পিট মৃত্তিকা

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:১১, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

পিট মৃত্তিকা (Peat Soil)  জৈব মৃত্তিকা, যাতে জৈব পদার্থের পরিমাণ ২০ শতাংশের অধিক। এসব জৈব পদার্থ বিভিন্ন মাত্রায় বিয়োজিত (decomposition) অবস্থায় থাকে। সামান্য বিয়োজিত বা অবিয়োজিত অবস্থার জৈব অবক্ষেপকে পিট এবং অধিক বিয়োজিত জৈব অবক্ষেপকে মাক (muck) বলা হয়। পিট অবক্ষেপ, বিশেষ করে এর উপরের স্তরে সঞ্চিত বিভিন্ন প্রকার গাছপালাকে শনাক্ত করা যায় কিন্তু মাক মৃত্তিকাতে বিয়োজনের মাত্রা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছায় যে উৎস গাছপালার অংশগুলোকেও শনাক্ত করা যায় না। অবক্ষেপিত গাছপালার অবশেষের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে পিট স্থূল বা সূক্ষ্ম গঠন সংবলিত হতে পারে। অন্যদিকে অতি-বিয়োজিত মাক প্রায়ই সূক্ষ্ম গঠন সংবলিত হয়।

বাংলাদেশে পিট মৃত্তিকার পরিমাণ ০.১৩ মিলিয়ন হেক্টর। এসব মৃত্তিকা গোপালগঞ্জ-খুলনা অঞ্চলের নিচু এলাকাতে পাওয়া যায়। এছাড়া পূর্বাঞ্চলীয় সুরমা-কুশিয়ারা পললভূমির কোন কোন হাওর এবং তদসংলগ্ন উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের সানুদেশীয় সমভূমিতে (Piedmont plain) স্থানীয়ভাবে উৎপন্ন পিট মৃত্তিকা দেখা যায়। এগুলো পাললিক পিট। সাধারণত মৃত্তিকা পরিলেখের উপরের ৮০ সেন্টিমিটারে অর্ধেকেরও বেশি অংশ এবং কখনও কখনও একই মৃত্তিকার বিভিন্ন স্তরে জৈব পদার্থ বিদ্যমান থাকে। গাঢ় বাদামি মাক এসব মৃত্তিকার সাধারণ উপাদান। বাংলাদেশের কৃষি-প্রতিবেশ অঞ্চল ১৪-তে অন্তর্ভুক্ত এলাকাটি শুষ্ক মৌসুমে ভিজা থাকে এবং বর্ষা মৌসুমে গভীরভাবে প্লাবিত হয়। পিট মৃত্তিকা র্অথাৎ কৃষি প্রতিবেশ অঞ্চল ১৪ মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, যশোর বাগেরহাট ও খুলনা জেলার বেশ কিছু সংখ্যক স্বতন্ত্র নিচু এলাকা দখল করে আছে। পৃষ্ঠদেশে পিট ও মাকসহ মৃত্তিকাগুলোতে সাধারণত নলখাগড়া জন্মে। এসব নলখাগড়া বৎসরে একবার কেটে ঘর ছাওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়। নিম্নমানের ভিজা পিটের ভারবহন ক্ষমতা কম। এগুলো শুকানো হলে সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে এবং অবশেষে জারণ প্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে যায়। মাক স্তরগুলো অপরিবর্তনীয়ভাবে শক্ত হয়ে কয়লা-সদৃশ পিন্ডে পরিণত হয় এবং এদেরকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এসব মৃত্তিকা চরম অম্লীয় এবং উদ্ভিদের জন্য অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান কম থাকে। যেসব স্থানে পৃষ্ঠ মৃত্তিকা এঁটেল প্রকৃতির সেখানে ব্যাপক আকারে বোরো ধানের চাষ করা যেতে পারে। নিষ্কাশন নিয়ন্ত্রণ বা পললদ্বারা ঢেকে দিয়ে মৃত্তিকা সংশোধন করা ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। পটাশিয়াম, সালফার, জিঙ্ক ও কপারের অলভ্যতাই কৃষিকাজে এসব মৃত্তিকা ব্যবহারের অন্তরায়। পিট স্তরগুলোকে বাংলাদেশের ভূ-জলে আর্সেনিক যুক্ত হওয়ার কারণস্বরূপ মনে করা হয়।  [এস. এম ইমামুল হক]