ধামইরহাট উপজেলা

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৯:৩৩, ২১ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

ধামইরহাট উপজেলা (নওগাঁ জেলা)  আয়তন: ৩০০.৮০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°০১´ থেকে ২৫°১৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৪০´ থেকে ৮৮°৫৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, দক্ষিণে বদলগাছী ও পত্নীতলা উপজেলা, পূর্বে জয়পুরহাট সদর উপজেলা এবং পশ্চিমে পত্নীতলা উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৬৯৬৯৩; পুরুষ ৮৭৮৬২, মহিলা ৮১৮৩১। মুসলিম ১৪৬৪৬০, হিন্দু ১১১৬৩, বৌদ্ধ ৫০৬৯, খ্রিস্টান ৬১ এবং অন্যান্য ৬৯৪০। এ উপজেলায় সাঁওতাল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় আত্রাই ও ছোট যমুনা নদী ও চাটখাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন ধামইরহাট থানা গঠিত হয় ১৯২২ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১ মার্চ ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ২১২ ২৬০ ৯৮৭৯ ১৬২৮১৪ ৫৬৪ ৫৮.৯ ৪৭.৪
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৪.৬০ ৬৮৭৯ ১৪৯৫ ৫৮.৯২
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার(%)
পুরুষ মহিলা
আগ্রদ্বিগুন ২৮ ৭৪৩৩১ ৮৭৮৬২ ৮১৮৩১ ৪৭.৮৬
আড়ানগর ৩১ ৯৫০৭ ১১৯৯২ ১১১২৩ ৫৫.৪২
আলমপুর ২১ ৯৬১৫ ১১৭২৫ ১০৭৬১ ৪৬.৭০
ইসবপুর ৫২ ৯২৮৩ ১০৯৩৩ ৯৯৭০ ৪২.৮৬
উমার ৮৪ ৯৮১৮ ১৩৫১৯ ১২৫০৯ ৫৩.৮২
খেলনা ৭৭ ৮৬৮৭ ৭৬০০ ৭০৯৯ ৪০.৬১
জাহানপুর ৬৩ ৭৫৩৭ ১১৮৭৭ ১১১৫৯ ৪১.৯৪
ধামইরহাট ৪২ ৯৩৭০ ১১৩৬৭ ১০৫৭২ ৪৯.৬৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ জগদ্দল মহাবিহার, মাহীসন্তোষ, আগ্রাদ্বিগুন দ্বীপ, হরগৌরীর মন্দির, আলতাদীঘি, ভীমের পান্টি ও জগদ্দল বিহার।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি মুক্তিযুদ্ধের সময় এ উপজেলার ফার্সিপাড়া, পাগলা দেওয়ান, রাঙ্গামাটি প্রভৃতি স্থানে পাকবাহিনীর ক্যাম্প ছিল। পিড়লডাঙ্গা, গাংড়া, কুলফতপুর ও রাঙ্গামাটিতে মুক্তিবাহিনী ও পাকবাহিনীর সম্মুখযুদ্ধে উভয়পক্ষের অনেক লোক হতাহত হয়। পাকসেনারা কুলফতপুর গ্রামে ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে ১৪ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। পাকবাহিনীর সঙ্গে মাহীসন্তোষ নামক স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই হয়। লড়াইয়ে পাকবাহিনীর ২৫ জন নিহত হয় এবং  মুক্তিযোদ্ধা শ্রী প্রতাপ চন্দ্র, শ্রী উপেন ও আবু বক্কর শহীদ হন। এছাড়াও আগ্রাদ্বিগুন এলাকায়  পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের মুখোমুখি লড়াই হয়। এতে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

মুক্তিযুদ্ধের  স্মৃতিচিহ্ন  গণকবর ২ (ফার্সিপাড়া, পাগলা দেওয়ান)।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৮৫, মন্দির ৬৪, গির্জা ২২,মাযার ৭, মিশন ১।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  গড় হার ৪৭.৯%; পুরুষ ৫০.৭%, মহিলা ৪৪.৮%। কলেজ ১৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৩, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০৫, কমিউনিটি বিদ্যালয় ৮, এনজিও স্কুল ৮০, কেজি স্কুল ৩, মাদ্রাসা ৪৫। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ধামইরহাট এম এম ডিগ্রি কলেজ (১৯৭০), জগদ্দল আদিবাসী স্কুল এন্ড কলেজ (১৯৭২), ধামইরহাট মহিলা কলেজ (১৯৯৫), ধামইরহাট সুফিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৪), মঙ্গলবাড়ি সিরাজিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৭), ধামইরহাট সিদ্দিকীয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৭৪), মাহমুদপুর ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৫৯), রঘুনাথপুর ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৬৫)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী  বরেন্দ্র বার্তা (অবলুপ্ত)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ৪৫, সিনেমা হল ২, জাদুঘর ১, মহিলা সংগঠন ১, খেলার মাঠ ৩০।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস  কৃষি ৮৩.১০%, অকৃষি শ্রমিক ১.৮০%, শিল্প ০.৫৮%, ব্যবসা ৭.১৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.১২%, চাকরি ৩.০৮%, নির্মাণ ০.৫১%, ধর্মীয় সেবা ০.১০%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.০৪% এবং অন্যান্য ২.৫৩%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, পাট, সরিষা, ডাল, শাকসবজি।

বিলুপ্ত ও বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  স্থানীয় জাতের ধান, কাউন, তিসি, অড়হর, যব, বজরা।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, পেঁপে, পেয়ারা, তরমুজ।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ২৬, গবাদিপশু ৭, হাঁস-মুরগি ৪৫।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৮৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১০, কাঁচারাস্তা ৩১০ কিমি। ব্রিজ ১১।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি,  ডুলি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা বিস্কুট ফ্যাক্টরি, বরফকল, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, বুননশিল্প, বাঁশের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৫, মেলা ৯। শংকরপুর মাদারের মেলা, শ্যামপুরের মেলা, গকুলের মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  কলা, তরমুজ, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৬.২৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.৫৯%, ট্যাপ ০.০৯%, পুকুর ০.১৫% এবং অন্যান্য ৪.৪০%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৯.৬০% (গ্রামে ৪.৫৩% এবং শহরে ৩৬.৫৯%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৬.৫৪% (গ্রামে ২৬.৪৩% এবং শহরে ২৯.৩৫%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৬৩.৮৬% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, খ্রিস্টান মিশন হাসপাতাল ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৫, ক্লিনিক ১, কমিউনিটি ক্লিনিক ৮, হোমিও চিকিৎসালয় ২৩, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসালয় ৫।

এনজিও ব্র্যাক, কারিতাস, ঠেঙ্গামারা মহিলা সংঘ, আশা, আইআরডিএ, আশ্রয়, মানবসেবা সংস্থা। [মো. বদিউল আলম]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ধামইরহাট উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।