পবা উপজেলা

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১০:০৬, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

পবা উপজেলা (রাজশাহী জেলা)  আয়তন: ২৮২.৪২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°১৮´ থেকে ২৪°৩১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°২৮´ থেকে ৮৮°৪৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে মোহনপুর ও তানোর উপজেলা, দক্ষিণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ও চারঘাট উপজেলা, পূর্বে পুঠিয়া ও দুর্গাপুর (রাজশাহী) উপজেলা, পশ্চিমে গোদাগাড়ী উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৬২২৫১; পুরুষ ১৩৬৭৯৪, মহিলা ১২৫৪৫৭। মুসলিম ২৫৪৪২০, হিন্দু ৫০২১, বৌদ্ধ ২১২৩, খ্রিস্টান ৪৬ এবং অন্যান্য ৬৪১। এ উপজেলায় সাঁওতাল, ওরাওঁ, পাহাড়িয়া ও বুনো প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় পদ্মা ও শিব নদী উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন পবা থানা গঠিত হয় ১৯৪৯ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১১ নভেম্বর ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১৮৬ ২৬৯ ২৬২২৫১ - ৯৩৫ ৪৩.৬২ -
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
দর্শনপাড়া ২৩ ৩৪৯২ ৫৯৫৯ ৫৬৯৭ ৩৯.২৮
দামকুড়া ১৫ ৪২৭৮ ৮৭৫৬ ৮২৬৮ ৪৪.০২
নওহাটা ৭১ ৯৭৪৮ ২৪৩৪৮ ২২৭১৮ ৫০.৯৬
পারিলা ৮৭ ৭৬৪০ ১৭০১১ ১৫২২৯ ৩৬.৯২
বড়গাছি ৭ ৮৮৮০ ১৭০৮৮ ১৫৯৯১ ৪২.৭৭
হড়গ্রাম ৩১ ৩৬৮০ ১৩৯৬০ ১২২০৫ ৩৮.৩৮
হরিপুর ৪৭ ৮৫৯৪ ১৩৫১৮ ১২৬৫১ ৪২.১৫
হরিয়ান ৩৯ ১৪২০৪ ২৪৭১৭ ২২০৯২ ৪৭.১৮
হুজুরিপাড়া ৫৫ ৭০২১ ১১৪৩৭ ১০৬০৬ ৪১.২৫

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ নওহাটা বাগধানী মসজিদ (১৮৩০), তরফ পারিলা মসজিদ, মিয়াপুর মসজিদ (১৫৫৮), হযরত মদন শাহ নিয়ামত উল্লাহ হুসাইন (র.) এর মাযার (বসন্তপুর), ২টি প্রাচীন বৌদ্ধ মঠ (দেবপাড়া)।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি ভারতে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার জের হিসেবে এই উপজেলার হুজুরীপাড়া সারুসা নামক গ্রামে ১৯৬২ সালে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা সংগঠিত হয়। ভারত বিভাগের ফলে ১৯৪৭-১৯৬৫ সালের মধ্যে অনেক মুসলিম পরিবার মালদহ ও মুর্শিদাবাদ থেকে এ উপজেলায় ভূমি বিনিময়ের মাধ্যমে বসতি স্থাপন করে। এলাকায় এরা বিনিময়কারী রিফিউজি হিসেবে পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় ৪ নং হরিপুর ইউনিয়নের সোনাইকান্দি গ্রামে ২৭ জন যুবককে দিয়ে পাকসেনারা একটি গণকবর খনন করে এবং পরে তাদের সবাইকে হত্যা করে গণকবরে পুতে রাখে। একই ইউনিয়নের বোলনপুর পুলিশ ক্যাম্পে পাকসেনারা অতর্কিতে হামলা চালিয়ে ক্যাম্পের পুলিশ ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করে একটি ইটের ভাটায় কবর দেয়। কসবা আখ ক্রয়কেন্দ্রের কাছে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা রাজশাহী-নবাবগঞ্জ রাস্তায় টহলরত পাকবাহিনীর একটি গাড়ি অ্যামবুশ পেতে ধ্বংস করে এবং এতে ১০/১২ জন পাকসেনা নিহত হয়। তাছাড়া উপজেলার গোদাগাড়ী হাটে যুদ্ধকালীন সময় পাকসেনারা একটি ক্যাম্প স্থাপন করে এবং সেখান থেকে পার্শ্ববর্তী গ্রামের লোকজনের ওপর অত্যাচার চালায়।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ১ (সোনাইকান্দি); বধ্যভূমি ১ (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় জোহা হলের পাশে); স্মৃতিস্তম্ভ ১ (নওহাটা কলেজ মাঠ)।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৪০০, মন্দির ৫, গির্জা ৭। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: বাগধানী মসজিদ, নওহাটা জামে মসজিদ, খড়খড়ী বারোয়ারী মন্দির, নারকেল বাড়িয়ার মুসরইল মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৩.৬২%; পুরুষ ৪৬.৮২%, মহিলা ৪.১৩%। কলেজ ৯, উচ্চ বিদ্যালয় ৩০, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৬, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৭৫, কারিগরি বিদ্যালয় ২, মাদ্রাসা ১৬। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: হাট রামচন্দ্রপুর কলেজ (হাটগোদাগাড়ী), নওহাটা মহিলা কলেজ (নওহাটা বাজার), মাসকাটাদিয়া বহুমুখী কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫২), বড়গাছা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৪৪), খড়খড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৮৫), শীতলাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৮৫), নওহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৮৫), বায়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৮৭)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান  লাইব্রেরি ১, ক্লাব ২৮, সিনেমা হল ৫, মহিলা সংগঠন ৬৪, খেলার মাঠ ৭০।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৪.৬৮%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৮৯%, শিল্প ০.৮৩%, ব্যবসা ১৪.৮৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৬.৪২%, চাকরি ৩৮.৩০%, নির্মাণ ২.৩৭%, ধর্মীয় সেবা ০.১৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২০% এবং অন্যান্য ৭.২৮%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৯.৪৬%, ভূমিহীন ৫০.৫৪%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, পাট, আলু, আখ, পিঁয়াজ, শাকসবজি, পান।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসল  কাউন, মটর, সরিষা, তিসি, অড়হর।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, পেয়ারা, লিচু।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৫০, গবাদিপশু ১৬২, হাঁস-মুরগি ৪৮, দুগ্ধ খামার ৬০, হ্যাচারি ৫।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২১৫.০৩; আধা-পাকারাস্তা ৩৩.৩২ কিমি; কাঁচারাস্তা ৩০৯.৪৯; নৌপথ ৫ নটিক্যাল মাইল;  রেলপথ ১০ কিমি। রেলস্টেশন ২ (হরিয়ান ও শীতলাই); বিমানবন্দর ১ (নওহাটা)।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা চিনিকল ১, পাটকল ১, ময়দাকল ২০, আটার কল ৪৫, তেলকল ৫, করাতকল ১২, বরফকল ১০, ওয়েল্ডিং কারখানা ৪৫, বিড়ি কারখানা ৩০, কোল্ড স্টোরেজ ৮, ইটের ভাটা ৬৬।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প ৩০, লৌহশিল্প ৪০, মৃৎশিল্প ১৫০, তাঁতশিল্প ৫০, বাঁশের কাজ ১৫০।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৯, মেলা ৩। নওহাটা, দামকুড়া, বড়গাছি ও কাটাখালী হাট এবং নওহাটা কৃষিমেলা ও মৌগাছি দুর্গাপূজা মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য চিনি, ধান, পাট, গুড়, পান, আলু, আম, কলা, পেঁপে, পেয়ারা, লিচু, শাকসবজি।

বিদ্যুতের ব্যবহার  এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিলবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩১.৭৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.৬৯%, ট্যাপ ০.৭৮%, পুকুর ০.২০% এবং অন্যান্য ২.৩৩%। এ উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬ টিতে আর্সেনিক সমস্যা বিদ্যমান।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ২১.৫৩% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৭.৭৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ৩০.৭২% পরিবারের কোন ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ইউনিট ৩, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৭, ক্লিনিক ৯৮, দাতব্য চিকিৎসালয় ৩।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, টিএমএসএস, কেয়ার, কারিতাস।  [মো. রুহুল ইসলাম]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; পবা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।