প্রাইজ বন্ড

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:১৫, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

প্রাইজ বন্ড  ১৯৭৪ সালের ১ জুন বাংলাদেশ সরকারকর্তৃক প্রবর্তিত এক ধরনের ঋণপত্র। যা স্থানীয়ভাবে সম্পদ সংগ্রহ এবং নিম্ন আয়ের লোকদের সঞ্চয়ে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে চালু করা হয়। এ স্কিমের আওতায় উল্লিখিত তারিখে ১০ টাকা মূল্যের প্রাইজ বন্ড ইস্যু করা হয়। প্রাইজ বন্ডসমূহ বাহক দ্বারা হস্তান্তরযোগ্য এবং স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে বন্ডের ধারকই এর মালিক। প্রাইজ বন্ড বিক্রয়ের মাধ্যমে সরকার জনগণের নিকট থেকে ঋণ গ্রহণ করলেও তা সুদবাহী নয়। তবে পূর্ব নির্ধারিত সময়ের ব্যবধানে অনুষ্ঠিত ড্র অনুযায়ী সকল নম্বরের বন্ডের অনুকূলে আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হয়। ফলে প্রাইজ বন্ড সুদবিহীন ঋণ হলেও খরচবিহীন ঋণ নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের এজেন্ট হিসেবে প্রাইজ বন্ড স্কিম পরিচালনা করে। প্রাইজ বন্ড বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল শাখা অফিস, বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলির অনুমোদিত শাখাসমূহ, জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো এবং দেশের সকল ডাকঘর থেকে ক্রয় করা যায়। এতদ্ব্যতীত বিদেশে যেমন সংযুক্ত আরব আমিরাতে জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে ১৯৭৯ সালের নভেম্বর থেকে এবং যুক্তরাজ্যে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১৯৮০ সালের অক্টোবর থেকে প্রাইজ বন্ড বিক্রয়ের ব্যবস্থা চালু করা হয়। ১৯৯৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ১০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজ বন্ডের মোট ৮২টি সিরিজ বাজারে ছাড়া হয় এবং একই তারিখে এগুলির পুঞ্জীভূত নীট বিক্রয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৬০ মিলিয়ন টাকা। ৩০ জুন ১৯৯৫ পর্যন্ত দ্বি-মাসিক ভিত্তিক একক সাধারণ পদ্ধতিতে ১০ টাকা মূল্যের প্রাইজ বন্ডের মোট ১১০টি ড্র অনুষ্ঠিত হয়। ড্র-গুলির জন্য প্রদত্ত পুরস্কারের পরিমাণ ছিল: ১ম পুরস্কার ৫০,০০০ হাজার টাকা (প্রতি সিরিজের জন্য একটি); ২য় পুরস্কার ১০,০০০ হাজার টাকা (প্রতি সিরিজের জন্য একটি); ৩য় পুরস্কার ১,০০০ হাজার টাকা (প্রতি সিরিজের জন্য ৪টি); ৪র্থ পুরস্কার ৫০০ টাকা (প্রতি সিরিজের জন্য ৪টি); এবং ৫ম পুরস্কার ১০০ টাকা (প্রতি সিরিজের জন্য ৯০টি)। ১৯৯৫ সালের ১ জুলাই থেকে ১০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজ বন্ডের বিক্রয় বন্ধ করে ঐ তারিখ থেকে সেগুলি পর্যায়ক্রমে বাজার থেকে প্রত্যাহার করা শুরু হয়। ৩০ জুন ২০০০ পর্যন্ত ১০ টাকা মূল্যের প্রাইজ বন্ডের বকেয়া স্থিতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮.১ মিলিয়ন টাকা।

দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৯৮৫ সালে ৫০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজ বন্ড বিক্রয়ার্থে বাজারে ছাড়া হয়। ৩০ জুন ১৯৯৫ পর্যন্ত এ বন্ডের মোট ২৯টি সিরিজ ইস্যু করা হয় এবং একই তারিখে ৫০ টাকা মূল্যের বন্ডের বিক্রয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৭০ মিলিয়ন টাকা। ১০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজ বন্ডের মতো ৫০ টাকা মূল্যের ড্র দ্বি-মাসিক ভিত্তিতে একক সাধারণ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়। তবে তাদের পুরস্কারের অর্থের পরিমাণ ছিল ভিন্নতর। ৫০ টাকা মূল্যমানের পুরস্কারের অর্থের পরিমাণ ছিল ১ম পুরস্কার ২,৫০,০০০ টাকা (প্রতি সিরিজের জন্য ১টি); ২য় পুরস্কার ৫০,০০০ হাজার টাকা (প্রতি সিরিজের জন্য ১টি); ৩য় পুরস্কার ৫,০০০ হাজার টাকা (প্রতি সিরিজের জন্য ৪টি); ৪র্থ পুরস্কার ২,৫০০ টাকা (প্রতি সিরিজের জন্য ৪টি) এবং ৫ম পুরস্কার ৫০০ টাকা (প্রতি সিরিজের জন্য ৯০টি)। ৫০ টাকা মূল্যের প্রাইজ বন্ডের বিক্রয়ও ১৯৯৫ সালের জুলাই থেকে বন্ধ ঘোষণা করে একই তারিখে তা প্রত্যাহার শুরু করা হয়। ৩০ জুন ২০০০ তারিখে উল্লিখিত ৫০ টাকা মূল্যের বন্ডের বকেয়া স্থিতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫.৮ মিলিয়ন টাকা।

তৃতীয় পর্যায়ে ২ জুলাই ১৯৯৫ থেকে ১০০ টাকা মূল্যমানের নতুন প্রাইজ বন্ড বাজারে ছাড়া হয় যা অদ্যাবধি চালু রয়েছে। তবে এ সকল বন্ডের ড্র একক সাধারণ পদ্ধতিতে প্রতি ৩ মাস অন্তর অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং পুরস্কারের পরিমাণও পূর্ববর্তী বন্ডগুলির তুলনায় অধিক। ১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজ বন্ড ড্র-এর পুরস্কারগুলি ছিল যথাক্রমে ১ম পুরস্কার ১০ লক্ষ টাকা (প্রতি সিরিজের জন্য একটি); ২য় পুরষ্কার ৫ লক্ষ টাকা (প্রতি সিরিজের জন্য ১টি); ৩য় পুরস্কার ১ লক্ষ টাকা (প্রতি সিরিজের জন্য ২টি); ৪র্থ পুরস্কার ৫০ হাজার টাকা (প্রতি সিরিজের জন্য ২টি); এবং ৫ম পুরস্কার ১০ হাজার টাকা (প্রতি সিরিজের জন্য ৪০টি)। অক্টোবর ১৯৯৬ থেকে ১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজ বন্ডের প্রথম পুরস্কারের পরিমাণ ৬ লক্ষ টাকায় এবং দ্বিতীয় পুরস্কারের পরিমাণ ৩.২৫ লক্ষ টাকায় হ্রাস করা হয়। আরও শর্তারোপ করা হয় যে, কোন একটি বন্ড পরবর্তী ড্র-এর তারিখ থেকে কমপক্ষে ২ মাস পূর্বে ক্রয় করা হলেই তা ঐ ড্র-তে অন্তর্ভুক্ত হবে। ১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজ বন্ডের পুঞ্জীভূত বিক্রয়ের পরিমাণ ১৯৯৫-৯৬ সালের ১,২৪১.২ মিলিয়ন টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরের শেষে ১,৬৬৭.৩ মিলিয়ন টাকায় দাঁড়ায়। একটি নির্দিষ্ট ড্র-এর তারিখ থেকে পরবর্তী ২ বৎসরের মধ্যে ঐ ড্র-তে প্রাপ্ত পুরস্কারের অর্থ দাবি করা না হলে ঐ পুরস্কার বাতিল হয়ে যায় যা কোনক্রমেই আর পরিশোধ করা হয় না। পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রাইজ বন্ডগুলির অনুকূলে নির্ধারিত পরিমাণ পুরস্কারের অর্থ বিতরণের পর ঐ বন্ডগুলি অভিহিত মূল্যে ক্রয় করে নেওয়া হয় এবং পরবর্তী ২ বৎসর বাংলাদেশ ব্যাংকে সংরক্ষণ করা হয়। প্রাইজ বন্ডের পুরস্কারের অর্থ ৩০ জুন ১৯৯৯ পর্যন্ত আয়কর মুক্ত ছিল। ২০১১ সাল পর্যন্ত প্রাপ্ত পুরস্কারের অর্থের ওপর ২০% হারে আয়কর আরোপ করা হয়েছে।

[সৈয়দ আহমেদ খান এবং এ সামাদ সরকার]