দিনাজপুর রাজবাড়ি

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৫:৫৩, ১৩ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

দিনাজপুর রাজবাড়ি বর্তমান দিনাজপুর শহরের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত ধ্বংসপ্রাপ্ত নিদর্শন মাত্র। আদিতে প্রতিরক্ষা পরিখা ও উঁচু প্রাচীর বেষ্টিত দিনাজপুর রাজবাড়ির বর্তমান পরিত্যক্ত ধ্বংসস্তূপে প্রবেশের জন্য পশ্চিম দিকে একটি উঁচু খিলানপথ রয়েছে। প্রবেশপথের বাম দিকে মূল প্রাসাদ এলাকার মধ্যে খোলা জায়গায় রয়েছে একটি কৃষ্ণ মন্দির। ডানদিকে রয়েছে প্রাসাদের বহির্বাটির কিছু ধ্বংসাবশেষ ও অপর একটি প্রবেশপথ যা একটি বর্গাকার চত্বরে উন্মুক্ত হয়েছে। বর্গাকার চত্বরটির পূর্বপার্শ্বে রয়েছে চত্বরমুখী সমতল ছাদবিশিষ্ট একটি মন্দির। চারটি সেমি-কোরিনথিয়ান স্তম্ভের উপর মন্দিরের সামনের বারান্দা এবং অপর এক সেট কলামের উপর মূল হল ঘরটির ছাদ ন্যস্ত।

দিনাজপুর রাজবাড়ি

দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাসাদটি এখন শুধুই পরিত্যক্ত ইটের সমাহার। ভবনগুলি ভেঙ্গে খন্ড খন্ড হয়ে যাওয়ার শেষ পর্যায়ে উপনীত। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজা ও জমিদার রাজবাড়ির বিভিন্ন অংশ নির্মাণ করলেও মূল প্রাসাদ ভবনটি তিনটি প্রধান মহলে (ব্লক) বিন্যস্ত। এগুলি আয়না মহল, রানী মহল ও ঠাকুরবাড়ি মহল হিসেবে পরিচিত। প্রাসাদ এলাকায় বেশ কয়েকটি মন্দির, রেস্ট হাউস, দাতব্য চিকিৎসালয়, দিঘি এবং বিভিন্ন কর্মচারী ও পোষ্যদের আবাসস্থল নির্মাণ করা হয়েছিল।

এ সকল দালান-কোঠা এবং পূর্ব ও দক্ষিণের দুটি বৃহৎ দিঘি, পরিখা, বাগান, একটি বিলুপ্ত চিড়িয়াখানা, একটি টেনিস কোর্ট, কাচারি ও কুমার হাউসসহ রাজবাড়িটি প্রায় ১৬.৪১ একর এলাকা নিয়ে বিস্তৃত। মূল মহল ও এর সংলগ্ন পরিখা সম্ভবত আঠারো শতকে মহারাজা প্রাণনাথ ও তাঁর পোষ্যপুত্র রামনাথ নির্মাণ করেছিলেন। প্রাসাদটি নির্মিত হয়েছিল ইউরোপীয়, মুসলিম ও হিন্দু রীতির এক অদ্ভুত সংমিশ্রণে, যা খুব একটা দৃষ্টিনন্দন হয় নি। রামডাঙ্গা নামক দুটি সমান্তরাল পরিখা প্রাসাদটি ঘিরে ছিল। পরিখাটি সম্ভবত আলীবর্দী খান এর শাসনামলে রংপুরের ফৌজদার সৈয়দ আহমেদ খানের আক্রমণের পরই রামনাথ খনন করিয়েছিলেন।

আয়না মহল নামে পরিচিত পূর্বমুখী দ্বিতল মূল প্রাসাদটির অধিকাংশই এখন ধসে পড়েছে। এ ধ্বংসাবশেষে অথবা টিকে থাকা সামান্য কিছু নিদর্শনের মাঝে বা চূর্ণ-বিচূর্ণ পাথরের কোথাও এর পূর্বের কাচের মোজাইক চোখে পড়ে না। পূর্বদিকের ৪৫.৭২ মিটার ফাসাদে ৩.০৫ মিটার প্রশস্ত একটি অভিক্ষিপ্ত বারান্দা রয়েছে। ব্যালকনির উভয় পার্শ্বে দুটি প্রশস্ত প্যাঁচানো সিড়ি দোতালায় উঠে গেছে। সম্মুখভাগে অভিক্ষিপ্ত বারান্দাটির নিচে রয়েছে গ্রিক আয়োনিক রীতির স্তম্ভের সারি। জোড়ায় জোড়ায় স্থাপিত স্তম্ভগুলিতে আবার রয়েছে গোলাকৃতির ব্যান্ড। একটি মাত্র আয়তাকার প্যানেল ব্যতীত উপরের প্যারাপেটটি সমতল। প্যারাপেট থেকে সামান্য উচু আয়তাকার প্যানেলটিতে রয়েছে রাজকীয় চিহ্নের মাঝে রিলিফ করা মুখোমুখি দুটি হাতি ও মুকুট-এর নকশা। মহলটির মেঝে সাদা-কালো মার্বেল পাথর দ্বারা এবং ছাদ, বিশেষ করে দরবার হল, জলসা হল, তোষাখানা ও পাঠাগার,  স্টাকো পদ্ধতিতে চকচকে করা হয়েছে।

পশ্চিমের মূল প্রাসাদ ব্লকের পেছনে রয়েছে রানী মহল ও ঠাকুরবাড়ি মহলের দ্বিতল বর্গাকার ব্লক। একদা এ সমস্ত অসাধারণ সুন্দর নিদর্শনের রিলিফ, খোদিত নকশা ও সমস্ত মূল্যবান বস্ত্তই বর্তমানে খুলে নেওয়া হয়েছে। [নাজিমউদ্দীন আহমেদ]

গ্রস্থপঞ্জি  KW Strong, E B District Gazetteer, Dinajpur, Allahabad , 1912; George Michell (ed.), Brick Temples of Bengal, New Jersy, 1983; Nazimuddin Ahmed, Building of the British Raj in Bangladesh, Dhaka , 1986.