প্রশস্ত এবং সম্পূর্ণ আধুনিকীকরণ করা হয়েছে।

কিবলা দেওয়ালে মিহরাবের উভয় পার্শ্বে কিছু দূর পর পর সমদূরত্বে চারটি করে খিলানের চিহ্ন রয়েছে। কেন্দ্রীয় মিহরাবসহ এ সব খিলানের অবয়ব (সর্বমোট আটটি) বরাবর পূর্ব দেওয়ালে নয়টি প্রবেশপথ রয়েছে। কেন্দ্রীয় পথটি অপরগুলি থেকে বড়। কিন্তু বর্তমানে এ কেন্দ্রীয় প্রবেশপথটিকে ত্রিপত্র খিলানযুক্ত (triple arched) প্রবেশপথে পরিবর্তিত করা হয়েছে। পূর্বদিকের সম্মুখ ভাগের নয়টি এবং দুপার্শ্বের তিনটি করে প্রবেশপথ ইঙ্গিত দেয় যে, এক সময় মসজিদের অভ্যন্তর ভাগে অবস্থিত দুই সারি স্বতন্ত্রভাবে দন্ডায়মান স্তম্ভের সাহায্যে এর অভ্যন্তরীণ পরিসর তিনটি উল্লম্ব আইল এবং নয়টি বে’তে বিভক্ত ছিল। আদিতে প্রতি সারিতে আটটি করে স্তম্ভ ছিল, তবে বর্তমানে দুই সারিতে কেবল মাত্র চারটি করে স্তম্ভ আছে। অর্থাৎ বর্তমানে মসজিদটি তিন আইল এবং পাঁচ ‘বে’ বিশিষ্ট। মূল মসজিদটিতে কাঠের তৈরি সমতল ছাদ ছিল। বর্তমানেও ছাদটি সমতল কিন্তু চুনসুরকি দিয়ে ঢালাই করা। দুই সারি ইটের স্তম্ভ ও চার দেওয়ালের ওপর স্থাপিত ভারী লোহার বীমের (beams) উপর সমতল ছাদটি স্থাপিত। মসজিদের আদি অলংকরণের প্রায় কোন চিহ্নই এখন নেই। কেবল কেন্দ্রীয় মিহরাব কুলুঙ্গির অর্ধগম্বুজ আচ্ছাদনে মুকারনাস নকশা দেখা যায়। ভেতরের দেওয়াল আধুনিক স্প্যানিস ধাঁচের টাইলস দ্বারা আবৃত।

নান্দনিক দৃষ্টিকোণ থেকে মসজিদটির তেমন স্থাপত্যিক গুরুত্ব নেই। তবে তা সত্ত্বেও এর ভূমি নকশা এবং ছাদের নির্মাণকৌশল বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। এটি বাংলায় তিন আইলবিশিষ্ট প্রার্থনাকক্ষ সম্বলিত মুগল মসজিদের একমাত্র নিদর্শন। দৈর্ঘ্য বরাবরে বিন্যস্ত তিন আইল বিশিষ্ট মসজিদ বাংলার সুলতানি আমলে অতি পরিচিত যেমনটি, গৌড়ে অবস্থিত ছোট সোনা মসজিদ (১৪৯৩-১৫১৯) এবং বড় সোনা মসজিদ (১৫২৬) এ দেখা যায়। মুগল স্থপতিগণ এ ধারণা হয়ত সুলতানি স্থাপত্য থেকে গ্রহণ করেছিলেন। এ মসজিদের সমতল ছাদ ছিল একটি নতুন বৈশিষ্ট্য। বাংলায় সুলতানি অথবা মুগল আমলে এমন আর কোন মসজিদ নেই যার আচ্ছাদন হিসেবে ব্যবহূত হয়েছে সমতল ছাদ।  [এম.এ বারি]