তাহিরপুর উপজেলা

তাহিরপুর উপজেলা (সুনামগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ৩১৫.৩৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°০১´ থেকে ২৫°১২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°০২´ থেকে ৯১°১৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে জামালগঞ্জ ও ধর্মপাশা উপজেলা, পূর্বে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা, পশ্চিমে ধর্মপাশা উপজেলা।

জনসংখ্যা ২১৫২০০; পুরুষ ১১০৫৫৫, মহিলা ১০৪৬৪৫। মুসলিম ১৯৭৪৪৫, হিন্দু ১৬৯২১, বৌদ্ধ ১, খ্রিস্টান ৬৯২ এবং অন্যান্য ১৪১। এ উপজেলায় আদিবাসী গারো, হাজং প্রভৃতি জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: বাউলাই, রক্তি ও পাটনাল। টাঙ্গুয়ার হাওড়, মতিয়ান বিল, সংসার বিল, আরবিয়াকোনা বিল, রাউয়ার বিল, সোনার বিল, চিপতি বিল, সোনাতলা বিল, পালাইর বিল, ঘরিয়াকুরী বিল, বটকাই বিল, শৈলদিঘা বিল, নাবাই বিল, কুপাউড়া বিল, গোলাঘাট বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন তাহিরপুর থানা গঠিত হয় ১৯২৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১২৮ ২৪৩ ৯৪৫০ ২০৫৭৫০ ৬৮২ ৪৮.৭ ২৯.৫
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৪.১৩ ৯৪৫০ ২২৮৮ ৪৮.৭
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
উত্তর বাদাঘাট ৭১ ৯১০৮ ২৩৫২৫ ২৩৩৪০ ৩৫.৭
উত্তর শ্রীপুর ৯২ ২৩৩৯৪ ২৬৮০৭ ২৩২৫৪ ২৮.৯
তাহিরপুর ৬৪ ১২৯৬২ ৯৭২৬ ৯২৫১ ৪১.২
দক্ষিণ বাদল ৪৩ ৪৬০৪ ১১৩২০ ১০৮৫২ ২২.৬
দক্ষিণ শ্রীপুর ৩৩ ১৩৮১৯ ১০৭৫১ ৯৯৮৭ ৩০.২
বালিজুরী ১০ ৩৭১৬ ৯৭৫৮ ৯৫৮০ ৩৬.২
বাদল ৮২ (নতুন নাম) ৮৩৬১ ১৮৬৬৮ ১৮৩৮১ ২১.২

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদ  রাজা বিজয় সিংহের বাসস্থানের ধ্বংসাবশেষ (ষোড়শ শতক)।

ঐতিহাসিক ঘটনা ১৯৯৭-৯৮ সালে ভাসান পানি আন্দোলনে ১০ জন কৃষক প্রাণ হারায় এবং আরও অনেকে কারারুদ্ধ হয়।

মুক্তিযুদ্ধ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা শ্রীপুর এলাকা এবং বিননগরসহ কয়েকটি স্থানে টহলরত পাকসেনাদের উপর হামলা চালায়। তারা ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের শেষদিকে তাহিপুর থানায় স্থাপিত হানাদার ক্যাম্প আক্রমণ করলে পাকবাহিনী জামালগঞ্জের দিকে পালিয়ে যায়।

বিস্তারিত দেখুন তাহিরপুর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৩৩, মন্দির ৪৫, গির্জা ১, তীর্থস্থান ১, মাযার ৩।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩০.৪%; পুরুষ ৩৩.২%, মহিলা ২৭.৫%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: জয়নাল আবেদীন মহাবিদ্যালয় (১৯৯২), বাদাঘাট মহাবিদ্যালয় (১৯৯৪), তাহিরপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫০), তাহিরপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (১৯৮৮), বাদাঘাট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬২), ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্প উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৬), জনতা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৮৯),বালিজুুড়ী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৫), তাহিরপুর হিফজুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসা, রাহমানিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৭৩)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ১০, লাইব্রেরি ১, মহিলা সংগঠন ১, খেলার মাঠ ৩।

দর্শনীয় স্থান টাঙ্গুয়ার হাওর, শ্রী শ্রী অদ্বৈত প্রভুর জন্মধাম, পণাতীর্থ ও বারেক টিলা।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৮.০৫%, অকৃষি শ্রমিক ৭.৫৩%, শিল্প ০.৩৫%, ব্যবসা ১১.৫৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.০৭%, চাকরি ২.৩০%, নির্মাণ ০.৫৭%, ধর্মীয় সেবা ০.৩২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২২% এবং অন্যান্য ৮.০৩%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৯.৩৪%, ভূমিহীন ৪০.৬৬%। শহরে ৬০.৮৪% এবং গ্রামে ৫৯.২৭% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, বাদাম, গম, সরিষা।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তামাক, কাউন।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, লেব, তরমুজ।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য খামার ১০, গবাদিপশু ২০, হাঁস-মুরগি ৭০।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৩৯ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২০ কিমি, কাঁচারাস্তা ২০০ কিমি; নৌপথ ৫২ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২০, মেলা ২। বাদাঘাট বাজার, তাহিরপুর বাজার, বালিজুরি বাজার ও আনোয়ারপুর বাজার এবং পণাতীর্থ বারুণী মেলা (রাজারগাঁও) ও শাহ আরেফিন মেলা (লাউড়েরগড়) উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, মাছ, চুনাপাথর।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২৫.৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ চুনাপাথর, বালি ও কয়লা।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯০.৭%, ট্যাপ ০.৩% এবং অন্যান্য ৯.০%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ১৭.৫% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৬২.৫% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৬২.৫% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৭, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৭৪, ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের বন্যায় গবাদিপশু ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা।  [জয়ন্ত সিংহ রায়]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; তাহিরপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।