ধোলাই খাল

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২১:৫১, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

ধোলাই খাল  পুরানো ঢাকায়  বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত একটি বাণিজ্যিক-আবাসিক এলাকা। পূর্বেকার ধোলাই খাল থেকেই এর বর্তমান নামকরণ। অতীতে ধোলাই খাল শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল এবং ঐতিহাসিক  লালবাগ দুর্গআহসান মঞ্জিল ও  বড় কাটরা এবং  ছোট কাটরাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এর চারপাশে গড়ে ওঠে। এ এলাকাতে বাস করতেন অনেক বড় ব্যবসায়ী, নবাব পরিবার ও শহরের অভিজাত ব্যক্তিবর্গ। ঢাকার প্রথম মুগল সুবাদার ইসলাম খান কর্তৃক ১৬০৮-১৬১০ খ্রিস্টাব্দে খননকৃত একটি খালের নামানুসারে এলাকাটির নামকরণ করা হয়। খালটি শহরকে সুরক্ষার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নৌ যোগাযোগের সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে খনন করা হয়।  ফরাসগঞ্জ (ফ্রেঞ্চগঞ্জ) ও গেন্ডারিয়াকে বিভক্তকারী এ খাল একদা বালু নদীর ঢাল হিসেবে চিহ্নিত ছিল। খালটি ডেমরার কাছে নদী থেকে পৃথক হয় এবং ঢাকার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমে মিল ব্যারাকের কাছে বুড়িগঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয়। বালু নদী থেকে আরম্ভ হয়ে খালটি দুটি শাখায় বিভক্ত হয়। একটি উত্তর দিকে প্রবাহিত হয় এবং অপরটি বর্তমানে শাহবাগ এলাকার অদূরে পশ্চিমমুখী হয়ে ডানে শহরের মধ্য দিয়ে ঢাকা-তেজগাঁও এলাকা অতিক্রম করে। এ স্থানটিতে আম্বার সেতু পারাপারের মাধ্যমে শাহবাগ ও  কাওরান বাজারএর সংযোগ ঘটে।

১৮৩২ সালে মি. ওয়াল্টার নামে ঢাকার একজন কালেক্টর নারায়ণগঞ্জ যাতায়াতের সুবিধার্থে খালটির উপর একক স্প্যানের একটি ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ করেন। এটি ছিল সে সময়ের প্রকৌশল সাফল্যের একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। ১৮৬৭ সালে খালে চলাচলকারী যানবাহনের ওপর টোল আরোপ করা হয়। ১৮৬৭-১৮৭২ মেয়াদে খালের মধ্য দিয়ে শহরে প্রবেশকারী বড় দেশি নৌকা ও অন্যান্য যানবাহনের কাছ থেকে বার্ষিক গড়ে ১৩,০০০ টাকা টোল হিসেবে আদায় করা হয়। পরবর্তীকালে ১৮৭২ সালে টোল উত্তোলনের দায়িত্ব পৌরসভার ওপর ন্যস্ত হয়। সময়ের বিবর্তনে কৌশলগত ও বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্ববহ জলপথটি পার্শ্ববর্তী বাড়িঘর থেকে নিক্ষিপ্ত ময়লা-আবর্জনা দিয়ে স্থানে স্থানে ভরাট হয়ে যায়। খালটির কিছু অংশ এখনও উন্মুক্ত স্থান হিসেবে দেখা যায়, কিন্তু পুরানো ঢাকায় এটিকে একটি ভূগর্ভস্থ নর্দমায় রূপান্তর করা হয়েছে।

ধোলাই খাল দীর্ঘদিন সাঁতার, নৌকা বাইচ ইত্যাদি প্রতিযোগিতার একটি আদর্শ স্থান ছিল। বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে খালের দুই তীরে নানাস্থানে অতীতে মেলা অনুষ্ঠিত হতো। রোকনপুরের পাঁচভাই ঘাট ছিল ধর্মীয় জনসমাগমের সুপরিচিত স্থান। পূজা শেষে হিন্দুসমাজ তাদের দেবতাদের মূর্তি ধোলাই খালে বিসর্জন দিত।

ঢাকা মিউনিসিপালিটির অংশ হিসেবে এখনকার ধোলাই খাল এলাকার আয়তন মাত্র ৫৫০ বর্গগজ। এর উত্তরে টিপু সুলতান রোড, দক্ষিণে ভিক্টোরিয়া পার্ক, পূর্বে নারিন্দা এবং পশ্চিমে ইংলিশ রোড। এলাকাটি একটি ব্যস্ত ব্যবসায়িক কেন্দ্র। এখানে পাঁচ হাজারেরও বেশি দোকান রয়েছে। এছাড়া এখানে গৃহে ব্যবহারের বিভিন্ন সরঞ্জাম, নানারকম যন্ত্রাংশ মেরামত ও তৈরির অসংখ্য ছোট ছোট কারখানা রয়েছে। ধোলাই খালে বিক্রয়যোগ্য বিশেষ পণ্য তালিকায় আছে গাড়ির যন্ত্রাংশ, স্যানিটারি ফিটিংস এবং কম্পিউটারে ব্যবহারের নানা উপকরণ। ধোলাই খালের ব্যবসায়ীরা তেমন শিক্ষিত নয়, কিন্তু তাদের কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতা অনন্য। এলাকাটি দোকানপাট ও মানুষের ভিড়ে সর্বদা ব্যতি-ব্যস্ত থাকে। এছাড়াও দোকানপাট ও কারখানার কর্মীদের বস্তিঘরের সংখ্যাধিক্যে রীতিমতো সংকীর্ণ।  [হরিপদ ভট্টাচার্য]