তালা উপজেলা

তালা উপজেলা (সাতক্ষীরা জেলা)  আয়তন: ৩৩৭.২৪ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৩২´ থেকে ২২°৫০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০৫´ থেকে ৮৯°২০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কলারোয়া, কেশবপুর ও ডুমুরিয়া উপজেলা, দক্ষিণে আশাশুনি উপজেলা, পূর্বে ডুমুরিয়া ও পাইকগাছা উপজেলা, পশ্চিমে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৯৯৮২০; পুরুষ ১৪৯৩৮৯, মহিলা ১৫০৪৩১। মুসলিম ২২০২৪০, হিন্দু ৭৭২৩১, বৌদ্ধ ৩, খ্রিস্টান ১৮৫৯, অন্যান্য ৪৮৭।

জলাশয় প্রধান নদ-নদী: কপোতাক্ষ, দলুয়া। মাধবখালী খাল, ধরি খাল ও মথুরা বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন তালা থানা গঠিত হয় ১৯১৩ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৯ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১২ ১৫১ ২২৯ ৯৫২৮ ২৯০২৯২ ৮৮৯ ৬৮.২ ৫০.৩
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৬.৬০ ৯৫২৮ ১৪৪৪ ৬৮.২
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন(একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
ইসলামকাটি ১৫ ৫৩০৪ ৯৮৭৮ ১০০১০ ৫৬.২
কুমিরা ৫৫ ৪৬৮৮ ১১৮৯৮ ১২১০১ ৪৮.২
খলিলনগর ৩১ ৭৯৪৭ ১৪১৫৪ ১৪২৭৪ ৪৭.৫
খালিশখালি ৩৯ ৯৪৮৪ ১২৯৬৫ ১২৮৪৪ ৫১.১
খেশরা ৪৭ ১১৭৪৮ ১২৫৩১ ১২৭৭৮ ৫২.৫
জালালপুর ২৩ ৫৯২৩ ১০৭৭৮ ১০৯২১ ৫০.৬
তালা ৮৭ ৬১১৩ ১৬৩৩২ ১৬৬৯৫ ৫৩.৭
তেঁতুলিয়া ৯৪ ৬৫৪২ ১২১৬৫ ১২৮৪২ ৪৪.৩
ধানদিয়া ০৭ ৫৭৯৫ ১০৫৮৫ ১০২৮৭ ৪৫.২
নগরঘাটা ৭১ ৬২২৯ ৯২৮৬ ৮৯৭২ ৫৪.৭
মাগুরা ৬৩ ৬৮১২ ১০৩০৬ ১০২৫৩ ৫৩.৯
সরুলিয়া ৭৯ ৬৭৪৯ ১৮৫১১ ১৮৪৫৪ ৫২.৮

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ তেতুঁলিয়া জামে মসজিদ (১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদটিকে প্রত্ন সম্পদ হিসেবে চিহ্নিত করেছে)।

ঐতিহাসিক ঘটনা ১৯০২ সালে জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসু, শ্রী অরবিন্দ, প্রমথনাথ মিত্রের উদ্যোগে অনুশীলন সমিতি গঠিত হয়। ১৯০৫ সালে রাজ কুমার বসুর নেতৃত্বে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। উপজেলার নাংলা গ্রামের মথুর পোদ্দারের বাড়িতে ১৯০৯ সালের ১৬ আগস্ট অনুশীলন সমিতির সম্পাদক শচীন মিত্রের নেতৃত্বে ডাকাতি সংগঠিত হয়। তেভাগা আন্দোলনকে (১৯৪৬-৪৮) সামনে রেখে ১৯৪৪ সালে কুমিরা হাইস্কুল মাঠে কৃষক নেত্রী সুধা রায়ের সভাপতিত্বে কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধ তালা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা তিনটি স্থানে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। এসব স্থান হচ্ছে বারাত, বালিয়াদহ এবং মাগুরা। এছাড়া তারা কপোতাক্ষ নদ দিয়ে পাকবাহিনীর যাওয়া খাদ্যসামগ্রী বোঝাই একটি লঞ্চ আক্রমণ করে পাকবাহিনীর দু’জন দালালকে হত্যা করে।

বিস্তারিত দেখুন তালা উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তেঁতুলিয়া জামে মসজিদ উল্লেখযোগ্য।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫০.৯%; পুরুষ ৫৫.৩%, মহিলা ৪৬.৫%। কলেজ ১২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১৯, মাদ্রাসা ২১। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: তালা সরকারি কলেজ (১৯৬৯), কুমিরা মহিলা ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৩), তালা বি.দে সরকারি হাইস্কুল (১৮৮৮), কুমিরা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০২), কে.এম.এম.সি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ধানদিয়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন (১৯১৫), খালিশখালি শৈব্য বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৮), বালিয়া দহা কে এম এমসি ইনস্টিটিউশন (১৮৯৯), ইসলামকাটি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৯), পাটকেলঘাটা কওমি মাদ্রাসা (১৯৬০)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৬০, লাইব্রেরি ১৬, সিনেমা হল ৩, নাট্যমঞ্চ ১, নাট্যদল ১, মহিলা সংগঠন ৭১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭০.৩৪%, অকৃষি শ্রমিক ২.৬৭%, শিল্প ১.৩০%, ব্যবসা ১৩.১৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.০২%, চাকরি ৪.২১%, নির্মাণ ০.৮৫%, ধর্মীয় সেবা ০.২৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৫% এবং অন্যান্য ৪.০৪%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৫.৮০%, ভূমিহীন ৩৪.২০%। শহরে ৬৫.৮৪% এবং গ্রামে ৬৫.৮০% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, পাট, সরিষা, আলু, ছোলা, পিঁয়াজ, মসুরি, হলুদ, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তামাক, তিসি, কাউন, ধনিয়া।

প্রধান ফল-ফলাদিব আম, কাঁঠাল, নারিকেল, সুপারি, লিচু, পেঁপে, কুল, পেয়ারা, কলা, জাম।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৫০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৭৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ৫৯৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ধানকল ও তেলকল।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, কারু ও হস্তশিল্প, মাদুর, নলখাগড়ার কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১২, মেলা ৪। পাটকেলঘাটা, খলিশখালী, দলুয়া, তালা, জেঠুয়া, জাতপুর, কুমিরা, মাগুরা, মেলেকবাড়ি,  বালিয়া ও কাটিপাড়া হাট এবং মাগুরার সাতদিন ব্যাপী দুর্গাপূজার মেলা।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, পাট, গম, আলু।

বিদ্যুৎ ব্যবহার উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪৩.০% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.১%, ট্যাপ ০.৭% এবং অন্যান্য ৪.২%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা ৪৮.২% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৭.৩% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৪.৫% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র (এফ ডব্লিউ সি) ৩২, কমিউনিটি ক্লিনিক ৩৬, বেসরকারি ক্লিনিক ৪, দাতব্য হাসপাতাল ২।

এনজিও ব্র্যাক, আশা।  [আশরাফুল ইসলাম গোলদার]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; তালা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।