পাকুন্দিয়া উপজেলা

পাকুন্দিয়া উপজেলা (কিশোরগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ১৮০.৫৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°১৫' থেকে ২৪°২৪' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩৭' থেকে ৯০°৪৬' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে হোসেনপুর ও কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা, দক্ষিণে কাপাসিয়া ও মনোহরদী উপজেলা, পূর্বে কটিয়াদি উপজেলা, পশ্চিমে গফরগাঁও উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৫০০৬০; পুরুষ ১২০৫৪৮, মহিলা ১২৯৫১২। মুসলিম ২৪৫২২৯, হিন্দু ৪৭৯০, খ্রিস্টান ২৬ এবং অন্যান্য ১৫।

জলাশয় প্রধান নদ-নদী: পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, বানার, নরসুন্দা, মঙ্গলাহাট; পদ্মকুড়ি বিল, ভরাবিল, কাহেতেরদিয়া বিল, চৈত্যকবালী বিল, বড় নালা বিল, বেজুরনালা বিল,নাওথাঘ্যা বিল দিঘা বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন পাকুন্দিয়া থানা গঠিত হয় ১৯২২ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
৭৯ ১৫০ ২৮৬০৬ ২২১৪৫৪ ১৩৮৫ ৬০.৫ ৫০.৭
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৮.২৮ ২৫ ২৮৬০৬ ১৫৬৫ ৬০.৫
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
এগারসিন্দুর ৩৮ ৬০৬৮ ১৬১২৯ ১৭৬১২ ৪৪.৫
চন্ডীপাশা ১৯ ৩৩৮৮ ১১১৬৬ ১২০০২ ৪৫.৫
চর ফরাজি ২৮ ৪১০৫ ১০৮৬৬ ১১৬৭৬ ৬০.৫
জাঙ্গালিয়া ৫৭ ৬৮১৭ ১৬২০০ ১৬৬৩৯ ৫৫.১
নারান্দি ৬৬ ৩৫৪২ ৯০৫৪ ৯৬৭৩ ৫২.০
পটুয়াভাঙ্গা ৮৫ ৬১৫৫ ১৬৩৭৪ ১৭৫১৮ ৪৫.৬
বারুদিয়া ১৫ ৪৭৪০ ১২৭৬৯ ১৪১৯৪ ৪৭.১
সুখিয়া ৯৫ ৩২০৮ ৯১৪৪ ৯৮১১ ৫৫.৭
হোসেন্দি ৪৭ ২০৬৭ ৪৯০৯ ৫৭১৮ ৬০.১

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ এগারসিন্দুর ঈসা খাঁর দুর্গ, মুগল আমলের মসজিদ।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় উপজেলা সদরে তারাকান্দি,কোদালিয়া ও কালিয়াচাপরাসহ বিভিন্ন স্থানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাক-হানাদারদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। পাক-হানাদারদের দোসর রাজাকার ও দালালসহ ২০০ জনকে হত্যা করে। মৃতদেহগুলো বর্তমান বিএডিসি ভবন সংলগ্ন স্থানে একত্রে মাটি চাপা দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখার জন্য মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম বদি ‘বীর বিক্রম’ উপাধি লাভ করেন। পাকুন্দিয়া ডিসেম্বর মাসে শত্রুমুক্ত হয়।

বিস্তারিত দেখুন পাকুন্দিয়া উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৫।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩১০, মন্দির ৪, মাযার ৪।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫১.৮%; পুরুষ ৫০.৩%, মহিলা ৫৩.১%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: পাকুন্দিয়া ডিগ্রি কলেজ (১৯৬৫), পাকুন্দিয়া আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৩), হোসেন্দি আদর্শ ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৩), জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ (১৯৬৯), কোদালিয়া এস আই উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১০), পাকুন্দিয়া আদর্শ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৮), মঙ্গলবাড়ীয়া কামিল মাদ্রাসা (১৮০২), তারাকান্দি ফাজিল মাদ্রাসা (১৯১৯)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী ত্রৈমাসিক নবঅঙ্কুর।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান  লাইব্রেরি ৭, ক্লাব ২০, সিনেমা হল ১, মহিলা সংগঠন ১, নাট্যমঞ্চ ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৬.৯০%, অকৃষি শ্রমিক ২.৮৯%, শিল্প ০.৯৩%, ব্যবসা ১০.৮০%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৩২%, চাকরি ৫.৮৬%, নির্মাণ ০.৮৫%, ধর্মীয় সেবা ০.১৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.৫০% এবং অন্যান্য ৭.৭৭%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৭.১২%, ভূমিহীন ৩২.৮৮%। শহরে ৫৬.৮৬% এবং গ্রামে ৬৭.৫৮% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, ভুট্টা, গম, আলু, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি আখ, সরিষা, মিষ্টি আলু, পাট।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপে, আনারস।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৫১, গবাদিপশু ৪৪, হাঁস-মুরগি ৬৩, হ্যাচারি ৫।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৯০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৪৫ কিমি; নৌপথ ৩ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি।

শিল্প ও কলকারখানা চিনিকল, ময়দাকল, করাতকল, ধানকল, তেলকল, বেকারি, ইটের ভাটা।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, বুননশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৪, মেলা ১। পাকুন্দিয়া বাজার ও কুদালিয়া মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, কলা, পেঁপে, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৪.৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.৮%, ট্যাপ ০.৫% এবং অন্যান্য ৩.৭%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪৫.৫% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৩.৪% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১১.১% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৮।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, কারিতাস।  [মো. জাহাঙ্গীর আলম]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; পাকুন্দিয়া উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।