ঢেঁকি

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৮:৪৮, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

ঢেঁকি  প্রধানত ধানের তুষ ছাড়িয়ে চাল তৈরি করার কাঠের কল বিশেষ। গ্রামাঞ্চলে চাল ও গমের আটা তৈরিতেও এর ব্যবহার ব্যাপক। দেশে বর্তমানে অনেক ধানভানা যন্ত্র এবং স্বয়ংক্রিয় চাল কল রয়েছে। কিন্তু কৃষক সমাজের প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রায় সকল বৈশিষ্ট্যসহ যথেষ্ট সংখ্যক ঢেঁকি এখনও গ্রামাঞ্চলে বিরাজমান।

ঢেঁকিতে ধান ভানা

আর্য-ভারতে প্রধান দুটি শস্য, গম ও বার্লির খোসা ছাড়ানোর জন্য ইন্দো-আর্যগণ উদুখলা ও মুসালা ব্যবহার করত। উদুখলা (স্থানীয় ভাষায় উখলি নামে পরিচিত) প্রায় ৩৬ ইঞ্চি উচ্চতা ও ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসবিশিষ্ট একখন্ড গোলাকার কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়। কাষ্ঠখন্ডটির উপরের দিকে ১৮ ইঞ্চির মতো গভীর একটি চওড়া গোলাকার গর্ত করা হয়। মুসালা হচ্ছে ৯ ইঞ্চি ব্যাস এবং ৪৫ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট বেলনাকৃতির একটি শক্ত কাঠের গুঁড়ি বা মুষল। বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে উদুখলা ও মুসালা এখনও ব্যবহূত হয়।

সাধারণত ঢেঁকিতে প্রায় ৭২ ইঞ্চি লম্বা এবং ৬ ইঞ্চি ব্যাসবিশিষ্ট একটি কাঠের ধড় থাকে। মেঝে থেকে প্রায় ১৮ ইঞ্চি উচ্চতায় ধড় ও দুটি খুঁটির ভিতর দিয়ে একটি ছোট হুড়কা বা বল্টু ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এ হুড়কার উপরেই ধড়টি ওঠানামা করে। ধড়ের এক মাথার নিচের দিকে সিলিন্ডার আকারের  প্রায় ১৮ ইঞ্চি দীর্ঘ এবং ৬ ইঞ্চি ব্যাসবিশিষ্ট এক টুকরো কাঠ যুক্ত করে দেওয়া হয়। এ কাষ্ঠখন্ডের নিম্নপ্রান্ত একটি লোহার বলয় দিয়ে পরিবৃত করা হয় এবং এটি মুষলের কাজ করে। ধড় এটিকে উপরে তোলে, নিজের ওজনে এটি নিচে পতিত হয়। হুড়কা তার শক্তি বৃদ্ধি করে। মুষল থেকে ধড়ের মোট দৈর্ঘ্যের পাঁচ-অষ্টমাংশ দূরত্বে স্থাপিত হুড়কা উপস্তম্ভের কাজ করে থাকে।

সাধারণত ২-৩ জন মহিলা এ যন্ত্রে কাজ করেন। ১-২ জন মুষল উত্তোলনের জন্য ধড়ের এক প্রান্তে পা দিয়ে পালাক্রমে চাপ দিয়ে থাকেন এবং পা সরিয়ে নিয়ে মুষলকে নিচে পড়তে দেন। অপর মহিলা বৃত্তাকার খোঁড়ল থেকে চূর্ণীকৃত শস্য সরিয়ে নেন এবং তাতে নতুন শস্য সরবরাহ করেন। মুষলের আঘাত ধারন করার জন্য খোঁড়লটি কাটা হয় মাটিতে বসানো এক টুকরা শক্ত কাঠের গুঁড়িতে। ঢেঁকিতে পাড় দেওয়ার কাজ খুবই শ্রমসাপেক্ষ। কাজটিতে মহিলাগণ একে অপরের কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করে থাকেন। কিন্তু কোনো কোনো সময় একজন  মহিলা সম্পূর্ণ কাজটি একাই করে থাকেন। এ কাজে তিনি একটি লম্বা হাতলের মাথায় নারিকেলের মালা (খোল) বেঁধে তৈরি করা চালুনির সাহায্যে খোঁড়লে শস্যদানা ভরা ও বের করার কাজ করেন। পরিশ্রম লাঘব করার জন্য এ কাজে নিয়োজিত মহিলাগণ কোনো কোনো সময় গান গেয়ে থাকেন।

বাংলাদেশে ধান ভানার মহিলাকেন্দ্রিক কুটির শিল্প ক্রমে ক্রমে রাইস মিল বা চাল কলের দ্বারা প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। চালকলের মালিকগণ কায়িক শ্রমসাধ্য কাজগুলি মহিলাদের দিয়ে করিয়ে থাকে। কিন্তু পর্দাপ্রথা বহু বাঙালি মুসলমান মহিলাকে এ কাজ গ্রহণ করা থেকে নিবৃত্ত রেখেছে।  [কে.এম.এ আজিজ]