তবলা

তবলা সঙ্গীতে ব্যবহূত একপ্রকার আনদ্ধ বাদ্যযন্ত্র। এটি এক সময় তলমৃদঙ্গ নামে পরিচিত ছিল। অঙ্গুলি দ্বারা বাজানো হয় বলে এটি টংকারযন্ত্র নামেও অভিহিত হয়। বহুল প্রচলিত মতে তের’শ থেকে চৌদ্দ’শ শতাব্দীতে আমীর খসরু মৃদঙ্গ ভেঙ্গে তবলা উদ্ভাবন করেন। সঙ্গীত পরিবেশনে তাল বা সময়-সামঞ্জস্য (মাত্রা) রক্ষাই এর উদ্দেশ্য।

তবলা

তবলা ও বাঁয়া–এ দুটি অংশের সমন্বয়ে যন্ত্রটি গঠিত, যা একত্রে তবলা নামে পরিচিত। সাধারণত ডান হাতে তবলা (ডাইনা) এবং বাম হাতে বাঁয়া (ডুগি) বাজানো হয়। এটি সঙ্গীত ও ঐকতান বাদনে অপরিহার্য। তবলার খোল কাঠনির্মিত, উচ্চতা ৯-১২ ইঞ্চি। এর গঠন-কাঠামো ওপরের দিকে ক্রমশ সরু। সাধারণত ওপরের ব্যাস ৫/৬ ইঞ্চি এবং নিচের ব্যাস ৮/১০ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। এ খোল চামড়ার ছাউনি দ্বারা আচ্ছাদিত এবং ছাউনির মাঝখানে পুরু গোলাকার কালো প্রলেপ দেওয়া হয়। একে গাব, স্যাহী বা খিরণ বলে। বাঁয়ার খোল তামা, পেতল বা মাটির তৈরি। এটি হাঁড়ি বা কুড়ি নামেও অভিহিত হয়ে থাকে। বাঁয়ার ওপরের ব্যাস নিচ অপেক্ষা বেশি, সাধারণত ১০/১২ ইঞ্চি হয়ে থাকে।

তবলার মতো বাঁয়ার মুখও চামড়াচ্ছাদিত করা হয় এবং তাতে গাব থাকে। তবলার চর্মাচ্ছাদিত মুখের সঙ্গে রজ্জুবেষ্টন (ডুরি) থাকে, যার সাহায্যে তবলার স্বর কড়ি-কোমল করা হয়। এর চর্মাবৃত ধারগুলিতে অঙ্গুলি ঠুকে স্বরের উচ্চতা ও লঘুতা বজায় রাখা হয়।

বাদনকালে তবলা ও বাঁয়াকে কাপড়ের বেড়ের উপর বসানো হয়। বাদক বসে বা দাঁড়িয়ে বাদ্য পরিবেশন করেন। বাজাবার পূর্বে একে উত্তমরূপে সুরে বেঁধে নিতে হয়। তবলার বোল রেলা, কায়দা, গৎ, আড়ি, কুআড়ি, গৎপরণ প্রভৃতি নামে পরিচিত। তবলাবাদনের বিভিন্ন ঘরানা আছে। তন্মধ্যে দুটি বাংলা ঘরানার নাম বিষ্ণুপুর ঘরানা ও ঢাকা ঘরানা। [সমবারু চন্দ্র মহন্ত]

আরও দেখুন বাদ্যযন্ত্র