পাতাফড়িং

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৯:২৭, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

পাতাফড়িং (Leafhopper)  বিভিন্ন উদ্ভিদের পাতার রস শোষণকারী Homoptera বর্গের Cicadellidae গোত্রের অসংখ্য প্রজাতির জন্য ব্যবহূত সাধারণ নাম। আজ পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে ১৫,০০০ এর অধিক পাতাফড়িং প্রজাতির বর্ণনা হয়েছে। এদের বিভিন্ন সদস্য আকার, আকৃতি এবং রঙের বৈচিত্র্যে ভরপুর। অধিকাংশই দৈর্ঘ্যে মাত্র কয়েক মিমি, কদাচিৎ কোন কোন প্রজাতি ১৫ মিমি পর্যন্ত লম্বা হয়। ছিদ্র করার উপযোগী চারটি সুচের মতো স্টাইলেট (stylet)-এর সমন্বয়ে এদের শোষণক্ষম মুখোপাঙ্গ গঠিত। মাথার অঙ্কীয়ভাগে কিছুটা পশ্চাৎ দিক থেকে এদের সুচালো শুঁড়ের মতো মুখোপাঙ্গ বের হয়ে আসে। এদের চারটি ডানা থাকে, সামনের জোড়া কিছুটা পুরু। পিছনের জোড়া পাতলা পর্দার ন্যায়। অনেকের ডানা চমৎকার রঙে সজ্জিত। এদের শুঙ্গ বেশ খাটো, চুলের মতো। পিছনের পায়ের টিবিয়া (tibia) এক অথবা একাধিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাঁটার সারিতে সজ্জিত।

নানা ধরনের বৃক্ষ, বনভূমি, লতাগুল্ম, আগাছা, শস্যক্ষেত এবং বাগানের গাছপালাসহ সব ধরনের উদ্ভিদেই পাতাফড়িং দেখা যায়। এদের প্রায় সবাই অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে ফসলের এবং অন্যান্য অর্থকরী উদ্ভিদের ক্ষতি করে এমন ১৫০টির বেশি প্রজাতির পাতাফড়িং-এর কথা জানা গেছে। কেবলমাত্র ধানের ক্ষতিকারক প্রজাতির সংখ্যাই ২৫ এর বেশি।

পাতাফড়িং

বেশ কয়েকভাবে পাতাফড়িং উদ্ভিদের ক্ষতি করে। কতক প্রজাতি অতিমাত্রায় পোষক উদ্ভিদের পাতা থেকে রস শুষে নেবার ফলে পাতার ক্লোরোফিল নষ্ট হয়ে যায় এবং পাতা ক্রমে শুকিয়ে মারা যায়। কতক প্রজাতির আক্রমণে গাছের স্বাভাবিক শারীরবৃত্ত ব্যাহত হয়; অনেক সময় পাতার ফ্লোয়েম (phloem) এবং জাইলেম (xylem) বাহিকার ভিতর দিয়ে খাদ্যবস্ত্ত পরিবহণে বাধা সৃষ্টি হয়। বহু প্রজাতির পাতাফড়িং উদ্ভিদের রোগজীবাণুর সক্রিয় বাহক। বাংলাদেশে ধানের টুংরো (tungro) রোগ, আলুর ইয়োলো ডোয়ার্ফ (yellow dwarf), ভুট্টার স্টান্ট (maize stunt) ও ক্লোরোটিক ডোয়ার্ফ (chlorotic dwarf) এবং তামাক গাছের মোজাইক রোগগুলি পাতাফড়িং এর মাধ্যমেই এক উদ্ভিদ থেকে অন্য উদ্ভিদে সংক্রামিত হয়। কিছু প্রজাতির ফড়িং-এর আক্রমণের কারণে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি পাতা কোঁকড়ানো অবস্থা ধারণ করে।

বাংলাদেশে যেসব গুরুত্বপূর্ণ ও অতিমাত্রায় ক্ষতিকারক পাতাফড়িং-এর প্রজাতি রয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ধানের পাতার সবুজ শোষক পোকা Nephotettix virescens এবং N. nigropictus, গোলাপী মাথা পাতাফড়িং Thaia oryzivora, চায়ের সবুজ পাতাফড়িং Empoasca flavescens, আলুর পাতাফড়িং Amrasca devastans (যেটি তুলা, ঢেঁড়স এবং মরিচ গাছও আক্রমণ করে) এবং আমের পাতাফড়িং Idioscopus atkisoni, I. clypealis এবং I. niveosparsus

একটি বড় গোত্র হওয়ার কারণে Cicadellidae-কে অনেক সময় প্রায় ১৯টি উপগোত্রে ভাগ করা হয়। অধিকাংশ পাতাফড়িং-এর বছরে মাত্র একবার প্রজনন হয়, তবে কোন কোন ক্ষেত্রে দুটি বা তিনটি প্রজন্মের কথা জানা গেছে। পরিবেশ অনুকূল হলে কোন কোন প্রজাতি অল্প সময়ে অতি দ্রুত সংখ্যায় বেড়ে যেতে পারে। এতে এদের অতিমাত্রার আক্রমণের কারণে ফসলে হপারবার্ন (hopperburn) নামে পরিচিত এক বিশেষ ধরনের ক্ষতির লক্ষণ প্রকাশ পায়।  [এস.এম হুমায়ুন কবির]