পশুখাদ্য উদ্ভিজ্জ

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:০৫, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

পশুখাদ্য উদ্ভিজ্জ (Fodder plant)  যে সকল গাছপালা, বিভিন্ন ধরনের লতা, গুল্ম  প্রভৃতি গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয় তা পশুখাদ্য উদ্ভিদের আওতায় পড়ে। পশুখাদ্য উদ্ভিজ্জকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: () অশীম জাতীয়, () শীম জাতীয় () ট্রি ফডার (গাছ জাতীয়)। প্রথমোক্ত, দুই জাতের উদ্ভিদের গবাদি পশু সাধারণতঃ পাতা, কান্ড ও ফলসহ প্রায় সকল অংশই খেয়ে থাকে এবং শেষোক্ত জাতের উদ্ভিদের পাতা, কুড়ি ও নরম  কান্ড খেয়ে থাকে। বাংলাদেশে পশুখাদ্যের প্রধান উপকরণ ধানের খড় এবং অন্যান্য ডাল বা তেল ও শস্য জাতীয় উদ্ভিদের বিভিন্ন ধরনের উপজাত। সবুজ ঘাসও গবাদি পশুর জন্য অন্যতম মুখ্য উপাদান। সবুজ ঘাস, লতা-পাতা  ছাড়াও আপদকালীন সময়ে কলা গাছের পাতা, অপ্রকৃতকান্ড(Pseudostem), বাঁশের পাতা, কঁচুরিপানার পাতা ও এর ডাঁটা দেশের অঞ্চলভেদে গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে যে সকল গাছপালা, লতা-গুল্ম ব্যবহূত হয়ে থাকে, সেগুলো গবাদি পশুর জন্য সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং পশুর দেহে  আমিষ ও অাঁশ জাতীয় খাদ্য উপাদানের উৎস  হিসেবে যোগান দিয়ে থাকে। গবাদি পশুর খাদ্যের জন্য এ সকল উদ্ভিদের অভিযোজন কৌশল, উৎপাদনশীলতা অঞ্চল ভেদে ভিন্নতর হয়ে থাকে। বাংলাদেশের সব এলাকায় একই ধরনের পশুখাদ্য উদ্ভিদ জন্মে  না। কোন কোন এলাকায় শীম জাতীয় উদ্ভিদ যেমন, খেসারী, মাটি কালাই প্রচুর পরিমানে জন্মে আবার কোন কোন এলাকায় এ জাতীয় ঘাসের কোন চাষই সম্ভব নয়। সে সকল এলাকায় শীম জাতীয় অন্যান্য উদ্ভিদ এর মধ্যে গবাদি পশুর জন্য গোমটর চাষ করা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে গো-খাদ্যের চাহিদা পূরণ করার জন্য বিদেশ হতে আমদানিকৃত বেশ কিছু প্রজাতির ঘাস যেমন, নেপিয়ার  BLRI- Napier-1 (Pennisetum purpureum-Bajra), BLRI- Napier-2 (Pennisetum purpureum var. L- Arusa),  BLRI -Napier -3 (Pennisetum purpureum var. L- hybrid),  এন্ড্রোপোগন (Andropogon gyanus), পেংগোলা  (Digitaria decumbens), পারা  (Brachiara mutica), প্লেনডিডা (Setaria splendida), রোজী (Brachiaria ruziziensis),  জাম্বু (Hybrid sorghum),  গিনি (Panicum maximum), সিগনাল (Brachiaria decumbens), জার্মান (Echinoclora crousgali),  ব্যাফেল (Cenchrus ciliaris)  ডেসমোডিয়াম (Desmodium intortum),  পাসপালুম (paspalum plicatulum cv paspalum),  প্লিকাটুলুম (Paspalum plicatulum), সেন্ট্রো (Centrosema pubescens),  স্টাইলো (Stylosamthes guiannensis), ইপিল-ইপিল(Leucaena leucocephala), কুডর্জো (Tropical Kurdzo),  পিনটুই (Arachis pintoi), গ্লাইসিরিডিয়া  (Gliricidia  sepium) এবং ডুমুর (Malaysian) এবং দেশি  ঘাস হিসেবে দল ঘাস (Hymenachne psedointerruta) ও বাকসা ঘাস কৃষকের  খামারে চাষ করা হয়ে থাকে।

দল ও বাকসা ছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন এগ্রো-ইকোলজিক্যাল অঞ্চলে বিভিন্ন জাতের প্রাকৃতিক ঘাস জন্মে, যা গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক ঘাসগুলোর মধ্যে রয়েছে  চাইলা, চ্যাপড়া, মনিয়া, দূর্বা, ঝরা ধান, ঝরা ঘাস, আড়াইল, কানাইবাঁশি, কানাইলতা, উলু ঘাস, মূথা, আংটা, কাটানটে, গামারী, পুটি ঘাস, জাপানি লতা, নল ঘাস প্রভৃতি।

বাংলাদেশে চাহিদার তুলনায় গো-চারণ ভূমির অভাব রয়েছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই এর অভাব প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। এদেশে পশুখাদ্য হিসেবে কাঁচা ঘাসের চাহিদা প্রায় ৭০ মিলিয়ন মেট্রিক টন। দেশে উৎপাদন হয় মাত্র ২৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন। তাতে মোট ঘাটতির পরিমান দাড়ায় শতকরা প্রায় ৬৬ ভাগ। এই ঘাটতি মেটাতে উচ্চ ফলনশীল জাতের ঘাস উৎপাদন একান্ত প্রয়োজন।

বাংলাদেশ পশুসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট হতে সম্প্রতি ১৩টি উচ্চ ফলনশীল জাতের ঘাস মাঠ পর্যায় বিতরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে নেপিয়ার ও জাম্বো অন্যতম। ১৯৯৯ সালে এই ইনস্টিটিউট থেকে বাঘাবাড়ীতে ২ (দুই) ট্রাক নেপিয়ারের কাটিং বিতরণ করা হয়েছিল। ২০০৮ সালে উক্ত চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে ২০০ ট্রাকে। বর্তমানে বাঘাবাড়ীতে ঘাসের উৎপাদন বিপুল পরিমানে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর একটি বাজার সৃষ্টি হয়েছে। দেশের অন্যান্য স্থানেও এরূপভাবে কৃষকদেরকে ঘাস চাষে এগিয়ে আসতে হবে। ইনস্টিটিউটের একটি আর্থ-সামাজিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ঘাস চাষ অন্যান্য ফসলের উৎপাদনের চেয়ে অনেক লাভজনক। তাই উন্নত জাতের ঘাস চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা উচিৎ। [জাহাঙ্গীর আলম ও নাথু রাম সরকার]