তালুকদার

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২১:২৯, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

তালুকদার  একটি মিশ্র শব্দ। তা’ল-লুক আরবি শব্দ, অর্থাৎ ধরে রাখা বা নির্ভর করা। হিন্দিতে ‘তালুক’ শব্দটি ব্যবহূত হয় ‘জমি’ অর্থে। ফারসি ’দার’ শব্দটির অর্থ ‘অধিকারী’। তালুকদার শব্দটির অর্থ ’ ভূম্যাধিকারী’। ভারতের বিভিন্ন অংশে তালুকদার শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহূত। উত্তর ভারতে বড় ভূস্বামীদের তালুকদার বলা হয়। কিন্তু বাংলায় অধীনস্থ ভূমির ব্যাপ্তি ও সামাজিক মর্যাদার দিক থেকে জমিদারদের পরে তালুকদারদের স্থান। আঠারো শতকে বাংলায় ছোট ছোট ভূস্বামীদের স্থলে বিশাল জমিদারির উদ্ভব ঘটে এবং ছোট ভূস্বামীদেরকে জমিদারদের উপর নির্ভরশীল তালুকদারের মর্যাদায় অবনমিত করা হয়। কারণ ‘রাজা’ ‘মহারাজা’ নামে পরিচিত এ বড় জমিদারদের মাধ্যমেই তাদেরকে সরকারের নিকট খাজনা জমা দিতে হতো। অবশ্য বহু পুরনো তালুকদার সরাসরি সরকারের নিকট খাজনা জমা দিতেন। বড় জমিদারগণ নিজেরাই বিভিন্ন নামে ভিন্ন ভিন্ন পরিধির অনেক তালুক সৃষ্টি করেন যেমন, জঙ্গলবাড়ি তালুক, মাজকুরি তালুক, শিকিমি তালুক ইত্যাদি। একদিকে জমিদারি পরিচালনার কৌশল ও সুবিধা এবং অন্যদিকে বিশেষ উদ্দেশ্যে জমিদারি তহবিল গঠনের রাজস্ব নীতি হিসেবে এ তালুকগুলি সৃষ্টি করা হতো। কার্যত এটি ছিল নির্ভরশীল তালুক সৃষ্টির নামে জমি বিক্রয়। চিরস্থায়ী বন্দোব-এর বিধান অনুযায়ী এ ধরনের আশ্রিত সকল তালুক সংশ্লিষ্ট জমিদারি থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং এগুলি স্বাধীনভাবে খাজনা প্রদানকারী জমিদারি হিসেবে বিবেচিত হয়। বিভিন্ন নামে আখ্যাত সব কয়টি স্বাধীন ও নির্ভরশীল তালুক স্বাধীন জমিদারিতে রূপান্তরিত হয়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পর জমিদারগণ নতুন ধরনের তালুক সৃষ্টি করেন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের চাপে অনেক জমিদার বিভিন্ন নামে নির্ভরশীল তালুক সৃষ্টি করতে থাকেন। এগুলি হচ্ছে পত্তনি তালুক, নোয়াবাদ তালুক, ওসাৎ তালুক। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে নির্ধারিত অধিকার ও দায়বদ্ধতার অনুরূপ এসব তালুকদারদেরও জমি ভোগ-দখলের মধ্যস্বত্বীয় অধিকার ছিল। তালুকদারদের খাজনা স্থায়ীভাবে নির্দিষ্ট করা ছিল এবং জমিদারদের সালামি প্রদানের মাধ্যমে তালুকদারি হস্তান্তরযোগ্য ছিল। এ অধীনস্থ তালুকগুলি কোনো স্পষ্ট আইনগত ভিত্তি ছাড়াই গড়ে উঠত। ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন এ ভোগদখলকারীদের নিয়মিত মধ্যবর্তী তালুকদার হিসেবে স্বীকার করে নেয় এবং এ আইনে তাদের অধিকার ও দায়িত্ব ব্যাখ্যা করা হয়। ১৯৫০ সালের ইস্ট বেঙ্গল এস্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যাক্ট এর বলে ক্ষতিপূরণ প্রদানের মাধ্যমে সকল তালুকের বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়েছিল।  [সিরাজুল ইসলাম]