পৃষ্ঠগড়ানো পানি

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:১৩, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

পৃষ্ঠগড়ানো পানি (Runoff Water)  নিষ্কাশন এলাকা থেকে প্রবাহিত সকল পানি বা অন্যভাবে, বর্ষণের যে অংশ ভূমিতে শোষিত হয় বা বাস্পীভূত হয় তা বাদ দিয়ে ভূমির উপর দিয়ে গড়িয়ে পানিপ্রবাহের সঙ্গে মিশে যে পানি। এ পানি কৃষি ও বসতির ক্ষতিসাধন করে বলে পানির পৃষ্ঠপ্রবাহ বাংলাদেশে একটি মারাত্মক সমস্যার কারণ। প্রথমত, পানির পৃষ্ঠপ্রবাহ পুরাতন শিলা বা ভূমিপৃষ্ঠের অবক্ষয়িত বস্ত্তর উপর পরিপক্ব মৃত্তিকা সৃষ্টি হতে বাধা প্রদান করে। দ্বিতীয়ত, এ পানিপ্রবাহ বর্ষা মৌসুমে প্রতি বছর বন্যার সৃষ্টি করে। পানির পৃষ্ঠপ্রবাহের কারণে নিচু (basin) ভূমিতে পানির তল কখনও কখনও দ্রুত বৃদ্ধি পায়। নিম্ন পুনর্ভবা পললভূমি (রাজশাহী), নিম্ন আত্রাই বেসিন (বরেন্দ্র অঞ্চল ও গঙ্গা নদী পললভূমির মধ্যে অবস্থিত নিচু এলাকা), সিলেট বেসিন, উত্তর ও পূর্ব সানুদেশীয় সমতলভূমির মধ্যস্থিত বেসিন; মধুপুর অঞ্চলের মধ্যস্থিত প্রশস্ত উপত্যকা এবং ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গা নদী পললভূমিতে অবস্থিত কোনও কোনও বেসিনের চতুর্দিকের ধানক্ষেত্রের উপর দিয়ে পানির স্থানীয় পৃষ্ঠপ্রবাহের ফলে প্লাবনের সৃষ্টি করে। ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চল ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পাহাড়ি এলাকাতে অবস্থিত বনাঞ্চলের বৃক্ষ কাটা ও ভূমিক্ষয় পানির মারাত্মক পৃষ্ঠপ্রবাহ ও বন্যার সৃষ্টি করে এবং সিলেট বেসিনের প্লাবনভূমিতে যথেষ্ট পরিমাণে পলল বয়ে নিয়ে আসে। সক্রিয় নদী খাতের নিকটবর্তী এলাকা ব্যতীত তিস্তা পললভূমিতে (রংপুর ও নিকটবর্তী অঞ্চলে) প্রধানত স্থানীয় বৃষ্টিপাত থেকে সৃষ্ট পৃষ্ঠগড়ানো পানি ও উত্থিত জলপীটের কারণে প্লাবনের সৃষ্টি হয়। ভারত ও তিববতের বিশাল আহরণ ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে হাজার হাজার কিলোমিটার অতিক্রমকারী গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নামক দুটি বড় নদীর মধ্য দিয়ে পানির পৃষ্ঠপ্রবাহের কারণে পানি নিষ্কাশনের বিঘ্ন ঘটে, ভূমি প্লাবিত হয় এবং বর্ষাকালে বাংলাদেশে বন্যার সৃষ্টি করে। এর ফলে প্রতি বছর এসব নদীর সম্মিলিত সর্বোচ্চ পঞ্চাশ মিলিয়ন কিউসেক প্রবাহিত পানির সঙ্গে দেশের বাহির থেকে প্রায় চবিবশ হাজার মিলিয়ন টন পলি বাংলাদেশে আসে। পানির প্রবাহের ফলে মধুপুর, বরেন্দ্র ও আখাউড়া অঞ্চলের গভীর লাল-বাদামি মৃত্তিকাতে অম্লত্ব সৃষ্টি হয়। পৃষ্ঠগড়ানো পানি থেকে একমাত্র লাভ হলো নদীর মোহনা, বিশেষ করে মেঘনা নদীর মোহনাতে নতুন ভূমি সৃষ্টি।

স্বল্প অনুস্রবণ হার সংবলিত শক্ত আবরণে আবৃত বা দৃঢ় সংহত মৃত্তিকাতে পৃষ্ঠগড়ানো পানির হার অধিক হয়। কৃষি জমিতে সঠিক কর্ষণ-পদ্ধতি অনুসরণ মৃত্তিকার পানি অনুস্রবণ হার ও পৃষ্ঠ নিষ্কাশন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং এর ফলে পানির পৃষ্ঠপ্রবাহ হ্রাস পায়।  [মোঃ খুরশিদ আলম ও আমিনুল ইসলাম]