নাটোর জেলা

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১০:০৯, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

নাটোর জেলা (রাজশাহী বিভাগরাজশাহী বিভাগ)  আয়তন: ১৮৯৬.০৫ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°২৫´ থেকে ২৪°৫৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°০১´ থেকে ৮৮°৩০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে নওগাঁ ও বগুড়া জেলা, দক্ষিণে পাবনা ও কুষ্টিয়া জেলা, পূর্বে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলা, পশ্চিমে রাজশাহী জেলা।

জনসংখ্যা ৬৯৮৪৪৭; পুরুষ ৩৫৩২০১, মহিলা ৩৪৫২৪৬। মুসলিম ৫৪৯৭০২, হিন্দু ১০১৫৫০, বৌদ্ধ ১৮৬, খ্রিস্টান ২১ এবং অন্যান্য ১৯৯। এ উপজেলায় সাঁওতাল, ওরাওঁ, তুরী, ভুমিজ, মালপাহাড়ী, মুন্ডা, কৈবর্ত, মুশহর প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: পদ্মা, বড়াল, মরা বড়াল, বারনাই, গুড়। চলনবিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন রাজশাহী জেলার অধীনে নাটোর মহকুমা গঠিত হয় ১৮৪৫ সালে এবং মহকুমাকে জেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে। ১৮৬৯ সালে নাটোর পৌরসভা গঠিত হয়।

জেলা
আয়তন(বর্গ কিমি) উপজেলা পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম
১৮৯৬.০৫ ৫২ ১২৭২ ১৩৮৪ ১৯১৮২৬ ১৩২৯৫১০ ৮০২ ৪১.৬
জেলার অন্যান্য তথ্য
উপজেলা নাম আয়তন(বর্গ কিমি) পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
গুরুদাসপুর ১৯৯.৪০ ১০৪ ১০৮ ১৯৪২২৮ ৯৭৪ ৩৪.৯১
নাটোর সদর ৪০১.২৯ ১২ ২৬৩ ৩০২ ৪০০০৩০ ৯৯৭ ৪৫.৪৪
বরাইগ্রাম ২৯৯.৬১ - ১৫২ ১৮২ ২৪৪৮২১ ৮১৭ ৪১.৬১
বাগাতিপাড়া ১৩৯.৮৬ - ৯৩ ১৪৪ ১১৮৭৯৪ ৮৪৯ ৪৭.৫
লালপুর ৩২৭.৯২ ১০ ২১৪ ২১৭ ২৪২৬৪৫ ৭৪০ ৪৩.৫৭
সিংড়া ৫২৮.৪৬ ১২ ৪৪৬ ৪৩১ ৩২০৮১৮ ৬০৭ ৩৬.৭৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি ১৮৫৯-৬০ সালে নীল আন্দোলন হয়। ১৯৩২ সালে বীরকুৎসা গ্রামে জমিদারের বিরুদ্ধে খাজনা বন্ধ আন্দোলন হয়। ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ মুক্তিযোদ্ধা ও পাকসেনাদের মধ্যে এক সম্মুখ লড়াইয়ে মেজর আসলাম ও ক্যাপ্টেন ইসহাকসহ ৪০ জন পাকসেনা নিহত হয়। ৩০ মার্চ ময়নায় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকবাহিনীর ২৫ নং রেজিমেন্টের মুখোমুখি লড়াইয়ে ৮০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ৩২ জন আহত হন এবং চামটিয়া গ্রামে আরও ৩ জন শহীদ হন। ১২ এপ্রিল ধনাইদহে পাকসেনাদের সাথে সংঘর্ষে ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১৯ এপ্রিল সংঘটিত এক গণহত্যায় দীলিপকুমার সরকার, ডা. মনীন্দ্রনাথ সরকার ও নবরাম মজুমদারসহ শতাধিক ব্যক্তি নিহত হন। ৩ মে থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত পাকবাহিনী বনপাড়া মিশনে, নর্থবেঙ্গল সুগার মিলে, লালপুরে রাস্তায় ও নীলকুঠির নিকট, চংধুপইলের পয়তারপাড়া গ্রামে, ছাতনী গ্রামে, রামকৃষ্ণপুর গ্রামে এবং বিলমাড়িয়া হাটে প্রায় পাঁচশতাধিক নিরীহ লোককে হত্যা করে। ২২ নভেম্বর বীরপ্রতীক আজাদ আলীর নেতৃত্বে নাবিরপাড়া গ্রামের রেললাইনের ধারে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের এক সংঘর্ষে ১৬ জন পাকসেনা নিহত হয়। ৩ ডিসেম্বর পাকসেনারা মহেশপুর গ্রামের ৩৬ জনকে হত্যা করে।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ৫; স্মৃতিস্তম্ভ ২।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ১৯৬১, মন্দির ২১৮, গির্জা ১২, মাযার ৬। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: ঘাসিপীরের মাযার (ডাহিয়া), সালামপুর ও বাউড়া শাহী মসজিদ, ভেলালাবাড়িয়া শাহ বাগু দেওয়ানের (র) মাযার মসজিদ, চাপিলা শাহী মসজিদ, বুধপাড়া হযরত ইমাম শাহ আলমের (র) মাযার, গোপালপুরের হযরত শাহ সুফি বোরহান উদ্দিন বাগদাদীর (র) মাযার, সোনা পীরের মাযার, পাঁচ পীরের মাযার, বড় বাঘা মাযার শরীফ, রহিম সাধুর মাযার (গুরুদাসপুর উপজেলা), বুড়া পীরের দরগা এবং জয়কালীবাড়ি মন্দির (নাটোর সদর উপজেলা), শ্রী শ্রী রাধারমণ ও শ্রী শ্রী নারায়ণ বিগ্রহ ঠাকুর দেববিগ্রহ মন্দির (সিংড়া উপজেলা), বুধপাড়া কালী মন্দির, পানসিপাড়া শ্রী ফকির চাঁদ গোসাই আশ্রম (লালপুর উপজেলা)।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  গড় হার ৪১.৬%; পুরুষ ৪৫.৫%, মহিলা ৩৭.৪%। কলেজ ৫৯, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৭৪, পিটিআই ১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭০১, মূক ও বধির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১, মাদ্রাসা ২৩৭। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: নবাব সিরাজউদৌলা সরকারি কলেজ (১৯৬৫), বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা কলেজ (১৯৬৯), কালাম ডিগ্রি কলেজ, লালপুর মহাবিদ্যালয়, গোপালপুর ডিগ্রি কলেজ, আব্দুলপুর সরকারি কলেজ, বিল হালতি ত্রিমোহণী ডিগ্রি কলেজ (দাঙ্গাপাড়া), রহমত ইকবাল ডিগ্রি কলেজ, বরাইগ্রাম ডিগ্রি মহাবিদ্যালয় (১৯৭০), বনপাড়া ডিগ্রি কলেজ (১৯৮৫), রাজাপুর ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৫), মৌখাড়া মহিলা ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৬), বনপাড়া কৃষি ও কারিগরি কলেজ (২০০০), মাযার শরীফ টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট উইমেন্স কলেজ (২০০১), গোপালপুর পৌর টেকনিক্যাল এন্ড বি এম কলেজ (২০০২), চকনাজিরপুর ভোকেশনাল এন্ড বি এম ইনস্টিটিউট (২০০২), দিঘাপাতিয়া পিএন উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৫২), নাটোর মহারাজা জগদীন্দ্র নাথ উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৪), লালোর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০১), চৌগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ (১৯১৩) (সিংড়া উপজেলা), তকিনগর আইডিয়াল হাইস্কুল ও কলেজ (১৯৯৪), কলম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৪), চকনাজিরপুর  উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৫) (লালপুর উপজেলা), মাধবনগর এস আই উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩০) (নাটোর সদর উপজেলা), নাটোর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৪), বরাইগ্রাম পাইলট হাইস্কুল (১৯৫৪), রাজাপুর হাইস্কুল (১৯৫৪), নাজিমউদ্দিন হাইস্কুল (১৯৫৬), জিগড়ী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৯), সেন্ট লুই উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৯), বাগাতিপাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৯), সেন্ট যোশেফ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৩), নববিধান উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (১৯৬৭), ক্যান্ট. পাবলিক হাইস্কুল (১৯৭৫), আহমেদপুর এম এইচ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৮৫), (বাগাতিপাড়া উপজেলা), দাসগ্রাম সিদ্দিকীয়া আলিয়া মাদ্রাসা (১৯৪৫), ধনাইদহ ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৫৭), শিকারপুর আলিয়া মাদ্রাসা (গুরুদাসপুর উপজেলা)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭০.৫৯%, অকৃষি শ্রমিক ৩.০১%, চাকরি ৫.০২%, ব্যবসা ১০% এবং অন্যান্য ১১.৩৮%।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী  দৈনিক: উত্তর বঙ্গবার্তা,  উত্তরপথ, প্রকাশ, জনদেশ; সাপ্তাহিক: নাটোর বার্তা, চলনবিল, বার্ষিক যুগ।

লোকসংস্কৃতি এ জেলায় ঐতিহ্যবাহী মাদারের গান, পদ্মপুরান বা মনসার গান ও ভাসান যাত্রা (মা মনসা পূজা উপলক্ষে), সোনা পীরের গান বা মাঙ্গার গান (পৌষ মাসে), যোগীর গান, মুর্শিদী গান প্রভৃতি প্রচলিত। জেলার আদিবাসী জনগোষ্ঠী প্রকৃতির সন্তুষ্টির জন্য কারাম উৎসব, পুংটাডী উৎসব; অধিক ফসলের আশায় সহরাই উৎসব; পরিবারের শান্তির জন্য ডান্ডা কাটনা উৎসব এবং দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে ফাগুয়া প্রভৃতি উৎসবে পূজার সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী নৃত্যগীতের আয়োজন করে।  এছাড়া বিয়ে, ফসল বোনা ও কাটার সময় উৎসবের আয়োজন করে।

গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা দর্শনীয় স্থান রানী ভবানী রাজবাড়ি (১৭১০), দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি (পরবর্তী উত্তরা গণভবন), তাম্রনির্মিত মদনমোহন রথ, শ্রী শ্রী রাধারমণ ও শ্রী শ্রী নারায়ন বিগ্রহ ঠাকুর দেববিগ্রহ মন্দির (১৮৯০) (সিংড়া উপজেলা), অর্জুনপাড়া পুকুর ও দালানকোঠা (বার ভূঁইয়া), গড়ের ভিটার দুর্গ ও সেনা ছাউনী, লালপুর ও বিলমাড়িয়ার নীলকুঠি (লালপুর উপজেলা), দয়ারামপুর রাজবাড়ি (১৮৯১), গালিমপুর রাজবাড়ি (১৩৩৩ বাংলা), বেগুনিয়া জমিদারবাড়ি (১৯১১), নূরপুর জমিদারবাড়ি (১৮৮২), নীলকুঠিবাড়ি (বাগাতিপাড়া উপজেলা), নগর ইউনিয়নের কয়েকটি তাম্রশাসন (৪১৫-৪৫৫), হারোয়ার প্রাচীন জয়কালি মন্দির, মাঝগ্রাম ইউনিয়নের প্রাচীন গুনাইহাটি মসজিদ ও ফারসি শিলালিপি (বরাইগ্রাম উপজেলা); খুবজীপুর গ্রামের যাদুঘর (১৯৭৮), চলনবিল জাদুঘর, পাসশুরা পাটপারা গ্রামে তিনশ বছরের প্রাচীন মসজিদ, পিপলা গ্রামে মুগল আমলের মসজিদ (গুরুদাসপুর উপজেলা)।  [মো. রেজাউল করিম]

আরও দেখুন সংশ্লিষ্ট উপজেলা।

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; নাটোর জেলার সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।