ফটিকছড়ি উপজেলা

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১০:৫৭, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

ফটিকছড়ি উপজেলা (চট্টগ্রাম জেলা)  আয়তন: ৭৭৩.৫৫ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৩৫´ থেকে ২২°৫৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৩৮´ থেকে ৯১°৫৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, দক্ষিণে হাটহাজারী ও কাউখালী (রাঙ্গামাটি) উপজেলা, পূর্বে রামগড়, মানিকছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি ও রাউজান উপজেলা, পশ্চিমে মিরসরাই ও সীতাকুন্ড উপজেলা।

জনসংখ্যা ৪৪১৮৬৩; পুরুষ ২২৬৩১৬, মহিলা ২১৫৫৪৭। মুসলিম ৩৮৫২২৪, হিন্দু ৪৫৯১৬, বৌদ্ধ ১৯১, খ্রিস্টান ৯৩৬৫ এবং অন্যান্য ১১৬৭। এ উপজেলায় ত্রিপুরা, চাকমা, মারমা ও খিয়াং প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: ধুরং।

প্রশাসন ফটিকছড়ি থানা গঠিত হয় ১৯১৮ সালে। বর্তমানে এটি উপজেলা।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ২০ ১০২ ২০৬ ৩৬৫৫০ ৪০৫৩১৩ ৫৭১ ৪৮.৪ ৪২.৭
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২২.০৩ ৩৬৫৫০ ১৬৫৯ ৪৮.৪
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আব্দুল্লাহপুর ৪ ৫২৯ ৩১১৪ ২৮৯৫ ৫৪.৯৮
কাঞ্চননগর ৫২ ১৪৬১২ ১১৫৩৯ ১১৩০৯ ২১.২৬
জাফরনগর ৪৭ ১৫৬২ ৮৫২০ ৭৩০৩ ৭০.৬৪
দাঁতমাড়া ২৩ ১২৩৬৭ ১৯৯১৪ ১৮৭৬৪ ৩৩.৫৬
দৌলতপুর ৩৮ ২৮৭১ ১২৪৬৮ ১২১৯৫ ৫৮.৮৪
ধর্মপুর ২৮ ৩৭১৯ ১১১৪৫ ১১৬১৪ ৬১.৭৫
ধুরং ৩৩ ১৯৭২ ৯৮৮১ ৯৬৫০ ৪৯.৭৮
নানুপুর ৬১ ১২০৩১ ২২৮১২ ১৬১২২ ৫১.১৬
নারায়ণহাট ৬৬ ১৪৮০০ ১৪৩১৭ ১৩৮৬৯ ৩১.২৪
পাইন্দং ৭১ ৭২০৯ ১০৯৫১ ১০৬১২ ৩৬.৫০
বক্তাপুর ১৪ ১১৩৬ ৪৮৬৭ ৫৪২০ ৬০.৯১
বাগানবাজার ৯ ৪৭২৫১ ১৮৫৪৯ ১৭৬৮৯ ২৮.৬৮
ভোজপুর ১৯ ১৩৩১১ ১৪৩৮৭ ১৩৫৪৫ ৩৫.৪৬
রাঙ্গামাটিয়া ৭৬ ৭২০৯ ৮২৭৫ ৮৭৪৪ ৪৬.৮৫
রোসাংগিরি ৮০ ১৭২৩ ৫৫৭৯ ৫১৯৮ ৫৪.৪৮
লেলাং ৫৭ ১১০৬২ ৮৩৪১ ৮৭৮০ ৫১.৮০
সমিতির হাট ৯০ ২৬০১ ৭৮৬১ ৮৭৮০ ৫১.৩২
সুন্দরপুর ৯৫ ২৫৯৯ ৯০৬৪ ৯৫১২ ৪.৩০
সূয়াবিল ৮৫ ১৭৮১০ ১৪২৮৭ ১৩৩০৭ ৩৭.৩৮
হারুয়ালছড়ি ৪২ ১৪৭৭২ ১০৪৪৫ ১০২৩৯ ২৮.১২

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ কোম্পানি টিলা, আহসানউল্লাহ গোমস্তার মসজিদ, কোটেরপাড় বৌদ্ধবিহার, আব্দুল্লাহপুর বৌদ্ধবিহার, কালীবাড়ি মন্দির (নানুপুর)।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের মার্চে এম আর সিদ্দিকী, মেজর জিয়াউর রহমান, জোনাল কমান্ডার মির্জা আবু মনসুর এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা রামগড়ে মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্প স্থাপন করেন। ট্রেনিং নেওয়ার জন্য চট্টগ্রামের  মুক্তিযোদ্ধারা ভারতে যেত ফটিকছড়ি হয়ে এবং ট্রেনিং নিয়ে ফিরত একই পথে। এ কারণে ফটিকছড়িকে চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবেশদ্বার বলা হয়। এ উপজেলার নানুপুর গ্রামের আবু সোবহান স্কুলের মাঠে ছিল শরণার্থী শিবির। মুক্তিযুদ্ধে ফটিকছড়ির প্রায় ১৫০০ মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেন।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ৪ (লেলাং চা বাগান, দরবার শরীফ, বাগানবাজার, দাঁতমাড়া)।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৫৭০, মন্দির ৫০, প্যাগোডা ৮, মাযার ৩।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৩.২%; পুরুষ ৪৬.২%, মহিলা ৪০.০%। কলেজ ৬, উচ্চ বিদ্যালয় ৪৪, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২১৭, মাদ্রাসা ১৭৭। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ফটিকছড়ি ডিগ্রি কলেজ (১৯৭০), ফটিকছড়ি করোনেশন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১২), মাইজভান্ডার আহমদিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, হাইদচকিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৬), আব্দুল হাদী ইনস্টিটিউশন (১৯৩২), লতিফুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৩), নানুপুর আবু সোবহান উচ্চ বিদ্যলয় (১৯৪২), ধুরং খুলশী লায়ন্স উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৩), ফটিকছড়ি জামেউল উলুম ফাজিল মাদ্রাসা (১৯০৪), জামেয়া আরাবিয়া নছিরুল ইসলাম মাদ্রাসা (১৯১২), নানুপুর সুন্নিয়া মাদ্রাসা (১৯২৮)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী মাসিক: ফটিকছড়ি বার্তা, ফটিকছড়ি সংবাদ, জীবনবাতি, দাওয়াতুল হক।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, মিলনায়তন ১, পার্ক ১, সিনেমা হল ১, কমিউনিটি সেন্টার ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৫.৮৮%, অকৃষি শ্রমিক ৫.৩৭%, শিল্প ০.৮%, ব্যবসা ১৩.৩৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.২৯%, চাকরি ১৪.৪৪%, নির্মাণ ০.৯২%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১২.১৬% এবং অন্যান্য ১৪.৩৮%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৬.১২%, ভূমিহীন ৫৩.৮৮%। শহরে ৪৪.৭৭% এবং গ্রামে ৪৬.২৫% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, চা, রবার, আলু, পিঁয়াজ, রসুন, ডাল ও শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি আখ, তামাক, তরমুজ।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেঁয়ারা, লেবু, কলা, বাতাবিলেবু, কুল, আমলকি, জলপাই, আতা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ২০, হাঁস-মুরগি ২৯৮, হ্যাচারী ১।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১০০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৬৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৫৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি।

কুটিরশিল্প মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, দারুশিল্প, বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৮৭, মেলা ৬। বিবির হাট, মোহম্মদ তকির হাট, মাজির হাট, কালামুন্সির হাট, দৌলতমুন্সির হাট, ফটিকছড়ি বাজার ও আজাদী বাজার এবং মাইজভান্ডার শরীফ মেলা, ওরশ মেলা ও বৈশাখী মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  চা, রবার।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪৩.৮৬% (গ্রামে ৪১.৭৭% এবং শহরে ৬৬.৭২%) পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.৫৭%, পুকুর ১.৪১%, ট্যাপ ০.৫২% এবং অন্যান্য ২.৫০%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৪.২৭% (গ্রামে ৩২.৭৮% এবং শহরে ৫০.৬২%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৯.২৫% (গ্রামে ৪৯.৮০% এবং শহরে ৪৩.২৬%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৬.৪৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১০, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৭, দাতব্য চিকিৎসালয় ১।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, কারিতাস।  [তিলক বড়ুয়া রুবেল]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ফটিকছড়ি উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।