নির্বাহী

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৫:৩২, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

নির্বাহী  যেকোন আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তিনটি মূল স্তম্ভের ওপর স্থাপিত, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইনসভা। সদ্যস্বাধীন অধিকাংশ রাষ্ট্রই সংবিধান প্রণয়নকালে সরকারের নির্বাহী বিভাগের ধরন, প্রকৃতি ও ক্ষমতা সম্পর্কে সতর্ক থেকেছে। পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী ব্যবস্থা গঠনের জন্য কতিপয় অনুসরণীয় মডেল রয়েছে। বাংলাদেশ নির্বাহী ব্যবস্থা গঠনে পর্যায়ক্রমে রাষ্ট্রপতিশাসিত ও সংসদীয় মডেল অনুসরণ করেছে। ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের আইনগত ভিত্তি ছিল ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে কার্যকর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র

এ ঘোষণা আদেশের ভিত্তিতে রচিত সংবিধান রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে এক সর্বময় ক্ষমতাধর নির্বাহী সৃষ্টি করে। ক্ষমা মঞ্জুরের ক্ষমতাসহ নির্বাহী ও বিধানিক উভয় ক্ষমতাই রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত হয়েছিল। প্রয়োজনবোধে প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী নিয়োগের ক্ষমতা তার ছিল। সংসদের অধিবেশন আহবান ও তা বিলুপ্তির এবং করধার্য ও অর্থব্যয়ের একচেটিয়া ক্ষমতাও তাকে দেয়া হয়েছিল। অধিকন্তু, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে রাষ্ট্রপতি প্রয়োজনীয় যেকোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারতেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন ও যুদ্ধপরবর্তী সময়ে বিদ্যমান অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এ ঘোষণা সর্বময় ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপতির মধ্যে একটি নির্বাহী ব্যবস্থার জন্ম দেয়। মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি হন। তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে অন্তরীণ থাকায় রাষ্ট্রপতির সকল ক্ষমতা প্রয়োগ এবং কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনের জন্য উপরাষ্ট্রপতির পদ সৃষ্টি করা হয়। নতুন সংবিধান গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত উক্ত ঘোষিত সংবিধান মোতাবেক বাংলাদেশের শাসনকার্য পরিচালিত হয়েছে।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তনের পরপরই সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার যাত্রা শুরু হয়। স্বাধীনতা ঘোষণা আদেশের অধীনে বিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে তিনি অন্তবর্তীকালীন সরকারের মূল কাঠামো পরিবর্তন করে বাংলাদেশের অস্থায়ী সংবিধান আদেশ ১৯৭২ শীর্ষক রাষ্ট্রপতির আদেশ দ্বারা সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। এই ডিক্রির বলে সৃষ্ট অস্থায়ী সংবিধানে ব্রিটিশ ওয়েস্টমিনিস্টার পদ্ধতির সরকারের সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিল, যে সরকারে থাকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে একটি মন্ত্রিপরিষদ এবং একজন আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধান, রাষ্ট্রপতি। এ আদেশবলে শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি থেকে প্রধানমন্ত্রী হন এবং নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত সংবিধানের ৮ ধারামতে বিচারপতি আবু সায়ীদ চৌধুরী রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হন, যিনি সংসদের সদস্য ছিলেন না।

১৯৭২ সালের সংবিধানের অধীনে নির্বাহী ১৯৭২ সালের সংবিধানের অধীনে নির্বাহী বিভাগ হচ্ছে সংসদীয় নির্বাহী বিভাগ, যার মূল বৈশিষ্ট্য ছিল নির্বাহী ও আইনসভার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মিশ্রণ। সংবিধানের ৪র্থ ভাগে স্থান পেয়েছে রাষ্ট্রপতির যোগ্যতা, তাঁর পদের মেয়াদ, রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়সহ নির্বাহী বিভাগ, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ সম্পর্কে আলোচনা। নির্বাহী বিভাগ ছিল দুটি অংশে বিভক্ত, পরোক্ষভাবে নির্বাচিত একজন আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধান এবং ক্ষমতাবান ও নির্বাচিত একজন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রিপরিষদসহ যৌথভাবে জাতীয় সংসদের নিকট দায়বদ্ধ, যেমনটি আছে ব্রিটিশ সংসদীয় ব্যবস্থায়।

১৯৭২ সালের সংবিধান নিশ্চিত করেছিল যে, রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর কাজে হস্তক্ষেপ করবেন না। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচন ও নিয়োগকে সহজ করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীকে সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হতে হবে এবং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মন্ত্রিপরিষদের অন্যান্য সদস্য নিয়োগ লাভ করবেন। প্রকৃত নির্বাহী ক্ষমতা ছিল প্রধানমন্ত্রীর এবং তাকে সহায়তা করত মন্ত্রিপরিষদ। মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রেত সময়কালের জন্য নিজ নিজ পদে বহাল থাকতেন। অনুরূপভাবে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করার ক্ষমতাও প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শের ওপর নির্ভর করত। এভাবে ব্রিটেনের রাজা/রানীর মতো বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধানের পদও কেবল সাংবিধানিক প্রধানের পর্যায়ে পর্যবসিত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রিপরিষদ সহ ছিলেন প্রকৃত নির্বাহী এবং যৌথভাবে সংসদের কাছে দায়ী। তবে, পরবর্তীকালে নিরাপত্তামূলক আটকাদেশ, জরুরি ক্ষমতা ও বিশেষ ক্ষমতা আইন সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, যেগুলির মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগ সংসদের ওপর কর্তৃত্ব করতে পারত।

চতুর্থ সংশোধনীর অধীনে নির্বাহী  সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাহী ক্ষমতার প্রকৃতি ও ধরনে বড় রকমের পরিবর্তন ঘটানো হয়। এ সংশোধনী সংসদীয় গণতন্ত্রকে সাংবিধানিক এক-দলীয় একনায়কত্বের পর্যায়ে পর্যবসিত করে, যার মাধ্যমে সকল ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে কেন্দ্রীভূত হয়। একটি এক-দলীয় রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়, যেখানে সরাসরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ব্যবস্থা ছিল। রাষ্ট্রপতি ৫ বছর মেয়াদকালের জন্য আইনসভার কাছে আর দায়বদ্ধ ছিলেন না। একজন উপ-রাষ্ট্রপতির পদ সৃষ্টি করা হয়, যিনি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন এবং রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে তার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। সকল নির্বাহী ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে অর্পিত হয়, যা তিনি সরাসরি প্রয়োগ করবেন। তাকে সহায়তা ও পরামর্শ দানের জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ একটি মন্ত্রিপরিষদ গঠনের বিধান রাখা হয়, যার সকল সদস্যকে রাষ্ট্রপতি ইচ্ছানুসারে নিয়োগ দান করবেন। রাষ্ট্রপতি মন্ত্রিপরিষদের সকল সভায় সভাপতিত্ব করতেন এবং তার ইচ্ছানুযায়ী সময়ের জন্য মন্ত্রিপরিষদ দায়িত্বে বহাল থাকত। সংবিধানে একটি নতুন ৬-ক ভাগ যোগ করা হয়। সংবিধানের ১১৭(ক) অনুচ্ছেদ রাষ্ট্রপতিকে সংবিধানের ২য় ভাগে বর্ণিত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনে এক-দলীয় শাসন প্রবর্তনের অধিকার প্রদান করে। রাষ্ট্রপতি আদেশবলে এরকম একটি জাতীয় দল গঠন করলেই অন্য সকল রাজনৈতিক দলের বিলুপ্তি ঘটত। জাতীয় দলের নামকরণ, কার্যক্রম, সদস্যপদ, সংগঠন, শৃঙ্খলা, অর্থসংস্থান ও কার্যাবলি রাষ্ট্রপতির আদেশবলে নির্ধারিত হতো। চতুর্থ সংশোধনী মোতাবেক প্রবর্তিত নির্বাহী ব্যবস্থা প্রকৃত রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থা ছিল না। রাষ্ট্রপতির কার্যাবলি পর্যবেক্ষণের কোনো অধিকার সংসদের ছিল না। রাষ্ট্রপতির পদকে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী করে তোলা হয় এবং তার নির্বাহী ক্ষমতার ওপর কোনো প্রকার নিয়ন্ত্রণও রাখা হয় নি।

পঞ্চম সংশোধনীর অধীনে নির্বাহী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের পর ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অধীনে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাহী ব্যবস্থা আবারও পরিবর্তিত হয়। ১৯৭৬ সালের শেষার্ধ থেকে ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতির কয়েকটি আদেশ দ্বারা বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনসহ রাজনৈতিক ব্যবস্থার কতিপয় পরিবর্তন সাধন করেন। এ পর্যায়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল পঞ্চদশ সংশোধনী নামে খ্যাত ১৯৭৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঘোষিত ৪নং আদেশ, যা সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটায়। নির্বাহী কর্তৃত্ব তখনও ছিল রাষ্ট্রপতির হাতে, যিনি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হতেন, যদিও রাষ্ট্রপতি পদে একজন কয়বার নির্বাচিত হতে পারবেন তা নির্দিষ্ট ছিল না। তিনি ছিলেন সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক, প্রধান নির্বাহী এবং সংসদ অধিবেশনে ভাষণের মাধ্যমে সংসদের অধিবেশনের উদ্বোধক এবং তা ভেঙে দেবার অধিকারী। সংবিধানে ৯২(ক) অনুচ্ছেদ অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি আর্থিক ক্ষমতার অধিকারী হন, যার মাধ্যমে তিনি সংসদ নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন। অধিকন্তু সংবিধানে ১৪২১ (ক) ধারা সংযোজনের মাধ্যমে গণভোট প্রক্রিয়া চালু করা হয়, যা নির্বাহীকে সাংবিধানিক সংকটে সংসদ উপেক্ষা করে সরাসরি ভোটদাতাদের নিকট আবেদন জানানোর সুযোগ প্রদান করে। রাষ্ট্রপতি প্রণীত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিসমূহ অনুমোদনের জন্য তাকে সেগুলি সংসদে পেশ করতে হতো। রাষ্ট্রপতিকে ইমপিচ বা অপসারণের ক্ষমতা অনেকটা সংহত হওয়ায় রাষ্ট্রপতি একবার নির্বাচিত হলে পুরো মেয়াদ নির্বিঘ্নে স্বপদে বহাল থাকতে পারতেন। নিবর্তনমূলক আটকাদেশ, জরুরি ক্ষমতা ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মতো বিশেষ সাংবিধানিক যে ব্যবস্থাগুলি দ্বারা নির্বাহী একনায়কের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন সেগুলি সবই বহাল থাকে। এ আদেশ চতুর্থ সংশোধনীর অধীন ৫৮ অনুচ্ছেদকে আরও সংশোধন করেছে, যেমন ১. রাষ্ট্রপতিকে কার্য পরিচালনায় সাহায্য ও পরামর্শ প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী সমন্বয়ে গঠিত একটি মন্ত্রিপরিষদ থাকবে; ২. রাষ্ট্রপতিকে মন্ত্রিপরিষদ বা কোনো মন্ত্রী কোনো পরামর্শ দিয়েছেন কিনা বা কি পরামর্শ দিয়েছেন সে প্রশ্ন কোনো আদালতে তোলা যাবে না; ৩. রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী পদে একজন সংসদ-সদস্যকে নিয়োগদান করবেন, যিনি তার কাছে সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ-সদস্যের আস্থাভাজন বলে প্রতীয়মান হবেন; ৪. রাষ্ট্রপতি সংসদের সদস্য অথবা সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্য থেকে উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রী নিয়োগ দেবেন; ৫. মন্ত্রিগণ রাষ্ট্রপতির অভিপ্রেত সময়কালের জন্য স্ব স্ব পদে বহাল থাকবেন; ৬. রাষ্ট্রপতি নিজে মন্ত্রিপরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করবেন অথবা উপ-রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীকে সভাপতিত্ব করার নির্দেশ দিতে পারবেন। এভাবে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিপরিষদের সুপরিচিত সংসদীয় ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা হলেও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদকে সংসদীয় মন্ত্রিপরিষদ অপেক্ষা রাষ্ট্রপতিশাসিত মন্ত্রিপরিষদেরই ঘনিষ্ঠতর মনে হয়। পঞ্চম সংশোধনীর অধীনে নির্বাহী বিভাগ ছিল রাষ্ট্রপতিশাসিত একটি ব্যবস্থা, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো রাষ্ট্রপতিশাসিত বৈশিষ্ট্যগুলি তাতে অনুপস্থিত ছিল।

নবম সংশোধনীর অধীনে নির্বাহী জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ পঞ্চম সংশোধনী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নামসর্বস্ব আইন পরিষদ নিয়ে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী রাষ্ট্রপতির শাসনব্যবস্থা বহাল রাখেন। এটি যাতে আরও বেশি মার্কিন রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থার মতো প্রতীয়মান হয় সেজন্য ব্যবস্থাটি গণতন্ত্রীকরণের জন্য তিনি সংবিধানে নবম সংশোধনী আনেন। রাষ্ট্রপতি পদের অনির্দিষ্ট মেয়াদকে নির্দিষ্ট দুই মেয়াদে সীমাবদ্ধ করার জন্য ৫২(২) অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়; অন্যদিকে ৪৯ অনুচ্ছেদের সংশোধনী অনুসারে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক উপ-রাষ্ট্রপতি মনোনয়নের পরিবর্তে রাষ্ট্রপতির সহযোগী হিসেবে সরাসরি উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান চালু করা হয়। নির্বাহী অতঃপর যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাহীর সঙ্গে অধিকতর সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। কিন্তু একটি শক্তিশালী ও স্বাধীন আইনসভার অবর্তমানে এখানে নির্বাহী কর্তৃত্বের ওপর কার্যত কোনো নিয়ন্ত্রণই ছিল না। নতুন ধারা ৭২(ক) সংযোজন সংসদের ক্ষমতার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের ব্যাপারটিকে স্পষ্টতর করে তোলে।

দ্বাদশ সংশোধনীর অধীনে নির্বাহী দ্বাদশ সংশোধনী গ্রহণের ফলে বাংলাদেশে যে নির্বাহীর উদ্ভব ঘটে তাও ছিল সংসদীয় নির্বাহী। ১৯৭২ সালের সংবিধানে বিধৃত সংসদীয় ব্যবস্থার সকল বৈশিষ্ট্যই এখানে বহাল রাখা হয়। অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর প্রাধান্যকে নিশ্চিত করার জন্য নতুন কিছু ব্যবস্থা সংবিধানভুক্ত হয়। সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতা আরও সীমিত করার জন্য ৭০ অনুচ্ছেদে একটি নতুন ধারা সংযোজন করা হয়। এ ব্যবস্থা এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের অভাব প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানকে কার্যত অপ্রতিদ্বন্দ্বী করে তোলে। অধিকন্তু, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি এমনভাবে প্রণীত হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক মনোনীত ও অনুমোদিত না হলে কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে পারেন না। এভাবে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ককে অসম করে তোলা হয়েছে। তাই রাষ্ট্রপতিকে অনেকটা প্রধানমন্ত্রীর অধস্তন বলেই মনে হয়। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাহী ক্ষমতা অত্যধিক মাত্রায় প্রধানমন্ত্রীর ওপরই ন্যস্ত রয়েছে।  [দিলারা চৌধুরী]