তেলপাম

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২১:৩২, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

তেলপাম (Oilpalm)  খাবার তেল উৎপাদক Elaeocarpaceae গোত্রের উদ্ভিদ, Elaeis guineensis-এর সাধারণ নাম। তেলপামের আদি নিবাস পশ্চিম আফ্রিকা। তবে আফ্রিকা ছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আমেরিকার কয়েকটি দেশে এ গাছ জন্মে। পাম অয়েল পৃথিবীর বহুল ব্যবহূত খাবার তেল। ঐতিহাসিক তথ্য থেকে জানা যায় আজ থেকে প্রায় ৫,০০০ বছর পূর্বেও একটি খাদ্যপণ্য হিসেবে পাম অয়েলের বিপণন প্রচলিত ছিল। ইউরোপে ১৫৮৮ সালে প্রথম জাহাজ ভর্তি পাম অয়েল পৌঁছেছিল বলে উল্লেখ আছে। ইন্দোনেশিয়ার বোটানিকাল গার্ডেন-এর মাধ্যমে আজ থেকে প্রায় ৩০০ বছর আগে একটি বাহারি উদ্ভিদ হিসেবে তেলপাম মালয়েশিয়ায় আনা হয়েছিল।

তেলপাম গাছ দেখতে খেজুর গাছের অনুরূপ, বিশেষ করে এর পাতা। এ গাছেও কাঁটা থাকে, তবে তা ভিন্ন ধরনের। কান্ড বেশ চওড়া, গাছ ৭-৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। ফল লালচে অথবা কমলা রঙের; তবে কখনও কখনও কালচে বা সাদাটে দেখায়। ফলের আকার ও আকৃতি সুপারির মতো, প্রত্যেকটি গোছায় অনেক ফল ধরে। নারিকেলের মতো এদের ফলে শাঁস থাকে।

নাইজেরিয়া এবং মালয়েশিয়া থেকে আমদানিকৃত কিছু চারার মাধ্যমে বাংলাদেশে ১৯৭৯ সালে প্রথম তেলপামের আবাদ শুরু হয়। বাংলাদেশ সরকারের বন বিভাগ প্রাথমিকভাবে নার্সারি স্থাপন এবং পরে চারা রোপণ করে এর চাষাবাদ সূচনা করে। মালয়েশিয়া থেকে তেলপাম বীজের প্রথম চালান এ দেশে আসে ১৯৭৮ সালে। ঢাকার বোটানিক্যাল গার্ডেনে পলিব্যাগে এর চারা উৎপাদন করা হয়। ছয় মাস বয়সের চারা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট বন বিভাগের তত্ত্বাবধায়নে রোপণের জন্য ১৯৭৯ সালে সেখানে পাঠানো হয়। ১৯৮১ সালের মধ্যে চট্টগ্রামে ২৭৯ একর, কক্সবাজারে ৩২৫ একর, এবং সিলেটে ১৮০ একরসহ মোট ৭৮৪ একর জমি তেলপাম চাষের আওতায় আনা হয়। বর্তমানে এর চাষাবাদের মোট এলাকা ১,০০০ একরের উপর। বপনের তিন বছর পরেই গাছে তেল উৎপাদনযোগ্য ফল আসতে শুরু করে, ৯-১০ বছর বয়সের গাছে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ফল হয়। প্রতি ২৫ বছর পরপর পুরাতন গাছ অপসারণ করে নতুন গাছ লাগাতে হয়। দ্রুত বৃদ্ধির জন্য ১২-১৪ মাস বয়সের চারা ৯ মি × ৯ মি দূরে দূরে লাগানো সবচেয়ে ভাল।

বাংলাদেশে কয়েক ধরনের কীটপতঙ্গ, বন্যপ্রাণী এবং রোগবালাই তেলপাম চাষে ব্যাঘাত ঘটায়। কক্সবাজার এলাকায় মাঝে মধ্যে  হাতি প্রবেশ করে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে। প্রায় সব চাষাবাদ এলাকাতেই  সজারু, বন্য শূকর, এবং  ইঁদুর তেলপাম গাছের প্রচুর ক্ষতি করে বলে জানা যায়।

তেলপাম প্রজাতি E. guineensis পাম তেলের প্রধান উৎস। এ তেল ফলের মধ্যত্বক (mesocarp) থেকে সংগৃহীত হয়। মালয়েশিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ তেল উৎপাদক ও রপ্তানিকারণ দেশ; এর পরেই রয়েছে ইন্দোনেশিয়া। যে পাম গাছের ফল থেকে মালয়েশিয়ায় এ তেল উৎপাদন হয় সেটি আসলে Dura  Pisifera জাতের উচ্চ ফলনশীল এক শংকর। এটি টেনেরা (Tenera) নামে সুপরিচিত। ভোজ্যতেলের মধ্যে পাম অয়েল অসামান্য এ কারণে যে এটি প্রাকৃতিক বিটা-ক্যরোটিন-এর (beta-carotene) এক অতি সমৃদ্ধ উৎস। ভোজ্যতেল উৎপাদনের ঘাটতি থাকায় বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ অপরিশোধিত পাম অয়েল, পরিশোধিত পাম অয়েল, অথবা পাম ফল মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করে থাকে। পরিসংখ্যানে দেখা যায় এ পণ্য আমদানির পরিমাণ প্রতি বছরই ক্রমে বাড়ছে।

পাম অয়েলের ব্যবহার বহুমুখী। রান্নাবান্নায় এর ব্যবহার ছাড়াও আচার, ঝোল, উদ্ভিদজাত ঘি, ডালডা, এবং মার্জারিন তৈরিতে এর ব্যবহার সর্বজনীন। মাখনের বিকল্প হিসেবেও এটি ব্যবহূত হয়। বাংলাদেশে বিস্কুট, কেক, পেস্ট্রি এবং অন্যান্য মিষ্টিজাতীয়  খাদ্যসামগ্রী তৈরিতে এর ব্যবহার ব্যাপক। এ তেল ভিটামিন ‘ই’ সমৃদ্ধ এবং এ তেলে তৈরি খাদ্যসামগ্রী সহজে নষ্ট হয় না।  [এস.এম হুমায়ুন কবির]